আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশব্যাপী গুমের ঘটনা বৃদ্ধির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। সম্প্রতি নিক্কেই এশিয়া প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, গত ১৪ বছরে প্রায় ৬০০ জন ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই বর্তমান সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মী ছিলেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রায় এক দশক আগে নির্বাচনের প্রাক্কালে ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন সাজেদুল। এরপর থেকে তার আর দেখা পাননি বোন সানজিদা ইসলাম। সাজেদুল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক অপহৃতদের মধ্যে একজন বলে অভিযোগ করেছেন তার স্বজনরা।
গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে গত ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস পালন করা হয়েছে বাংলাদেশে। এই দিন অধিকার নিয়ে কাজ করা মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানুয়ারিতে দেশব্যাপী নির্বাচনের আগে নিখোঁজের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ২০২১ সালে এর কিছু কর্মকর্তার ওপরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
ভাইয়ের গুমের ঘটনা উদঘাটনের দাবিতে ‘মায়ের ডাক’ আন্দোলন শুরু করা সানজিদা বলেন, ‘আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে আমার ভাইকে খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়েছি কিন্তু আমরা অপরাধীদের জবাবদিহি করার জন্য স্থানীয় এবং বৈশ্বিক উভয়ক্ষেত্রেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। র্যাবের বিরুদ্ধে যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তা অবশ্যই আশীর্বাদ হিসেবে এসেছে। এটির জন্য এ জঘন্য অপরাধ কিছুটা হলেও কমেছে।’
বিশ্বের অনেক দেশেই মানুষ নিখোঁজ বা গুম হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় কয়েক হাজার মানুষ গুমের ঘটনা রয়েছে। সংঘর্ষে জর্জরিত সিরিয়া, জিম্বাবুয়ে এবং আর্জেন্টিনায়ও গুমের ঘটনা ঘটছে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকেন তারা সাধারণত শারীরিক এবং মানসিক ক্ষত নিয়ে টিকে থাকেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবার হারায় তাদের প্রধান উপার্জনকারীকে।
গত বছর বাংলাদেশ সফরের সময়, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট আনুষ্ঠানিকভাবে গুমের ঘটনা তদন্ত করার জন্য বাংলাদেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, গত ১৪ বছরে প্রায় ৬০০ জন নিখোঁজ বা গুম হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই সরকারের বিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্য অনুসারে গুম হওয়ার পর অনেকেরই তথ্য পাওয়া যায় না। কিন্তু ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০০ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে সংস্থাটি জানায়।
এইচআরডব্লিউর এশিয়া বিভাগের উপপরিচালক নিক্কেয় এশিয়াকে জানিয়েছেন, দেড় বছর আগে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগের সংখ্যা কমে এসেছে। এটি ইতিবাচক অগ্রগতি বটে। তবে যারা আগে গুম হয়েছেন এবং এখনো হদিস মেলেনি তাদের বিষয়ে তদন্তে অগ্রগতি নেই বললেই চলে। হংকংভিত্তিক এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের (এএইচআরসি) লিয়াজোঁ অফিসার মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেছেন, ‘নিষেধাজ্ঞাগুলো শুধু স্বল্প থেকে মধ্য মেয়াদে কার্যকর থাকে। এক্ষেত্রে যা করতে হবে তা হলো এ ধরনের কর্মকাণ্ডের পেছনের মূল হোতাদের বিচারের আওতায় আনা। এটাই হবে চূড়ান্ত প্রতিরোধ।’
বাংলাদেশি সংস্থা অধিকারের বরাত দিয়ে নিক্কেয় জানায়, নিখোঁজ বা গুম হওয়া ব্যক্তিদের কেউ কেউ কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন এবং হঠাৎ করে তাদের পাওয়া যায়। কিন্তু যখন নিখোঁজদের সন্ধান পাওয়া যায় তখন মুক্তি না দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমসহ নানা অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে নিখোঁজের ঘটনায় কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গুমের ঘটনায় রাষ্ট্রের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, গুমের সঙ্গে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্পৃক্ততার কোনো প্রশ্নই আসে না। যারা নিখোঁজ তারা বেশিরভাগই নিজেরাই লুকিয়ে থাকে। বরং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরলস প্রচেষ্টার কারণে এনফোর্সমেন্টের উন্নতি হয়েছে।’
কানাডাভিত্তিক বালসিলি স্কুল অ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের গ্লোবাল গভর্ন্যান্স ফেলো সাদ হাম্মাদি বলেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের কাছাকাছি সময়ে বেআইনিভাবে আটক এবং নির্বিচারে গ্রেপ্তারের মতো দমনমূলক পদক্ষেপের ইতিহাস রয়েছে।’
সিভিকসের এশিয়া প্যাসিফিক গবেষক জোসেফ বেনেডিক্ট বলছেনে, ‘বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ নির্বাচনের আগে নিখোঁজের ঘটনা বৃদ্ধির একটি ইঙ্গিত দিয়েছে। এতে ‘বিরোধীরাই সম্ভবত প্রধান লক্ষ্য হবে। সরকারের সমালোচকরাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’
নির্বাচন বাংলাদেশ গুম নিক্কেই এশিয়া প্রতিবেদন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
হেফাজতে ইসলাম মাওলানা মামুনুল হক
মন্তব্য করুন
উন্মুক্ত কারাগার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে এবার নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দাখিল করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই ও ভাগনে। ছোট ভাই শাহদাত হোসেন প্রার্থী হয়েছেন চেয়ারম্যান পদে। আর ভাগনে মাহবুবুর রশীদ মঞ্জু প্রার্থী হয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান পদে।