দিনের পর সপ্তাহ, এরপর মাস, শেষ হয় বছর। ২০২৩ সালটিও সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বছরজুড়েই ছিল ঘটন-অঘটনের কর্মযজ্ঞের সমাহার। ইতিবাচক ঘটনা যেমন বহুল আলোচিত, সমালোচনাও হয়েছে অনেককিছু নিয়ে। জাতীয় ইস্যুগুলো নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সালতামামি-
দ্বাদশ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কার্যক্রম চলছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই সারাবছর কমযজ্ঞ চালু
রেখেছে সরকারপক্ষ। অন্যদিকে বিরোধীরাও সমালোচনা করতে ছাড় দেননি। নির্বাচনী ইস্যু নিয়ে অবরোধ-হরতালও চলছে। সব কিছু ডিঙিয়ে সারা বছর যে বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ডলার সংকট, খেলাপি ঋণে রেকর্ড,
শিক্ষায় পরিবর্তন, মার্কিন ভিসানীতির চ্যালেঞ্জ, রাজনীতিতে তারকার মেলা, জ্বালানির
মূল্যবৃদ্ধি, তেলের সন্ধান, ডেঙ্গুতে প্রাণহানি, সার্বজনিন পেনশন ইত্যাদি।
বলা বাহুল্য,
২০২৩ সালটি মূলত উন্নয়নে চমকের বছর। আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে উন্মুক্ত করা হয়েছে
বড় প্রকল্পগুলো। এরমধ্যে রয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু টানেল, পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগ (ঢাকা-ভাঙ্গা), আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল, আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেললাইন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের
একাংশ এবং ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ চালু অন্যতম।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি:
বিবিধ
কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অস্বস্তি দেখা গেছে
বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষের মধ্যে। ২০২৩
সালের শুরু থেকেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ঊর্ধ্বমুখী। বছরের শেষ ভাগে এসে তা আরও বেড়েছে। সরকারের নানা পদক্ষেপেও খাদ্যপণ্যের দামে লাগাম টানা যায়নি। বেড়েছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। একইসঙ্গে বছরজুড়েই বাজারে জিনিসপত্রের দাম ছিল বেশ চড়া। কখনো ডিম, কখনো আবার পেঁয়াজ বা আলুর দাম বেড়েছে। শাক-সবজি, মাছ-মাংসের দামও ছিল সাধারণের নাগালের বাইরে। এছাড়া তেল ডাল চিনি আটা ময়দার মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর দামও ছিল অস্বস্তির পর্যায়ে।
ডলার
সংকট ও নাজুক ব্যাংকিং খাত:
ডলার
সংকট নিয়ে সারা বছর হইচই দেখা গেল, যা চলমান। খোলাবাজারে ডলারের দর উঠে যায় ১২৯ টাকায়।
ডলার বাজারের এই অস্থিরতার সুযোগ নেয় দেশি-বিদেশি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ১০ ব্যাংক। ডলার কারসাজিতে
জড়িয়ে পড়ে এসব ব্যাংক। পাশাপাশি রাজনৈতিক চাপে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণে হয় নতুন রেকর্ড।
এসব নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই নতুন করে আলোচনায় আসে ‘বিশেষ বিবেচনায়’ একটি কোম্পানিকে ২২ হাজার কোটি টাকা
ঋণ দেওয়ার বিষয়।
এছাড়াও
২০২৩ সাল অর্থ সংকটের বছর। কমতে থাকে রিজার্ভ, উদ্বেগ তৈরি করে রেমিট্যান্স প্রবাহ।
সারাবছরই আলোচনায় ছিল আইএমএফের ঋণ। নানান নাটকীয়তার পরে এরই মধ্যে ঋণের দুই কিস্তি
দিয়েছে আইএমএফ। পাশাপাশি এডিবির ঋণে কিছুটা বেড়েছে রিজার্ভ।
সবশেষ
আলোচনায় আসে টাকার সংকটে পাঁচ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের লেনদেন সেবা বন্ধের উপক্রম হওয়ার
বিষয়। ব্যাংকগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী
ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। গত ২৮ নভেম্বর ব্যাংক পাঁচটির ব্যবস্থাপনা
পরিচালকদের চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়াও ব্যাংকিংখাতে নৈরাজ্য ঠেকাতে একই পরিবার
থেকে ব্যাংকের পরিচালক তিনজনে নামিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে।
চলতি
বছর খেলাপি ঋণের রেকর্ড তৈরি হয় দেশের ব্যাংক খাতে। জুন প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতে
মোট খেলাপি ঋণ এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ।
এসময় পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা।
আন্তর্জাতিক
মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ৪০ কোটি
ডলার ঋণের ওপর ভর করে দেশের রিজার্ভ কিছুটা বেড়েছে। এই দুই সংস্থার ঋণ পাওয়ায় দেশের
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলারে। তবে খরচ করার মতো রিজার্ভ
(বিপিএম৬) আছে ২০ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার।
শিক্ষায় পরিবর্তন, আলোচনা-সমালোচনা:
