কয়েক মাস পরেই বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসলেও নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে হবে, তা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী
লীগ ও বিরোধী দলগুলোর মাঝে মতবিরোধ লেগেই আছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক
সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন অবাধ
ও সুষ্ঠু হবে না, এমন ধারণা থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করে আসছে বিএনপি।
যে কোনো দেশের ক্ষেত্রে নির্বাচন সে দেশের
অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে বেশকিছু বিদেশি দেশের আগ্রহ
এখন তুঙ্গে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
এবং আওয়ামী লীগ সরকার নিয়ে তাদের ভিন্ন অবস্থানের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বাংলাদেশের
অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে দুই দেশেরই ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।
২০১৪ সালে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন
আয়োজনে জোর প্রচার চালায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন এ প্রচার অভিযানে ভারতের সমর্থন আদায়ে
শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে সমর্থনে ভারতীয় অবস্থানই মেনে নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
২০১৮ সালের নির্বাচনের সময়ও ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র
দুই দেশই আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার বিষয়ে দৃশ্যত সম্মত হয়। বাংলাদেশের
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তখন সন্ত্রাস দমন ও উন্নয়নের যে ব্যাখ্যা দেন, তা ওয়াশিংটনের
সন্ত্রাসবাদবিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে বেশ ভালোভাবে মিলে যায়।
তবে এবারের হিসাব-নিকাশ ভিন্ন। চীন ও রাশিয়াকে
মোকাবিলা করার জন্য বর্তমানে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট
জো বাইডেন প্রশাসন। আর এটিই বাংলাদেশের জন্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের
অভিযোগে র্যাব ও এর ছয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় ওয়াশিংটন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে
অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজনে বাধা দেওয়ার সঙ্গে জড়িত এমন বাংলাদেশিদের
ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়ে রেখেছে বাইডেন প্রশাসন। এটাকে বাংলাদেশের বর্তমান
সরকারের পরিকল্পনার সরাসরি চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
তবে প্রতিবেশী ভারত আওয়ামী লীগকে সমর্থন করছে
বলেই মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গিবাদ দমন এবং বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহীদের দমনে আওয়ামী লীগ সরকারকেই শক্তিশালী মিত্র
হিসেবে দেখে নয়াদিল্লি। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতকে
চারটি ট্রানজিট রুটের অনুমোদন দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। বাংলাদেশ সরকারের এমন পদক্ষেপে
স্থলবেষ্টিত ভারতীয় এই উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নই বিকশিত হয়নি, এ
অঞ্চল নিয়ে ভারতের নীতিও জোরদার হয়েছে। ফলে বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে
ওয়াশিংটনের অব্যাহত চাপ ভালোভাবে নেয়নি নয়াদিল্লি।
তবে এবারের নয়াদিল্লির জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন
থেকে এটা বেশ স্পষ্ট যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে খুশি করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
এমনকি দিল্লি ঘোষণায় ভারতকে খুশি করতেই রাশিয়ার নাম উল্লেখ করা নিয়ে জোরাজুরি করেনি
ওয়াশিংটন।
আগামী দিনে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কোন
পথে যাবে, এবারের নয়াদিল্লির জি-২০ সম্মেলনই সেটা অনেকটা আঁচ করা গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের
মতে, ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর ভারতের ক্ষমতায় থাকবে মোদি। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র
তার ওপর নির্ভর করছে। কারণ, চীনকে মোকাবিলায় মোদিকে খুশি রাখতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের।
তবে কি বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে
ভারতের অবস্থানই মেনে নেবে বাইডেন প্রশাসন? জি-২০ সম্মেলনে দেখা যায় বাইডেন, মোদি ও
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের মতো বিশ্বনেতারা শেখ হাসিনার সঙ্গে হাসিমুখে সেলফি
তুলেছেন। তার পাশে দাঁড়িয়ে ফ্রেমবদ্ধ হয়েছেন।
এদিকে ৭৮তম জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে
শেখ হাসিনা এখন নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। বাইডেনের আয়োজনে সেখানে এক নৈশভোজেও যোগ
দেওয়ার কথা রয়েছে তার।
শেখ হাসিনা জো বাইডেন মোদী ভারত যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ইফতেখার রাফসান
মন্তব্য করুন
পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার মিতু হত্যা
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
সরকারি সফর যুক্তরাষ্ট্র সেনাপ্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন