সুন্দরপুরের
দরিদ্র ব্যবসায়ী হাসমত মুন্সি। গ্রামের হাটে হাটে ঘুরে ফেরি করে চুড়ি, ফিতা বিক্রির
অল্প টাকায় কোনোরকমে চলে তার সংসার। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে হাসমত মুন্সি এক রাতে
যখন নিজের বিছানায় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখন হাসমত স্বপ্নে দেখলেন তিনি এক আশ্চর্য প্রদীপ
পেলেন। যে প্রদীপ ঘষলেই বের হয়ে আসে এক দৈত্য এবং একটি ইচ্ছা পূরণ করে দেয়। হাসমত মুন্সি
দৈত্যকে বললেন, “এমন কিছু একটা করো যাতে আমাকে কষ্ট করতে হবে না কিন্তু ব্যবসা চলবে
ঠিকঠাক।” দৈত্য চিন্তায় পড়ে যায়। অনেক ভেবে দৈত্য হাসমতের কাছে জানতে চায়, “তোর গ্রামের
বাজারে এমন কোনো জিনিস রয়েছে যে জিনিসের দাম বেশি কিন্তু সাপ্লাই আটক সিন্ডিকেটের হাতে।”
হাসমত মুন্সি ভেবে উত্তর দেয়,
“পেঁয়াজের দাম বেশি আর মূল্য কারসাজির পেছনে রয়েছে সিন্ডিকেটের হাত।" প্রদীপের
দৈত্য কোনো রকম চিন্তা না করেই হাসমত মুন্সিকে উত্তর দিলেন, “তুই পাশের কোনো গ্রাম
থেকে কম দামে সিন্ডিকেট ধরে তোর গ্রামে পেঁয়াজ আমদানি কর। বেশি দামে বিক্রি করলেই লাভ
আর লাভ। আর তুই নিজেই তখন হবি সিন্ডিকেট।” প্রদীপ আর দৈত্য নিয়ে অদ্ভুত স্বপ্নে ঘুম
ভাঙ্গে হাসমত মুন্সির। কিন্তু এতোসব জটিল ক্যালকুলেশন মাথায় ঢোকে না হাসমতের। আর স্বপ্নে
পাওয়া এই অদ্ভুত উপায় তার মনেও থাকে না ঘুম ভাঙ্গার পরে।
হাসমত
মুন্সির এসব জটিল হিসাব নিকাশের বিষয়বস্তু মাথায় না ঢুকলেও দেশের অনেক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের
কারসাজির কাছেই জিম্মি গোটা বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থা। আর এসকল সিন্ডিকেটের সকল হাঁড়ির
খবর জানেন আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী মাননীয় টিপু মুনশি। অবশ্য কথার ভোল পাল্টানো মাননীয়
আবার প্রধানমন্ত্রীর ভয়ে বলে ফেলেছেন, “দেশে কোনো সিন্ডিকেট নেই”।
উপরের
কাল্পনিক গল্পটির মতো আমাদের মাননীয়ের কাছে আশ্চর্য এক ম্যাজিক আছে, যা দিয়ে তিনি করে
ফেলতে চান সব সমস্যার সমাধান। তার সেই আশ্চর্য ক্ষমতার নাম কোনো দ্রব্যের মূল্য বাড়লেই
জনগণের পকেট কেটে টাকা নিয়ে নেওয়ার কিছুদিনের মাথায় প্রথমে আমদানি হুমকি দেয়া এবং বাজার
সিন্ডিকেটের ফলে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান হিসেবে বিদেশ থেকে সেই দ্রব্যের আমদানি করা।
তারই ধারাবাহিকতায় ডিমের বাজার ঠাণ্ডা করতে মাননীয়ের মাথায় আবারো তার সেই বিখ্যাত পুরনো
সমাধান। ঘোষণা দিলেন ভারত থেকে আসবে ৪ কোটি ডিম।
এটি তিনি সকল সমস্যার সমাধান হিসেবেই দেখেন হয়তো। কিন্তু আসলে যে দেশে একবার
একটি পণ্যের দাম বাড়লে সে দাম আর কমে না, সে দেশে আমদানিনির্ভর সমাধান কতোটা দেশ ও
দেশের মানুষের জন্য উপকারী সেটি ভাববার বিষয়।
খোদ
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, আন্তর্জাতিক বাজারে গত এক মাসে পেঁয়াজ, আদা, কাঁচা
মরিচ ও ডিমের দাম কমেছে। এই সময়ে পেঁয়াজের দাম প্রতি মেট্রিক টনে কমেছে ১২ শতাংশ, আদার
