বর্তমান সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে দেশে ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে ১১ গুনের বেশী। বিগত পাঁচ বছরে ভুট্টার উৎপাদন দ্বিগুণ হয়ে ২৭ লাখ টন হতে ৫৪ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। বিশ্বে হেক্টরপ্রতি ভুট্টার সর্বাধিক ফলন ১১ টন। আর বাংলাদেশে হেক্টরপ্রতি ভুট্টার ফলন হয়েছে পৌনে ১০ টন, যা বিশ্বে তৃতীয়। ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী ২০০৮-০৯ সালে ভুট্টার উৎপাদন ছিল মাত্র ৬ লাখ টন। বর্তমানে তা বেড়ে ৬৭ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে।
দেশে প্রতি বছর প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য খাতে খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে। এতে ভুট্টার একটি বড় বাজার তৈরি হয়েছে। চাহিদা থাকায় চাষ বাড়ছে। ফলনেও সাফল্য এসেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলেছে, উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ ব্যবহারের ফলে এ অঞ্চলে ভুট্টার সর্বোচ্চ ফলন হয় বাংলাদেশে।
ভুট্টা চাষে খুব কম সময়েই সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। অন্যান্য খাদ্যশস্যের চেয়ে কম পরিচর্যা ও কম সেচ খরচে ভালো ফলন হয় এবং দামও ভালো পাওয়া যায় বলে ভুট্টা চাষে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ফলে ধারাবাহিকভাবে উৎপাদন বাড়ছে। মাত্র পাঁচ বছরে দেশে ভুট্টার উৎপাদন বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ফলনেও বাংলাদেশ এখন বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর কাতারে রয়েছে। দেশের প্রাণী খাদ্যের বাজার এখন ভুট্টার ওপর নির্ভরশীল। মাছ, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির উৎপাদন বাড়ায় ভুট্টার খাবারের চাহিদাও বাড়ছে। দেশের শতাধিক কোম্পানি এসব খাদ্য প্রস্তুত করছে। পাশাপাশি ভুট্টা চাষ, মানুষের বিভিন্ন খাদ্য তৈরি, আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতসহ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণে যুক্ত হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। সবমিলিয়ে দেশে এখন ভুট্টার বাণিজ্য বড় হতে চলছে।
ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য বলছে, পাঁচ বছর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে ভুট্টার উৎপাদন হয়েছিল ২৭ লাখ টন। যা ২০২১-২২ অর্থবছরে এসে দাঁড়ায় সাড়ে ৫৬ লাখ টনে। দেশে বর্তমানে সাড়ে পাঁচ লাখ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হচ্ছে। দেশে গত কয়েক বছরে ভুট্টার উৎপাদনশীলতা বেশ বেড়েছে। এখন হেক্টরপ্রতি প্রায় ৯ দশমিক ৭৪ টন ভুট্টার ফলন হচ্ছে, যা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। হেক্টরপ্রতি সবচেয়ে বেশি ফলনের রেকর্ড তুরস্কের। সেখানে হেক্টরে সাড়ে ১১ টন ভুট্টার ফলন হয়। দেশে গ্রীষ্ম ও শীত দুই মৌসুমে ভুট্টা চাষ হয়। তবে মোট উৎপাদনের ৮৭ শতাংশই হয় শীত মৌসুমে। কিন্তু দেশে ভুট্টার চাহিদা থাকে সারা বছর। সারা বছরে শস্যটির চাহিদা থাকে ৭০ লাখ টনের বেশি।
ধানের এবং অন্যান্য আবাদের চেয়ে ভুট্টার আবাদ অনেক লাভজনক হওয়ায় কৃষকের দেখাদেখি অনেকেই এ ফসল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। বিঘাপ্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হলেও ৩৫ থেকে ৪০ মণ পর্যন্ত ভুট্টা উৎপাদন সম্ভব। ভুট্টার শুকনো গাছ ও ভুট্টা মাড়াইয়ের পর তা জ্বালানি হিসেবে বাজারে বিক্রি করে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়। এ ছাড়া ভুট্টার গাছ মেশিনে গুড়া করে গবাদী পশুকে খাওয়ানো যায়। এটা পশুর জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার বলে জানান কৃষিবিদগণ।
আওয়ামী লীগ সরকার ভূট্টা উৎপাদন দ্বিগুণ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।