এবার বিদেশি দূতাবাসগুলোর নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ অনেকটা কম। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের অবস্থান অনেকটা গুটিয়ে ফেলেছে, তখন অন্যান্য দূতাবাসগুলোকেও নির্বাচন নিয়ে তেমন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। তবে নির্বাচনের সময়সীমা যতই এগিয়ে আসছে ততই আস্তে আস্তে বিভিন্ন দূতাবাসগুলো নির্বাচনের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে।
একটি ইউরোপীয় দেশের দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন, এই নির্বাচনের ফলাফল পূর্ব অনুমিত। যেহেতু বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, কাজেই এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের কোন শঙ্কা নেই। এখন দেখার বিষয় যে, আওয়ামী লীগ কত ব্যবধানে জেতে, নির্বাচনের প্রক্রিয়াগুলো কতটুকু সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ ভাবে অনুষ্ঠিত হয় এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া কতটুকু স্বচ্ছ হয়।
মূলত নির্বাচন পরিচালনায় কমিশন কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন কতটা নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখতে পেরেছে এবং অন্যান্য যারা ক্রিয়াশীল তারা তাদের অবস্থান থেকে কতটুকু দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে, এটি বিদেশী দূতাবাসগুলো দেখবে। তাছাড়া ভোটের আগে এবং পরে যারা প্রার্থী আছেন তারা সমান সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন কিনা, কাউকে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে কিনা, সহিংসতা বা পেশী শক্তির প্রয়োগ করা হচ্ছে কিনা ইত্যাদি বিষয়গুলোর ওপর বিদেশি দূতাবাসগুলো নজর রাখতে শুরু করেছে। আর এই নজর রাখার ক্ষেত্রে ক্রমশ তাদের আগ্রহ বাড়ছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারে।
বিদেশি দূতাবাসের অন্তত দুজন ব্যক্তি বলেছেন যে, এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারে সরকার কি ধরনের মনোভাব পোষণ করে, তাদেরকে অবাধে নির্বাচনী প্রচারণা করতে দেওয়া হয় কিনা, নির্বাচনী প্রচারণার সময় তারা হয়রানির শিকার হয় কিনা বা তাদের ব্যাপারে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী কি ধরনের আচরণ করে ইত্যাদি বিষয়গুলো তারা দেখছেন। বিশেষ করে এরকম ৫০টি আসন চিহ্নিত করা হয়েছে যে আসনগুলোতে স্বতন্ত্রদের অবস্থান অত্যন্ত ভালো এবং যে আসনগুলোতে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের সঙ্গে বিভিন্ন দূতাবাসের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগাযোগ রয়েছে। এই সমস্ত আসনগুলোর ব্যাপারে বিদেশি দূতাবাসের আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, ফরিদপুরের একটি আসনে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি এ.কে. আজাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তিনি বিভিন্ন দূতাবাসের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে চলেন। তার ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে দূতাবাসগুলোর। শুধু তার ব্যাপারে না, ফরিদপুরের ৪টি আসনের প্রার্থীদের ব্যাপারে বিপুল আগ্রহ রয়েছে বলে জানা গেছে।
বরিশালে একজন সাবেক মেয়র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে। তিনি কিভাবে নির্বাচনী প্রচারণা করছেন বা তাকে কোন সমান সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে কিনা ইত্যাদি নিয়েও কথাবার্তা হচ্ছে। পঙ্কজ দেবনাথের আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ। সেই আসনটিতেও বিদেশি দূতাবাসগুলো নজর রাখছে। বিশেষ করে পঙ্কজের প্রতি কি ধরনের আচরণ করা হয়, তা নিয়ে কয়েকটি দেশের বেশ আগ্রহ রয়েছে। ক্রমশ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারে নির্বাচনে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন যে, বিভিন্ন দূতাবাসগুলো স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। কয়েকটি দূতাবাস স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকেও নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের অবস্থান মনোভাব এবং তারা কি ধরনের বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছেন তা জানতে চেয়েছেন। সবকিছু মিলিয়ে এবারের নির্বাচনে যদি কোন উৎসাহ উদ্দীপনা তৈরি হয় সেটি স্বতন্ত্রদের জন্যই হবে। কাজেই স্বতন্ত্ররা কি নির্বাচন প্রচারণার সমান্তরাল সুযোগ পাচ্ছেন কিনা সেটি দেখার জন্যই আগ্রহী দূতাবাসগুলো।