দাম কমেছে ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ, কাঁচা মরিচের দাম ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং ডিমের দাম প্রতিটিতে
৪ দশমিক ৯০ শতাংশ কমেছে। নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের মধ্যে শুধু রসুনের দাম অপরিবর্তিত
রয়েছে।
অন্যদিকে
গত এক মাসে দেশের বাজারে প্রতি কেজিতে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩৬ দশমিক
৮৪ শতাংশ, আমদানি করা রসুনের দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ, আমদানি করা আদার দাম বেড়েছে
১৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। যে দেশে বাজার ঠাণ্ডা করার জন্য মাননীয়ের একমাত্র অস্ত্র আমদানী
করা পণ্যের দামও বেড়ে যায়, সে দেশে তিনি ও তার ম্যাজিক যে কাজ করে না সেটি তিনি কবে
বুঝবেন সেটি জন্য জনগণের উচিত তার জন্য সৃষ্টিকর্তার দরবারে দুই হাত তুলে প্রার্থনা
করা।
আসুন,
এবার একটু ডিমের হিসাব মেলানো যাক। বিশ্ববাজারে ডিমের দাম গত ১১ সেপ্টেম্বর ছিলো ৫
টাকা ৬১ পয়সা। প্রতিবেশি দেশ ভারতে প্রতিটি লাল ডিম বাংলাদেশি টাকায় ৬ দশমিক ৫০ টাকা
এবং প্রতিটি সাদা ডিম পাঁচ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চলুন, আরেকটা দিকে দৃষ্টি ফেরানো যাক।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উপস্থাপনায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ
অধিদপ্তরের হিসাব উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, দেশে চলতি বছর ডিমের চাহিদাতিরিক্ত সরবরাহের পরিমাণ ১৩৪
দশমিক ৫৮ কোটি পিস। যদিওবা মাননীয়ের হিসাবে হিসাব মিলে না, বাকী ডিম গেলো কই! যদিওবা
আজকাল ডিবি কার্যালয়ে ডিমের ব্যবহার নেই বললেই চলে। মাছ, মাংস, ডাল দিয়েই আপ্যায়ন করা
হয় সরকারি দল, বিরোধী দলসহ সেলিব্রেটি, নন-সেলিব্রেটি সবাইকে। কিন্তু যদি দেশে চাহিদার
বিপরীতে ডিমের যোগান এতো বেশি হয়েই থাকে, তাহলে মাননীয় কার স্বার্থে আর কী উদ্দেশ্যে
দেশে ডিম আমদানি করে ডিমের বাজার ঠাণ্ডা করার মতো সিদ্ধান্তে গেলেন? পুর্বের মতো আমদানি
করা ডিমের দামও যে পাশের দেশে বেড়ে গেলে তিনি একই দামে আমদানি করতে পারবেন এবং দেশের
ভোক্তাদের কাছে নিয়ে যেতে পারবেন সে গ্যারান্টি তিনি পেয়েছেন কিনা সেটিও ভাববার বিষয়।
যদিওবা
মাননীয়ের এ ধরনের ম্যাজিক্যাল সিদ্ধান্ত নতুন নয়। বাজার নিয়ন্ত্রণের গোড়ার দায়িত্বে
থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় উৎপাদন, চাহিদা আর যোগানের হিসাব না মেলাতে পারলেও আমদানি
হুঙ্কারে বরাবরই সিদ্ধহস্ত। পেঁয়াজের দাম বাড়লে বাজার সিন্ডিকেট না সামলিয়ে ঘোষণা আসে
আমদানি করা হবে। চালের দাম বাড়লে চাল, রসুন, আদা, মৌসুমি ফলসহ সকল পণ্যের দাম কমানোর
একমাত্র ম্যাজিক মাননীয়ের আমদানি সিদ্ধান্ত। ভাগ্যিস ডাব আমদানি করার ঘোষণা শুনতে হয়নি
দেশবাসীকে। এজন্য মাননীয়ের জন্য রইলো করতালি।
ডিমের
দাম স্থিতিশীল রাখতে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের
সূত্র অনুসারে, চারটি প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি করে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া
হয়েছে। যে চারটি কোম্পানিকে ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তারা হলো মীম এন্টারপ্রাইজ,
প্রাইম এনার্জি ইমপোর্টার্স অ্যান্ড সাপ্লায়ার্স, টাইগার ট্রেডিং ও অর্ণব ট্রেডিং লিমিটেড।
আমদানির অনুমতির পাশাপাশি খুচরা দোকানে একটি ডিমের সর্বোচ্চ দর ১২ টাকা বেঁধে দেওয়া
হয়। কিন্তু বাজার মনিটরিং-এর দায়িত্বে থাকা ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের মনিটরিং টিম বাজার
মনিটরিং শেষ করে ফিরে গেলেই দেখা যাচ্ছে বাজারে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট আবার বাড়তি দামেই
বিক্রি করছে সকল পণ্য। আলু, পেঁয়াজের দাম বেধে দেবার পরেও যখন একই অবস্থা দেখা গিয়েছে
বাজারে, সেখানে ডিমের বাজারে মাননীয়ের আমদানি ম্যাজিক কতোটা কাজ করবে সেটি দেখবার বিষয়।
মন
খারাপের ভিড়ে আসুন, পুরোনো একটি সফলতার গল্প মনে করিয়ে দেই। করোনা চলাকালীন সময়ে প্রান্তিক
খামারিরা যখন দুধ বিক্রি করতে না পেরে রাস্তায় ফেলে দিচ্ছিলেন, যখন ডিম ও পোল্ট্রি
খামারের মালিকেরা অসহায় অবস্থায় ছিলেন তখন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় নিয়েছিলো
যুগান্তকারী একটি উদ্যোগ। প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের সার্বিক ব্যবস্থাপনায়
ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারিদের কাছ থেকে ডিম, দুধ ও মুরগীর মাংস কিনে ভ্রাম্যমাণ ভ্যানের
মাধ্যমে এবং অনলাইন ব্যবস্থাপনায় বাজারের বাড়তি দামের চেয়ে কম দামে ভোক্তার ঘরে ঘরে
পৌঁছে গিয়েছিলো দুধ, ডিম আর মাংস। কোভিড চলাকালীন সময়ে মানুষের পুষ্টির চাহিদাপূরণের
পাশাপাশি এমন যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলো প্রাণিসম্পদ খাত। হাসি ফুটেছিলো
এ দেশের প্রান্তিক খামারিদের মুখে।
রমজানের
সময়টিতে অসাধু সিন্ডিকেট যখন গরুর মাংস, খাসির মাংসসহ ডিম ও দুধের দাম বাড়িয়ে দেয়,
তখন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর দূরদর্শিতায় ক্ষুদ্র খামারিদের কাছ থেকে ন্যায্য দামে
মাংস, দুধ ও ডিম কিনে ভ্যাম্যমান ভ্যানের মাধ্যমে সেগুলো বাজারের চেয়ে অনেক কম দানে
বিক্রির ফলে তৈরি করা সম্ভব হয়েছিলো প্যারালাল একটি বাজারব্যবস্থার। যার ফলে সিন্ডিকেটের
হাতে জিম্মি হয়ে থাকা জনগণ কিছুটা স্বস্তির সুবাতাস পেয়েছিলো।
এখনো দেশের অনেক ক্ষুদ্র খামারি আছেন যারা কিছু ডিম বিক্রির টাকায় চালান তাদের সংসার। প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা যে বাজারে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন এমনটিও নয়। খোঁজ নিয়ে দেখা যায় সবকিছুর মূল্য বেড়ে যাওয়ার ফলে খামারি পর্যায়ে এখনো প্রতি ডিম ৭ থেকে ১০ টাকার মধ্যেই বিক্রি করেন তারা। সেই ৮ টাকার ডিম ভোক্তা পর্যায়ে এসে ডজনপ্রতি বিক্রি হয় ১৫০ টাকায়। মাঝের লাভের গুড় খায় বাণিজ্যমন্ত্রীর সেই পরিচিত সিন্ডিকেট, যাদের সম্পর্কে সংসদেই তিনবারের বেশি তিনি নিজ মুখে বলেছেন তিনি জানেন কারা সিন্ডিকেট চালান। তিনি সিন্ডিকেটের ভয়ে ভীত করে তোলেন দেশের মানুষকে।
