জীবন-মৃত্যুর খেলায় গতিময় পৃথিবী। প্রতিদিন আকাশে কত শত নক্ষত্রের মেলা। আর ধরিত্রীর বুকে শত প্রাণের জন্ম-মৃত্যু হয়। এদের তালিকায় স্থান পান সৃষ্টিশীল মানুষ। আজকের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেছেন মীর মশাররফ হোসেন। (জন্ম: নভেম্বর ১৩, মৃত্যু: ১৮৪৭ - ডিসেম্বর ১৯, ১৯১১)
পুরো নাম সৈয়দ মীর মশাররফ হোসেন। তিনি ছিলেন একজন বাঙালি ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক। তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান গদ্যশিল্পী ও বাঙালি মুসলিম সাহিত্যিকদের পথিকৃৎ। কারবালার যুদ্ধকে উপজীব্য করে রচিত ‘বিষাদ সিন্ধু’ তার সবচেয়ে জনপ্রিয় সাহিত্যকর্ম।
মীর মশাররফের পিতার নাম মীর মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি ছিলেন জমিদার। নিজ বাড়িতে মুনশির কাছে আরবি ও ফারসি শেখার মাধ্যমে তার লেখাপড়ার হাতেখড়ি। তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় কুষ্টিয়া স্কুলে। পরে তিনি কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করে কলকাতার কালীঘাট স্কুলে ভর্তি হন; কিন্তু লেখাপড়া আর বেশি দূর অগ্রসর হয়নি।
কর্মজীবনের শুরুতে মশাররফ হোসেন পিতার জমিদারি দেখাশুনা করেন। পরে তিনি ফরিদপুর নবাব এস্টেটে চাকরি নেন এবং ১৮৮৫ সালে দেলদুয়ার এস্টেটের ব্যবস্থাপক হন। এক সময় এ চাকরি ছেড়ে তিনি লাহিনীপাড়ায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং পরে ভাগ্যান্বেষণে কলকাতায় যান। তিনি প্রথম জীবনে কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের 'গ্রামবার্তা প্রকাশিকা' ও কবি ঈশ্বরগুপ্তের 'সংবাদ প্রভাকর' পত্রিকায় সংবাদ প্রেরণ করতেন। কাঙাল হরিনাথের সঙ্গে তার হৃদ্যতার কারণে তাকে কাঙাল হরিনাথের সাহিত্যশিষ্য বলা হয়। ১৮৯০ সালে তিনি 'হিতকরী' নামে একখানি পাক্ষিক পত্রিকা প্রকাশ করেন।
মীর মশাররফ ‘আজিজননেহার’ ও ‘হিতকরী’ নামে দুটি পত্রিকাও সম্পাদনা করেন। কারবালার বিষাদময় ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস 'বিষাদ সিন্ধু' তার শ্রেষ্ঠ রচনা। তার সৃষ্টিকর্ম বাংলার মুসলমান সমাজে আধুনিক সাহিত্য ধারার সূচনা করে। মুসলিম সাহিত্যিকদের পথিকৃৎ মীর মশাররফ হোসেন বিশুদ্ধ বাংলায় অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করে আরবি-ফারসি মিশ্রিত তথাকথিত মুসলমানী বাংলা ভাষা পরিত্যাগ করেছিলেন। কারবালার করুণ ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে রচিত বিষাদসিন্ধু উপন্যাস বাংলাসাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। দুর্গেশনন্দিনী উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার চার বছর পর মশাররফের প্রথম উপন্যাস রত্নবতী প্রকাশিত হয়।
এরপর তিনি একে একে কবিতা, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, আত্মজীবনী, পাঠ্যপুস্তক ইত্যাদি বিষয়ে বহু গ্রন্থ রচনা করেন। মীর মশাররফ হোসেনের মোট ৩৬টি বইয়ের সন্ধান পাওয়া যায়। তার রচনা হলো- গোরাই-ব্রিজ অথবা গৌরী সেতু, বসন্তকুমারী নাটক, জমিদার দর্পণ, এর উপায় কি, বিষাদ সিন্ধু, সংগীত লহরী, গো-জীবন, বেহুলা গীতাভিনয়, উদাসীন পথিকের মনের কথা, তহমিনা, টালা অভিনয়, নিয়তি কি অবনতি, গাজী মিয়ার বস্তানী, মৌলুদ শরীফ, মুসলমানদের বাঙ্গালা শিক্ষা, বিবি খোদেজার বিবাহ, মদিনার গৌরব, বাজীমাৎ, আমার জীবনী, আমার জীবনীর জীবনী বিবি কুলসুম ইত্যাদি। তার জমিদার দর্পণ নাটকটি ১৮৭২-৭৩ সালে সিরাজগঞ্জে সংঘটিত কৃষক-বিদ্রোহের পটভূমিকায় রচিত।
মীর মশাররফ সাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকে মুক্ত ছিলেন। উদার দৃষ্টিকোণ থেকে 'গোকুল নির্মূল আশঙ্কা' প্রবন্ধ লিখে তিনি নিজের সমাজ কর্তৃক নিগৃহীত হন। তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মাত্র আঠার বছর বয়সে তার পিতৃবন্ধুর কন্যা আজিজুন্নেসার সঙ্গে বিয়ে হয়। ১৯১২ সালের ১৯ ডিসেম্বর রাজবাড়ী জেলার পদমদী গ্রামে নিজ বাড়িতে মীর মশাররফ হোসেন মারা গেলে বিবি লসুমের কবরের পাশেই তাকে সমাহিত করা হয়।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
জন্ম-মৃত্যু সৃষ্টিশীল মানুষ মীর মশাররফ হোসেন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ শিল্পমন্ত্রী
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রায় ১৩ বছর পর লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনে তিনটিতে চেয়ারম্যান পদে নতুন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। আর দক্ষিণ হামছাদী ও তেওয়ারীগঞ্জ এ দুইটি ইউনিয়নে এ পদে পুরাতনেই আস্থা রেখেছেন ভোটাররা। তবে পাঁচটি ইউনিয়নে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরকে পেয়ে উল্লাস প্রকাশ করছে পুরো নেট দুনিয়া।