একসময় যুক্তরাজ্যে
যাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকলেও সিলেটের লোকজন এখন ঝুঁকেছেন কানাডার দিকে। ভুয়া আমন্ত্রণপত্রে
আবেদন করে স্বপ্নের দেশ কানাডার ভিসা পেয়েছিলেন সিলেটের ৪২ জন। সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক
বিমানবন্দর থেকে তারা ইমিগ্রেশনও সম্পন্ন করলেও পরে কানেকটিং ফ্লাইটে ঢাকায় যাওয়ার
পর কানাডাগামী বাংলাদেশ বিমানে ওঠার সময় ধরা পড়ে জালিয়াতির ঘটনা। ফলে বিমানবন্দর থেকে
ফিরতে হয় ৪২ জনকে। ঘটনাটি শুক্রবারের (১০ নভেম্বর) হলেও রোববার (১২ নভেম্বর) বিষয়টি
জানাজানি হয়।
বিমানের দাবি,
নিয়ম ও আইনের মধ্যে ওই যাত্রীদের যেতে বাধা দেয়া হয়েছে। যদিও যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেছেন,
তারা সঠিক কাগজপত্র দিয়ে ভিসা করিয়েছেন।
যাত্রীরা বলছেন,
রিটার্ন টিকিট কেটেছেন। অথচ বিমানের কর্মকর্তারা তাদেরকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যেতে
দেয়নি। এতে করে তারা সামাজিকভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ঠিক তেমনি রিটার্ন টিকিটের
টাকাসহ নানাভাবে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কাগজপত্র সঠিক ছিল বলেই কানাডা ভিসা দিয়েছে।
কারণ ভিসা দেয়ার আগে কানাডা সেটি যাচাই করেছে। যদি আটকাতে হয় তবে কানাডা ইমিগ্রেশন
তাদের আটকাবে।
একটি সূত্র
জানায়, কানাডার টরন্টো ও সিলেটের কতিপয় এজেন্সি মিলে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ভিসা করানোর
একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা কানাডায় অবস্থানরত বিভিন্ন ব্যক্তির
কাছ থেকে ভুয়া আমন্ত্রণপত্র তৈরি করে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ভিসা করিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে
তারা যাত্রীদের সঙ্গে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার চুক্তি করে। ভিসা হলে তারা তাদের কাছ থেকে
এই টাকা আদায় করে।
ওই সিন্ডিকেট
সদস্যরা কানাডার টরেন্টোতে একটি ‘কাল্পনিক বিয়ের’ অনুষ্ঠান দেখিয়ে আমন্ত্রণপত্র তৈরি
করে। বিয়েতে অংশ নেয়ার জন্য কাল্পনিক কনে, কনের মা, বাবা, ভাই ও চাচা শতাধিক ব্যক্তিকে
আমন্ত্রণপত্র পাঠান। সিন্ডিকেটের সদস্যরা ওই আমন্ত্রণপত্র দিয়ে তাদের চুক্তি করা প্যাসেঞ্জারের
কানাডার ভিসার জন্য আবেদন করে। কাকতালীয়ভাবে বেশিরভাগ আবেদনকারীর ভিসাও হয়ে যায়। যাদের
ভিসা হয়েছে তাদের বেশিরভাগই এর আগে দেশের বাইরে কোথাও বেড়াতে যাননি। অর্থাৎ তারা সাদাপাসপোর্টধারী
ছিলেন।
জানা গেছে,
ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা অক্টোবরের মাঝামাঝি ২৫ জনকে কানাডায় পাঠায়। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে
যান আরও ৮ জন। কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই তারা কানাডায় পৌঁছায়। কানাডায় পৌঁছেই তারা শরণার্থী
দাবি করে কানাডা সরকারের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেন।
দুই দফায় ৩৩
জন নিরাপদে কানাডায় পৌঁছার পর গত ৬ নভেম্বর ওই সিন্ডিকেট ভিসা পাওয়া এই ৪২ জনকে কানাডায়
পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে। সহজে ইমিগ্রেশন পার হতে তারা বাংলাদেশ বিমানের সিলেট-ঢাকা-টরেন্টো
ফ্লাইটের টিকেট কাটেন। যথারীতি তারা সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে
কানেকটিং ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছান।
ঢাকার হযরত
শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটি সূত্র জানায়, ১০ নভেম্বর শুক্রবার রাতে
ওই ৪২ জন ট্রানজিটে অপেক্ষা করার সময় বিমানের পাসপোর্ট চেকিং ইউনিটের সদস্যদের সন্দেহ
হয়। তারা দেখতে পান, ওই যাত্রীদের প্রায় সবার সাদা পাসপোর্টে কানাডার ভিসা লাগানো।
এতে তাদের সন্দেহ আরও বাড়ে। এসময় বিমান কর্মকর্তারা তাদের আমন্ত্রণপত্র ও হোটেল বুকিং
দেখতে চান। তখনই চমকে যান কর্মকর্তারা। তারা দেখতে পান, ওই যাত্রীদের সবাই একটি বিয়ের
অনুষ্ঠানে অংশ নিতে কানাডা যাচ্ছেন। আর হোটেল বুকিংয়ের পরিবর্তে তারা কিছু বাড়ি ভাড়ার
কাগজপত্র দেখান।
বিমান কর্মকর্তাদের
জিজ্ঞাসাবাদের মুখে কয়েকজন যাত্রী জানান, তারা যেহেতু একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন
তাই একত্রে থাকার জন্য তারা বাসা ভাড়া নিয়েছেন। আবার যাত্রীদের কেউ কেউ বিমানবন্দরে
বসেই হোটেল বুকিং করেন। কানাডায় বিয়েতে অংশ নিতে একসঙ্গে বাংলাদেশ থেকে এত লোক যাওয়ার
বিষয়টিতে খটকা লাগায় বিমান কর্মকর্তারা তাদের ভিসা যাচাইয়ের জন্য সিঙ্গাপুর ও দিল্লিতে
কানাডার ভিসা অফিসে ইমেইল পাঠান।
যাত্রীদের জানানো
হয় যে, কানাডা বর্ডার এজেন্সি নিশ্চিত করার পর তাদের বিমানে উঠানো হবে। নির্ধারিত ফ্লাইট
চলে গেলেও এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ তাদের হোটেলে রেখে পরে পাঠাবে। কিন্তু পরদিন সকাল পর্যন্ত
সিঙ্গাপুর ও দিল্লি থেকে কোনো তথ্য না পাওয়ায় বিমান কর্তৃপক্ষ পাসপোর্টে ইমিগ্রেশন
সিল কেটে দিয়ে লাগেজসহ তাদের ফিরিয়ে দেন।
বিমান সূত্রে
জানা গেছে, টরন্টো পৌঁছানোর পর যদি এই যাত্রীরা ইমিগ্রেশনে আটকে যান, তাহলে প্রতিটি
যাত্রীর জন্য বিমানকে ১৮০০ ডলার জরিমানা করা হবে। আর যেতে না পারায় প্রায় কোটি টাকা
লোকসান হয়েছে বিমানের। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়াও চলছে। এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ এর দায় যাত্রীদের
ওপর ছেড়ে দিতে চায়।
আর যাত্রীরা
বলছেন, তাদের ভিসা বৈধ, এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ তাদের যেতে দেয়নি। তাই যাত্রীদের টিকিটের
দায় এয়ারলাইন্সকেই মেটাতে হবে।
এদিকে, ৪২ যাত্রী
কীভাবে সিলেট থেকে তাদের বোর্ডিং কার্ড পেলেন তা খতিয়ে দেখতে গত ১০ নভেম্বর বিমানের
অভ্যন্তরীণ তদন্ত দল সিলেটে যায়। এসময় তারা বিমানবন্দরে কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে
কথা বলেন। তদন্ত দল ফেরত যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও যাত্রীরা তাদের ডাকে
সাড়া দেননি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নতুন সরকার বাজেট ঘোষণা জাতীয় সংসদ
মন্তব্য করুন