শিক্ষাক্রম নিয়ে তুমুল বিতর্কের বছরে ছিল নানান ইস্যু নিয়ে আন্দোলনের উত্তাপ। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে টানা ২৩ দিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলন করেন শিক্ষকরা। এতে বন্ধ হয়ে যায় দেশের সব বেসরকারি স্কুল-কলেজের ক্লাস-পরীক্ষা। বৈষম্য নিরসন ও পদোন্নতির দাবিতে আন্দোলন করেছেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারাও।
এছাড়া এসএসসি-এইচএসসিতে নিম্নমুখী ফল, ডেঙ্গুতে একের পর এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু, নতুন পাঠ্যবই ছাপাতে দেরি, এক দশক পর প্রাথমিকের শিক্ষকদের পদোন্নতি, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে ২৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগ, প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা, কিন্ডাগার্টেন নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা, এক বছরে তিন বিসিএসের ফল প্রকাশ, গুচ্ছ ভর্তি নিয়ে ভোগান্তি, একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির রেষারেষি, হরতাল-অবরোধে বার্ষিক পরীক্ষাসহ নানান ঘটনায় আলোচনায় ছিল শিক্ষাখাত।
চলতি বছর থেকে শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন। ২০২৩ সালে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আগামী বছর অর্থাৎ, ২০২৪ সালে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে তা শুরু হবে। এরপর ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষা ও মুখস্থনির্ভরতার পরিবর্তে অভিজ্ঞতানির্ভর পড়াশোনায় জোর দেওয়া হয়েছে। এতে বদলে গেছে চিরাচরিত পড়াশোনার পদ্ধতিও। তবে শিক্ষাক্রমের এমন আমূল পরিবর্তন নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। এক পক্ষ বলছে, নতুন শিক্ষাক্রম যুগোপযোগী। একজন শিক্ষার্থীকে দক্ষ, যোগ্য ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এটি সহায়ক। অন্য পক্ষ শিক্ষাক্রমের কড়া সমালোচনা করে তা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে।
মার্কিন ভিসানীতির চ্যালেঞ্জ:
মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে এবছর একটা হট্টগোল লেগে যায়। রাজনৈতিক ব্যক্তি,
সাবেক ও বর্তমান আমলা, ব্যবসায়ী, প্রতিষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। পোশাকখাত
নিয়েও নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানা যায়। মূলত বাংলাদেশের রাজনীতিকে কেন্দ্র করেই বেশি সরগরম
দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রকে। তবে বছরের শেষে এসে ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তেমন উদ্বেগ দেখছেন
না বিশ্লেষকগণ।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি-বক্তব্যও শেষ দিকে হয়ে উঠেছে আলোচ্য বিষয়। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের বাধা-বিঘ্ন না ঘটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
ফিলিস্তিনে মানবিক যুদ্ধবিরতির পক্ষে বাংলাদেশের ভোট:
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় মানবিক যুদ্ধবিরতির জন্য বারবার আলোচনা করেও সফল হতে পারেনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তার অভিভাবক এ পরিষদের উপর্যুপরি ব্যর্থতার পর গত ২৭ অক্টোবর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনের গাজায় মানবিক যু্দ্ধবিরতির জন্য আনীত একটি প্রস্তাব দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে গৃহীত হয়। এতে মানবিক যু্দ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দেয় বাংলাদেশ। উপস্থিত সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ১২১টি দেশ পক্ষে, ১৪টি বিপক্ষে এবং ৪৪টি দেশ ভোট দানে বিরত থাকে। বাংলাদেশের পক্ষে এ প্রস্তাবে ভোট দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত।
বাংলাদেশ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার পাল্টাপাল্টি অবস্থান:
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে এবং ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সরকারবিরোধী আন্দোলনের পরিকল্পনা করতে বিরোধীপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন- রাশিয়ার পক্ষ থেকে আসা এমন একটি বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, বাংলাদেশ বিষয়ে রাশিয়া যে বক্তব্য রেখেছে, সেটি তাদের ‘ধারাবাহিক অপব্যাখ্যার’ অংশ। এর আগে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন তাদের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা। পরে মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্স-এ তার বক্তব্যের কিছু অংশ তুলে ধরা হয়।
রাজনীতি ও নির্বাচনের মাঠে সরব তারকারা:
চলতি বছর শোবিজে অন্য ঘটনার পাশাপাশি তারকাদের নির্বাচনের অংশগ্রহণের জন্য মনোনয়ন সংগ্রহ আলোচনায় এসেছে। এর আগে এত সংখ্যক শোবিজ তারকার নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন কিনতে দেখা যায়নি। অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর নীলফামারী-২, ঢাকা-১০ আসন থেকে চিত্রনায়ক ফেরেদৗস আহমেদ ও মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী মাহিয়া মাহি। অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমান ঢাকা-১৭ এবং টাঙ্গাইল-১ আসনের ফরম সংগ্রহ করেছিলেন।
