পটুয়াখালী জেলার সদর উপজেলার লাউকাঠি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যানে মোঃ ইলিয়াস বাচ্চুর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির নানান অভিযোগ রয়েছে । সাধারণ মানুষ ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে এসে প্রায় শিকার হচ্ছেন বিরম্বনার। তাকে বেশির ভাগ সময় খুঁজে পাওয়া যায় না নিজ ইউনিয়ন পরিষদে। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান লাউকাঠি ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ইলিয়াস বাচ্চুর। লাউকাঠী ইউনিয়ন পরিষদের ৮ জন মেম্বার ইউপি চেয়ারম্যান ইলিয়াস বাচ্চুর বিরুদ্ধে জেলা প্রসাশক বরাবর দিয়েছেন অনাস্থা। তারপরেও একটুও কমেনি তার দুর্নীতির দাপট। নিয়ম বহির্ভূতভাবে মুজিব বর্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে যে ঘর প্রদান করেছে সরকার থেকে সেই ঘরের সাথে সরকারি অর্থে আসা টিউবওয়েল দিতে সাধারণ মানুষদের থেকে নিচ্ছেন মোটা অংকের অর্থ। কেউ যদি এই অর্থ দিতে অক্ষম হয় তবে তাকে দেয়া হচ্ছে না সরকারের দেয়া এই সহায়তা। এছাড়াও বিভিন্ন কাজ দেখিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে সরকার থেকে বরাদ্দকৃত অর্থ হাতিয়ে নেয়া ও সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন সময় মারধর করা সহ ব্যাপক অনিয়মের পরেও তার বিরুদ্ধে নেয়া হচ্ছে না কোনো পদক্ষেপ।
লাউকাঠি ইউনিয়ন ৪নং ওয়ার্ডের আকন বাড়ীর মৃত মানিক আকনের স্ত্রী
নাসিমা বলেন, "আমার স্বামীর কাছে চেয়ারম্যানের ভাই(সোহেল মোল্লা) বলছে যে, ৮
হাজার টাকা নিয়া আয় তোদের নামে কল আসছে। আমার স্বামী আমার কাছে বলে আমি টাকা
কোথায় পাবো? পরে আমি আমার ছেলের বৌর কাছে বুঝিয়ে বললে সে তার কানের সোনার জিনিস
দিয়ে দেয়। পরে আমার স্বামী সেই টাকা নিয়ে চ্যেয়ারম্যানের কাছে দিয়ে আসে। এই
ঘটনার পরের দিনই আমার স্বামী মারা যায়। আমি কয়েকদিন পর চ্যেয়ারম্যানের কাছে ফোন
করে টিউবওয়েলের কথা বললে সে বলে, তোদের ওখানে অনেক কাদা এখন মালামাল নিয়ে যাওয়া
যাবে না। তোরা ওইখানে যেই কয়জন ঘর পাইছো সবার কল একসাথে যাবে পরে"।
লাউকাঠি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ভিক্ষুক ভুক্তভোগী হানুফা বলেন,
"আমাকে চ্যেয়ারম্যান টিউবওয়েল দেওয়ার জন্য ১০ হাজার টাকা দিতে বলছে। আমিও
সেই টাকা দিয়েছি। কিন্তু আমি এখন পর্যন্ত টিউবওয়েল পাই নাই।"
লাউকাঠি ইউপি চ্যেয়ারম্যান ইলিয়াস বাচ্চুর হাতে নির্মমভাবে
নির্যাতনের শিকার হয়েছেন গ্রাম পুলিশ সহ একাধিক মানুষ। তেমনি একজন ভুক্তভোগী মোঃ
জাহিদ হোসেন। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের সরকারি প্রজেক্ট এন এস পিতে কর্মরত ছিলেন।
মোঃ জাহিদ জানান, তাকে একদিন সকালে চেয়ারম্যান তাকে ফোন করে কাজের
কাগজপত্র নিয়ে তার বাসায় যেতে বলে। একটি গ্রাম আদালতের মামলা নিম্ন আদালতে
পাঠানোর জন্য বাদিকে আবেদন করতে বলেন চ্যেয়ারমান। সেই মামলার বিষয় একটি আবেদন
লিখে দেয় জাহিদ। আর এতেই খেপে যান ইলিয়াস বাচ্চু। তিনি জাহিদকে মা বোন নিয়ে গালাগাল
দিতে থাকেন ও মারধোর শুরু করেন। এক সময় জাহিদ কোন রকম সেই জায়গা থেকে গিয়ে
চিকিৎসা নেন ও পরবর্তীতে চ্যেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলাটি
আদালতে চলমান রয়েছে। মামলা নাম্বার - চেয়ারম্যানের অত্যাচারের শিকার রুহুল আমিন
বলেন , "আমি পরিষদের স্টাফ ছিলাম। বেতনের টাকা চাইতে গেলেই চ্যেয়ারম্যান
লাঠি দিয়ে মারধোর করতো। তার যাকে পছন্দ না হতো তাকেই সে মারতো।
এদিকে ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান খোকন বলেন,
"আমি এই পরিষদের মেম্বার। আমার একটি ১ম শ্রেনীর ঠিকাদারি লাইসেন্স আছে। সেটি
নবায়নের জন্য আমার থেকে আমার পরিষদে নেয়া হয়েছে ৫২০০ টাকা। আবার এই পরিষদে
অনেকের থেকে নেয়া হচ্ছে ৪৫০ টাকা। তাহলে কি আমাকে মানুষ ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি
করেছে এটি আমার ভুল?"
৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কাজল কর্মকার বলেন, "জনগণ আমাকে ভোট
দিয়ে জনগণকে সেবা করার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু আমাদের চ্যেয়ারম্যান আমাদের কোন
কথা শোনে না। ওনার কথা যে শোনে তার কাজ সে করে। কিন্তু আমরা ওনার অবৈধ কার্যকলাপে
একমত হইনা বিধায় কোন পরিচয় পত্রতে সই করে না। আমরা আমরা একটা কাগজ পাঠালে তাতে
সই করে না। এডিপির টাকা উঠিয়ে নিয়া যায়। আয় ব্যায়ের কোন হিসাব দেয় না।
আমাদের তিনি পরিচয় পত্রটা পর্যন্ত দেয় না। আমরা জনগনকে সেবা দিতে পারতেছি না তার
এই দুর্নীতির কারনে।
এসব বিষয়ে জানতে চ্যেয়ারম্যান মোঃ ইলিয়াস বাচ্চুর কাছে জানতে
চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে সেগুলো অসত্য। একজন
চ্যেয়ারম্যান কখনো কাউকে মারতে পারে না। চ্যেয়ারম্যান পারে বিচার করতে।
মেম্বাররা অনাস্থা প্রস্তাব প্রত্যাহার করার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া
জাহিদের দায়ের করা মামলা তারা উঠিয়ে নিবে এমন স্বিদ্ধান্ত নিয়েছে। টিউবওয়েল
দিতে টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চ্যেয়ারম্যান বলেন, এগুলো সম্পূর্ণ অসত্য।
আমি ব্যাবসা বাণিজ্য করি। আমি এসব জিনিস পছন্দ করি না।
পটুয়াখালী সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, "ইতোমধ্যে আমাদের লাউকাঠির চ্যেয়ারম্যনের বিরুদ্ধে সেখানকার ইউপি সদস্যরা অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। এ বিষয়ে তদন্তের কাজ চলমান আছে। পাশাপাশি ফৌজদারি বিষয় আছে যেটি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান আছে। আদালতে মামলা চলমান অবস্থায় মন্তব্য করা সমিচিন হবে না। তবে সেখানে জদি সে দোষী সাব্যস্ত হয় ফৌজদারি অপরাধে তাহলে পরবর্তীতে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আরো যে অভিযোগ আছে সে বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি। ইউনিয়ন পরিষদ একটি স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠান। এর নিজস্ব আয় আছে এবং সে আয় থেকে ব্যায় করতে হবে। এর নির্দিষ্ট কিছু বিধিবিধান আছে। তার বাইরে গিয়ে সে কাজ করতে পারবে না। এগুলো আমরা তদন্ত করছি। সে যদি দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পটুয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান দূর্নীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
হেফাজতে ইসলাম মাওলানা মামুনুল হক
মন্তব্য করুন
উন্মুক্ত কারাগার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে এবার নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দাখিল করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই ও ভাগনে। ছোট ভাই শাহদাত হোসেন প্রার্থী হয়েছেন চেয়ারম্যান পদে। আর ভাগনে মাহবুবুর রশীদ মঞ্জু প্রার্থী হয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান পদে।