ডিমের চাহিদার থেকে যোগান বেশি থাকলে অবশ্যই এটি সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং এটির দমনে তিনি চাইলেই হতে পারতেন সাহসী। দেখাতে পারতেন ম্যাজিক। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মতো নিতে পারতেন যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। প্রান্তিক খামারিদের কাছ থেকে সরাসরি ডিম কিনে টিসিবির পণ্য তালিকায় যুক্ত করতে পারতেন ডিম। কিন্তু তিনি হয়তো তার প্রদীপের সেই দৈত্যের বলে দেওয়া আমদানি ম্যাজিকের বাইরে যাবেন না। অথবা তিনি চাইছেন সিন্ডিকেটের জয় হোক, জনগণের টাকায় ফুলে ফেঁপে উঠুক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। কারণ প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাজ উৎপাদন বাড়ানো এবং উৎপাদন ঠিক রাখা। সেই উৎপাদন যখন ঠিকঠাক, যখন এদেশের প্রাণিসম্পদ খাত স্বয়ংসম্পূর্ণ, ঠিক সেই সময়ে একজন ব্যর্থ মানহীন মাননীয়ের আমদানি হুঙ্কার আর আমদানির সফল বাস্তবায়ন কীসের ইংগিত দেয় সেটি দেশবাসীর কাছে পরিষ্কার হওয়া উচিত।
ক্যান্সার
যখন সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে তখন কেমোথেরাপির মাধ্যমে সমূলে ধ্বংস করতে হয় ক্যান্সারের
জীবাণু। আগাছা জন্মালে উপর থেকে ছেটে না ফেলে সমূলে উপড়ে ফেলতে হয় সেই আগাছা। কিন্তু
আমাদের মাননীয় আগাছা কাটেন, ক্যান্সারে মলম লাগান। সিন্ডিকেট না উপড়ে দেশের প্রান্তির
খামারিদের ধ্বংস করতে ডিমের দাম কমাতে চালান আমদানি সন্ত্রাস। দেশবাসীর এখন একটাই প্রার্থনা,
মাননীয়ের কোনো এক মাঝরাতের স্বপ্নে যেন কোনো দেশপ্রেমিক দৈত্য তার স্বপ্নে ধরা দিয়ে
এমন এক প্রদীপ তাকে দিয়ে যান, যে প্রদীপ ঘষলে বের হবে সিন্ডিকেট ভাঙবার উপায়, যে দৈত্য
তাকে বলে দিবেন শুধুমাত্র আমদানিতে নয়, চিন্তা, বুদ্ধি আর বাজার মাফিয়াদের নিয়ন্ত্রণে
এনেই চালাতে হয় দেশ, নিয়ন্ত্রণ করতে হয় বাজার, হাসি ফুটাতে হয় মানুষের মুখে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাপদাহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।
প্রথম দুই দফা ভোটের যে হার, তাতে বিজেপির মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিজেপির নেতারা ভোটে যে ভূমিধস বিজয় আশা করছিলেন সেটি হবে না। ভারতের কোন কোন গণমাধ্যমগুলো ভোটের ফলাফলে নাটকীয় ঘটনা ঘটারও ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে ২০০৪ সালের নির্বাচনে যেভাবে কংগ্রেস অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে বিজেপিকে ধরাশায়ী করেছিল সেরকম কোন ঘটনা ঘটতেও পারে বলে মনে আশঙ্কা করছেন অনেকে। অবশ্য এখনও আরও পাঁচ দফা ভোট বাকি আছে এবং বিজেপি আশা করছে যে, পরবর্তী ধাপগুলোতে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে এবং বিজেপি তাদের জয়ের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখবে। নরেন্দ্র মোদি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে দেওয়ার জন্য বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন।
