এগারো দিনের ছুটি শেষে আজ পিটার হাস ঢাকায় ফিরে এসেছেন। পিটার হাস ফিরে আসার পরই রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা রকম গুঞ্জন শুরু হয়েছে। নির্বাচনের ঠিক আগে আগে পিটার হাস ছুটি শেষে ঢাকায় এসে এখন কি করবেন—এ নিয়ে চলছে নানামুখী আলাপ আলোচনা এবং জল্পনা কল্পনা। গত ১৫ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন ধার্য করা হয়েছে। ১৬ নভেম্বর পিটার হাস আকস্মিকভাবে ছুটিতে যান এবং তিনি কলম্বোর উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। পিটার হাস চলে যাওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানা রকম প্রশ্নের জন্ম নিয়েছিল। বিশেষ করে এই অবস্থায় তিনি চলে গেলেন, এটা কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের পরিবর্তনের ইঙ্গিত কিনা এ নিয়েও নানামুখী আলোচনা হয়েছে।
বিভিন্ন কূটনৈতিক মহল মনে করছেন যে, এটা ছিল পূর্ব নির্ধারিত। কাজেই এই ছুটির সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান পরিবর্তনের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে পিটার হাস নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত শর্তহীন সংলাপের জন্য তৎপরতা অব্যাহত রেখেছিলেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিনও তিনি সকালবেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে তিনি ডোনাল্ড লু এর একটি চিঠি পৌঁছে দেন। এর আগে তিনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাকেও তিনি ডোনাল্ড লু এর চিঠি পৌঁছে দেন।
ডোনাল্ড লু এর চিঠির ব্যাপারে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, সময়ে শেষ হয়ে গেছে। এখন আর সংলাপের সুযোগ নেই। দেশ নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু করেছে। এরকম পরিস্থিতিতে বিএনপি বিরতি দিয়ে দিয়ে অবরোধ অব্যাহত রাখে। তবে পিটার হাসের ফিরে আসার ফলে বিএনপি নতুন করে চাঙ্গা হবে কিনা সেটি নিয়েও অনেকের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। পিটার হাস ছুটিতে থাকা অবস্থায় রাশিয়ার মুখপাত্র জাখারোভা বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলকে সক্রিয় করতে পিটার হাসের ভূমিকা নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন। যদিও এই মন্তব্যের পাল্টা জবাব দেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তারা এই ধরনের অবস্থানের কঠোর সমালোচনা করেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে গত বছরের ১৫ মার্চ থেকে পিটার হাস আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ঢাকায় এসে তিনি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, মানবাধিকার, সুশাসন ইত্যাদি বিষয়ে সোচ্চার ছিলেন এবং তার এই ভূমিকাকে অনেকে মনে করেছিল যে সরকার বিরোধী অবস্থান। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বারবার সুস্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের পক্ষে বিপক্ষে নয়, বরং তারা বাংলাদেশে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায় এবং এটিকে সহায়তা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যত তৎপরতা।
তবে পিটার হাস ঢাকায় এসে আবার নতুন করে সংলাপের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানাবে কিনা—এই প্রশ্নটি যেমন সামনে এসেছে তেমনই এখন পিটার হাস বিএনপিকে নির্বাচনের পথে আনার জন্য কোনো উদ্যোগ নেবেন কিনা সে বিষয়টিও কোনো কোনো মহলে আলোচিত হচ্ছে। নির্বাচনের সময় সীমা কাছাকাছি চলে এসেছে। ৩০ নভেম্বর মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময়। তবে নির্বাচন কমিশনের সূত্রগুলো বলছে, শেষ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় আরও তিন থেকে পাঁচদিন পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হতে পারে। এই এক সপ্তাহ সময়ের মধ্যে পিটার হাস কোনো উদ্যোগ নেবেন কি না সেটি দেখার বিষয়৷ আবার কোনো কোনো মহল মনে করছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি অবস্থানের পরিবর্তন করে থাকে, তাহলে হয়তো পিটার হাস এক ধরনের নীরবতাই পালন করবেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই বোঝা যাবে যে, পিটার হাসের ভূমিকা কি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কি ভাবছে।