মো. শাহে আলম। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন,স্কুল জীবন থেকে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের অবিনাশী আদর্শে লালিত হয়ে বড় হয়েছেন। পঁচাত্তর পরবর্তী রাজনীতিতে তিনি এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ৮০ ও ৯০ দশকের তুখোড় ছাত্রনেতা শাহে আলম স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী গণঅভূত্থানে অগ্রনায়ক ছিলেন।
তিনি ১৯৯১-৯৬ ও ২০০১-০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের
দুঃশাসনের বিরুদ্ধেও ছিলেন সোচ্চার । এক এগারোর সময়ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার
মুক্তির আন্দোলনে ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ফলে
বিভিন্ন সময়ে বহু মিথ্যা মামলায় তাকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। ১৯৯১ সাল
থেকে তিনি তার নিজ এলাকার আসনে দলীয় মনোনয়নের দাবিদার ছিলেন। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ
সভাপতি শেখ হাসিনা নিজে তাকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু
সেই নির্বাচনে শাহে আলমের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের তৎকালীণ হেভিওয়েট নেতা আমির হোসেন
আমুকে বরিশাল সংযুক্ত পিরোজপুর,বানারীপাড়া-স্বরূপকাঠি আসনে নৌকার টিকিট দেওয়া হয়।
এর পরে ১৯৯৬,২০০১,২০০৮ ও ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও সাবেক
ছাত্রনেতা মো. শাহে আলম মনোনয়ন বঞ্চিত হন। বিজয়ী হওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি
কখনও বিদ্রোহী প্রার্থী হননি। উপরন্তু প্রতিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী
করতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি
বরিশাল-২(বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে নৌকার টিকিটে রেকর্ডসংখ্যক ভোট পেয়ে প্রথম
বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেন। এবার তিনি
মনোনয়ন পাননি। মনোনয়ন না পাওয়ার কারণে তিনি আদর্শচ্যুত হননি,স্বতন্ত্র প্রার্থী
হননি। নিজের ব্যক্তি স্বার্থের চেয়ে দল,নেত্রী ও দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখেছেন।
জানা গেছে,আওয়ামী লীগ এবার মোট ৭১ জন বর্তমান সংসদ সদস্য মনোনয়ন পাননি। তাদের
মধ্যে ৬৩ জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাঠে দাঁড়িয়েছেন। আর যারা স্বতন্ত্র
হননি,তারা অনেকে নিস্প্রভ রয়েছেন।
আদর্শের রাজনীতিতে চড়াই-উৎরাই
থাকবে। সবসময় আপনি পুরস্কৃত হবেন এমনটি নয়। কখনও আপনার পরীক্ষার সময়,কখনও আপনাকে
কঠিন সময় পার করতে হবে, কখনও সুবিধাবাদীদের জন্য পিছু হঠতে হবে। কিন্তু,সব কিছুকে
মাড়িয়ে যিনি আদর্শের পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরবেন, তিনি সত্যিকারের রাজনীতিবিদ। তেমনী
একজন আদর্শবান মুজিব অন্তপ্রাণ নেতা মো. শাহে আলম। আদর্শ তার ধমনীতে। তাইতো বার
বার উপেক্ষিত হয়েও তিনি দলের বিরুদ্ধাচারণ করেননি,কখনও বিদ্রোহী প্রার্থী হননি।
কিংবা দলছুট হয়ে এমপি-মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ নেননি। তিনি দীর্ঘ ২৭ বছর
অপেক্ষার পরে ২০১৮ সালে দলীয় মনোনয়ন পান। নির্বাচনী এলাকায় রেকর্ড পরিমাণ উন্নয়ন
করেও আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হন।
এবার নির্বাচনে মনোনয়ন না
পাওয়ার পরও আদর্শের আলোয় উদ্ভাসিত তিনি। শাহে আলম প্রমাণ করেছেন, আদর্শই রাজনীতিতে
শেষ কথা। কিছু পাওয়া না পাওয়ার হিসাবটা সাময়িক। তিনি যেভাবে মনোনয়ন না পাওয়ার পরও
আদর্শচ্যূত হননি, সেই একই আদর্শের পথে যদি আওয়ামী লীগের সকল মনোনয়নবঞ্চিতরা হাটতেন
তাহলে এই রাজনৈতিক দলটি অন্যরকমভাবে বিকশিত হত। কিন্তু শাহে আলমের মতো কয়জন নেতাই
আছেন যারা আদর্শের আলোয় উদ্ভাসিত?
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।