ভারতের নির্বাচনের ফলাফল কী হবে তা বোঝা যাবে আগামী ৪ জুন। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে ভোটের হাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে এটা স্পষ্ট যে, ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোটের যে নিরঙ্কুশ বিজয়ের ধারণা করা হয়েছিল, সেটি বাস্তবতা নাও পেতে পারে। আর এ কারণেই মোদী যদি শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন, তাহলে সেটি হবে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বড় ব্যতিক্রমী ঘটনা এবং এটি হবে ভারতের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চমক।
এখন যখন ভারতের নির্বাচনে একটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বা অনিশ্চয়তার ফলাফলের শঙ্কা জেগেছে তখন প্রশ্ন উঠছে যে, বিজেপি যদি এই নির্বাচনে পরাজিত হয় তাহলে বাংলাদেশে কী হবে? গত দুটি নির্বাচনে ভারতের বিজেপি সরকার বাংলাদেশকে নিরঙ্কুশভাবে সমর্থন দিয়েছে। ২০১৮ এবং ২০২৪ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে বিজেপি সরকার।
বিশেষ করে ২০২৪ এর নির্বাচনে ভারতীয় সরকারের পরিপূর্ণ সমর্থন ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করত এবং এই নির্বাচনকে অস্বীকৃতি জানাত বলেও অনেকে মনে করেন। মার্কিন মনোভাব পাল্টানোর ক্ষেত্রে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আর নির্বাচনের পর বিএনপি থেকে শুরু করে জাতীয় পার্টি প্রত্যেকেই বলছে যে, ভারত বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখেছে। যদিও এরকম অভিযোগকে আওয়ামী লীগ অস্বীকার করে এবং আওয়ামী লীগ মনে করে যে, জনগণের ভোটে তারা নির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি আওয়ামী লীগ বা বিজেপি কেউই অস্বীকার করে না।
এখন প্রশ্ন হল, যদি বিজেপি পরাজিত হয়, ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশের সমীকরণ কী হবে? কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বর্তমান সরকারের জন্য সমীকরণের কোন পরিবর্তন হবে না। কারণ ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গেও আওয়ামী লীগ সরকারের একটি সুসম্পর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যে ইন্ডিয়া জোটের প্রধান দল কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছে।
অনেকে মনে করেন যে, এখন ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী মনোভাবের কারণে সীমান্তে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য রাখা হচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশের মধ্যে একটা ভারতবিরোধী মনোভাব তৈরি হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যদি নরেন্দ্র মোদি তাহলে এই অবস্থানের পরিবর্তন হবে। দুই দেশের সম্পর্ক আরও বিকশিত হবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভারত লোকসভা নির্বাচন মল্লিকার্জুন খাড়গে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।