সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মাসুদ রানাকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে আটক রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করছে পরিবারের সদস্যরা। গত তিন দিন হলো সে নিখোঁজ রয়েছে। মাসুদ রানা স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ও ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর') সকালে
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাসুদ রানাকে না পেয়ে পরিবারের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। বার
বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন পিতা-মাতা, স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে। তারা মাসুদ রানাকে জীবিত
উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
এঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে নারায়নগঞ্জ
জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়রী করা হয়েছে। থানার ডিউটি অফিসার রিটু চন্দ্র
দে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সাধারণ ডায়রী ও অপহ্নত কলেজ অধ্যক্ষ
মাসুদ রানার পরিবার জানান, মাসুদ রানার সঙ্গে একই কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল
সানোয়ার, প্রভাষক কে.এম খালেকুজ্জামান, প্রভাষক হাসানুজ জামান সোহেল, প্রভাষক
সায়েদুলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো। উভয়ের মধ্যে একাধিক মামলা চলমান
রয়েছে'।
গত ১৩ নভেম্বর বিকেলে মামলা সংক্রান্ত
কাজে ঢাকায় হাইকোর্টে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে রওনা হয় মাসুদ রানা। রাত ১১টার দিকে
পরিবারের লোকজন তাকে ফোন দিলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তখন তার খোঁজ নিয়ে
বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করা হয়। রাত ১২টার দিকে মাসুদ রানার ফেসবুক আইডি থেকে একটি
লেখা পোষ্ট করা হয়।
ফেসবুক আইডিতে লেখা হয় “পাঁচ জনের টিম
আমায় চন্দ্রা হতে চোখ বেঁধে তুলে নিয়েছিল। এই ফোনটা ব্যাগে ছিল। আরেকটা ওরা ভেঙ্গে
ফেলেছে। আমি সম্ভবত সদর ঘাটের কোন পুরাতন ভবনে। এরা রাস্তায় কথা বলেছে ভাইস
সানোয়ার, কে.এম খালেকুজ্জামান, প্রভাষক হাসানুজ্জামান, প্রভাষক সাইদুল দের সাথে।
এরা মনে হয় মেরে ফেলবে আমায়। মাইক্রোতে অনেক মারধর করেছে। বাথরুমের কথা বলে আমি এই
বিপদের কথা লিখতে পারলাম। এরা শুধু রিজিকেই আঘাত করেনি এখন দেখছি আমার জীবনের উপর
চরম আঘাত। আল্লাহ আমায় বাঁচাও আর এদের বিচার কর”
উল্লেখিত পোষ্ট দেখার পর মাসুদ রানার
দুটি মোবাইল ফোন ট্রাকিং করে দেখা যায় দুটি নাম্বার নারায়নগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ
থানার, মুক্তি নগর, চিটাগাং রোড, সানারপাড়া এলাকায়। এই এলাকার কোন স্থানে মাসুদ
রানাকে আটক করে রাখা হয়েছে সাধারণ ডায়রীতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে, কলেজ অধ্যক্ষ মাসুদ রানার
অপহরণের খবর প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল সানোয়ার, প্রভাষক
কে.এম খালেকুজ্জামান, প্রভাষক হাসানুজ জামান সোহেল, প্রভাষক সায়েদুল গাঢাকা
দিয়েছে। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। কলেজে গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি।
অপহ্নত মাসুদ রানার স্ত্রী লতা পারভিন
বলেন, কলেজের বিরোধের কারন আমার স্বামীকে অপহরণ করা হয়েছে। অপহরণের কারণে আমি
বেলকুচি থানায় গিয়েছিলাম মামলা করার জন্য। থানায় গিয়ে দেখি যাদের বিরুদ্ধে আমি
স্বামী ফেসবুকে পোষ্ট করেছে তারা থানায় বসে আছেন। ওসি আমার মামলা নেয়নি। কলেজের
ভাইস প্রিন্সিপাল সানোয়ার, প্রভাষক কে.এম খালেকুজ্জামান, প্রভাষক হাসানুজ জামান
সোহেল, প্রভাষক সায়েদুলকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আমার স্বামীর সন্ধান
পাওয়া যাবে।
অপহ্নত মাসুদ রানার মেয়ে রাফিকা কানিজ
সূচনা বলেন, আমি আমার বাবাকে ফিরে পেতে চাই। আমার বাবাকে যারা অপহরণ করে আটক করে
রেখেছে তাদের শাস্তি চাই। কলেজের স্যারদের সঙ্গে আমার বাবার বিরোধ চলে আসছিলো। এই
বিরোধের কারণে আমার বাবাকে অপহরণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি') মোঃ আনিছুর রহমান জানান, ঐ পরিবারের পক্ষ থেকে নারায়নগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়রী করেছে। যেহেতু এটা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভিতরে তাই এই বিষয়ে আমার কিছু করার নেই বলে তিনি জানান।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নতুন সরকার বাজেট ঘোষণা জাতীয় সংসদ
মন্তব্য করুন