অন্যদিকে বরিশাল-৩ আসনের মনোনয়ন কিনেছিলেন চিত্রনায়ক রুবেল। গত নির্বাচনেও ‘বাগেরহাট-৩’ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন চিত্রনায়ক শাকিল খান। মনোনয়ন না পেলেও এলাকায় তিনি নানান সামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছেন। জনপ্রিয়
কণ্ঠশিল্পী, অভিনেতা ও পরিচালক এসডি রুবেল মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। আওয়ামী লীগের হয়ে ঢাকা-৮ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করতে চেয়েছিলেন এ তারকা। ‘ম্যাডাম ফুলি’ খ্যাত চিত্রনায়িকা সামসুন্নাহার সিমলা ঝিনাইদহ-১ আসনে প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম তুলেছিলেন।
ফেনী-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন অভিনয়শিল্পী, সংগঠক ও রাজনীতিবিদ রোকেয়া প্রাচী। এদিকে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। পরে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে রাজশাহী-১ আসনের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ডলি সায়ন্তনীও আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। নতুন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) হয়ে নির্বাচন করছেন। ডলি সায়ন্তনী তার জন্মস্থান পাবনা-২ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। আলোচিত ইউটিউবার হিরো আলম। তিনি বগুড়া-৪ আসন থেকে গণঅধিকার পার্টির জাতীয় জোট বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতীক নিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
নওগাঁ-৩ আসন থেকে চলচ্চিত্র কৌতুক অভিনেতা চিকন আলী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। অন্যদিকে সংগীতশিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাস মাদারীপুর ৩ থেকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ থেকে গামছা প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
গ্যাসকূপে তেলের সন্ধান:
বছরের শুরুতে ১২ জানুয়ারি ও ২৮ ফেব্রুয়ারি দুই দফায় নির্বাহী আদেশে ভোক্তাপর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করে সরকার। দুই মাসের ব্যবধানে ১০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনে তৈরি করে বাড়তি চাপ। দুই দফায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে বছর শুরু করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। যদিও এ পথচলায় আসতে থাকে একের পর এক চ্যালেঞ্জ। সব চ্যালেঞ্জের মধ্যেও ইউরেনিয়ামের মাধ্যমে পারমাণবিক শক্তির যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, ভোলা ও সিলেটের কূপে গ্যাসের সন্ধান এবং ১৯৮৬ সালের পর ফের দেশের মাটিতে তেলের সন্ধান— এ খাতকে দেখিয়েছে আশার আলো।
ইউরেনিয়ামের যুগে প্রবেশ:
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে রাশিয়া কর্তৃক ইউরেনিয়াম হস্তান্তরের মাধ্যমে ৫ অক্টোবর পারমাণবিক শক্তির যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে নিউক্লিয়ার পাওয়ার সমৃদ্ধ দেশগুলোর তালিকায় ৩৩তম সদস্য হিসেবে স্থান পায় বাংলাদেশ। আশা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের শুরু থেকে রূপপুর থেকে মিলবে বহুল আকাঙ্ক্ষিত বিদ্যুৎ।
ভয়াবহ ডেঙ্গু পরিস্থিতি:
বছরজুড়ে রাজধানীতে ছিল মশার উপদ্রব। দিন নেই, রাত নেই; ঘরে কিংবা বাইরে; বাসা কিংবা অফিসে— সব জায়গায় ছিল মশার তাণ্ডব। সাধারণত গ্রীষ্মকালে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকলেও এবার দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী ও মৃতের সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি দেখা গেছে।
ঝুলে থাকল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পাইলট প্রকল্পের আওতায় কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করার লক্ষ্য ছিল সরকারের। মিয়ানমারের দিক থেকেও ইতিবাচক সাড়া ছিল। প্রত্যাবাসনে গতি আনতে বন্ধু রাষ্ট্র চীনের দূতিয়ালিও ছিল চোখের পড়ার মতো। তবে, মিয়ানমারের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক কিছু প্রতিষ্ঠানের কারণে সেই সম্ভাবনা ঝুলে থাকলো । প্রসঙ্গত যে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এ ছাড়া, প্রতি বছর নতুন করে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিচ্ছে ক্যাম্পগুলোতে।
সাগর-রুনি হত্যা মামলা:
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ আবার পিছিয়েছে। এ নিয়ে এই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ ১০৪ বার পেছাল।
সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের ধার্য দিন ছিল আজ মঙ্গলবার। কিন্তু র্যাবের পক্ষ থেকে আজও আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিন আগামী ২৩ জানুয়ারি এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নতুন তারিখ ধার্য করেছেন।
২০১২
সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় এই সাংবাদিক দম্পতি নৃশংসভাবে
খুন হন।
সার্বজনীন পেনশন চালু:
সার্বজনীন পেনশন জুলাই ২০২৩ সালে চালু হওয়ার কথা ছিলো, তবে পরে ১৭ আগস্ট ২০২৩ সালে চালু হবে বলে নিশ্চিত করা হয়। প্রতিশ্রুত দিনে শেখ হাসিনা সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার উদ্বোধন করেন। সার্বজনীন পেনশন সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক স্বেচ্ছায় এই পেনশন পেতে পারেন, ভবিষ্যতে এই পেনশন সবার জন্য বাধ্যতামূলক হবে।
বাংলাদেশ ২০২৩ উন্নয়ন ঘটনা প্রকল্প
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাপদাহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।
প্রথম দুই দফা ভোটের যে হার, তাতে বিজেপির মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিজেপির নেতারা ভোটে যে ভূমিধস বিজয় আশা করছিলেন সেটি হবে না। ভারতের কোন কোন গণমাধ্যমগুলো ভোটের ফলাফলে নাটকীয় ঘটনা ঘটারও ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে ২০০৪ সালের নির্বাচনে যেভাবে কংগ্রেস অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে বিজেপিকে ধরাশায়ী করেছিল সেরকম কোন ঘটনা ঘটতেও পারে বলে মনে আশঙ্কা করছেন অনেকে। অবশ্য এখনও আরও পাঁচ দফা ভোট বাকি আছে এবং বিজেপি আশা করছে যে, পরবর্তী ধাপগুলোতে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে এবং বিজেপি তাদের জয়ের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখবে। নরেন্দ্র মোদি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে দেওয়ার জন্য বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন।
ভারতের নির্বাচনের ফলাফল কী হবে তা বোঝা যাবে আগামী ৪ জুন। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে ভোটের হাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে এটা স্পষ্ট যে, ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোটের যে নিরঙ্কুশ বিজয়ের ধারণা করা হয়েছিল, সেটি বাস্তবতা নাও পেতে পারে। আর এ কারণেই মোদী যদি শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন, তাহলে সেটি হবে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বড় ব্যতিক্রমী ঘটনা এবং এটি হবে ভারতের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চমক।
এখন যখন ভারতের নির্বাচনে একটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বা অনিশ্চয়তার ফলাফলের শঙ্কা জেগেছে তখন প্রশ্ন উঠছে যে, বিজেপি যদি এই নির্বাচনে পরাজিত হয় তাহলে বাংলাদেশে কী হবে? গত দুটি নির্বাচনে ভারতের বিজেপি সরকার বাংলাদেশকে নিরঙ্কুশভাবে সমর্থন দিয়েছে। ২০১৮ এবং ২০২৪ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে বিজেপি সরকার।
বিশেষ করে ২০২৪ এর নির্বাচনে ভারতীয় সরকারের পরিপূর্ণ সমর্থন ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করত এবং এই নির্বাচনকে অস্বীকৃতি জানাত বলেও অনেকে মনে করেন। মার্কিন মনোভাব পাল্টানোর ক্ষেত্রে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আর নির্বাচনের পর বিএনপি থেকে শুরু করে জাতীয় পার্টি প্রত্যেকেই বলছে যে, ভারত বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখেছে। যদিও এরকম অভিযোগকে আওয়ামী লীগ অস্বীকার করে এবং আওয়ামী লীগ মনে করে যে, জনগণের ভোটে তারা নির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি আওয়ামী লীগ বা বিজেপি কেউই অস্বীকার করে না।
এখন প্রশ্ন হল, যদি বিজেপি পরাজিত হয়, ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশের সমীকরণ কী হবে? কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বর্তমান সরকারের জন্য সমীকরণের কোন পরিবর্তন হবে না। কারণ ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গেও আওয়ামী লীগ সরকারের একটি সুসম্পর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যে ইন্ডিয়া জোটের প্রধান দল কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছে।
অনেকে মনে করেন যে, এখন ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী মনোভাবের কারণে সীমান্তে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য রাখা হচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশের মধ্যে একটা ভারতবিরোধী মনোভাব তৈরি হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যদি নরেন্দ্র মোদি তাহলে এই অবস্থানের পরিবর্তন হবে। দুই দেশের সম্পর্ক আরও বিকশিত হবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভারত লোকসভা নির্বাচন মল্লিকার্জুন খাড়গে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।