আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে কে জয়ী হবে কে হারবে সেটা এখন আর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। বরং এই নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে? আন্তর্জাতিক মহল এই নির্বাচনকে কতটুকু স্বীকৃতি দেবে সেটাই এখন বড় বিষয় হিসেবে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনে জয় পরাজেয়র চেয়ে আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা, স্বীকৃতির লড়াইটাই এখন মুখ্য হয়ে উঠেছে। নির্বাচনের আগেই তাই আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুই দলই নির্বাচনী কূটনীতিতে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে, তৎপরতা চালাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ মনে করে যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচন যেভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তা একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। কাজেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রশ্ন এখানে মুখ্য নয়। মুখে এ কথা বললেও আওয়ামী লীগ অত্যন্ত ভালোভাবে বিশ্বাস করে যে, এই নির্বাচনের প্রধান চ্যালেঞ্জ হল আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো শেষ পর্যন্ত এই নির্বাচনকে কীভাবে দেখে সেটি হল সবচেয়ে বড় দেখার বিষয়। আর এরকম বাস্তবতায় নির্বাচনের আগে থেকেই আওয়ামী লীগ এ ব্যাপারে প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক ব্যক্তি বলছেন যে, এই নির্বাচনের পরপরই সরকারের প্রধান লক্ষ্য হবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় এবং নির্বাচন যেন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয় সে ব্যাপারে সমর্থন আদায়।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, নির্বাচনের পরপরই সরকার এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশা করছে যে, ভারত এই নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেবে। নতুন বিজয়ী দলকে ভারতের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হবে। এটি আওয়ামী লীগের কাছে প্রত্যাশিত। শুধু ভারত নয়, নির্বাচনের পরপরই রাশিয়া এবং চীনেরও সমর্থন বিজয়ী দল এবং নতুন সরকার পাবে এবং এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে। এই তিনটি দেশ স্বীকৃতি দিতে খুব একটা দেরি করবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই তিনটি দেশের সমর্থন পেলেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা যে সঙ্কট তা কেটে যাবে। আন্তর্জাতিকভাবে অন্যান্য দেশগুলো স্বীকৃতি আদায়ের একটি অবস্থান তৈরি হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গেও নিবিড় ভাবে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে যে নির্বাচনের পরপরই সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশের বিজয় দলকে অভিনন্দন জানাবে এবং নির্বাচনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেবে।
নির্বাচনের স্বীকৃতি নিয়ে জটিলতা আছে শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলোর ক্ষেত্রে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, নির্বাচনের পরপরই ইউরোপীয় ইউনিয়নের অত্যন্ত প্রভাবশালী দেশ ফ্রান্স বাংলাদেশের নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেবে এমন একটি কূটনৈতিক তৎপরতা বেশ জোরালো ভাবেই চলছে। পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতি পেতে বাংলাদেশের খুব একটা সমস্যা হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিজয়ী দলকে অভিনন্দন জানাতে ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য খুব একটা বিলম্ব করবে না বলেই মনে করছে সরকারের নীতি নির্ধারক মহল। দেখার বিষয় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশগুলো জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা নির্বাচনের ব্যাপারে কী ভূমিকা পালন করে?
আর এই দেশগুলো যেন নির্বাচনকে স্বীকৃতি না দেয়, নির্বাচনের ব্যাপারে যেন নেতিবাচক অবস্থান গ্রহণ করে সেজন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে বিএনপি এবং তার লবিস্ট ফার্মগুলো। ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে বিএনপির লবিস্ট ফার্মগুলো যোগাযোগ করেছে। নির্বাচনের ত্রুটিগুলো তারা তুলে ধরেছে এবং এই নির্বাচনকে যেন স্বীকৃতি না দেওয়া হয়, সেজন্য তারা চেষ্টা তদবির অব্যাহত রেখেছে। পাশাপাশি জাতিসংঘেও বিএনপি নালিশ করেছে।
বিএনপির নেতারা মনে করছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ যদি নির্বাচনকে স্বীকৃতি না দেয় তাহলে পরে নতুন সরকার আন্তর্জাতিকভাবে বৈধ হবে না। তবে সরকারও বসে নেই। সরকারও জাতিসংঘ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা স্বীকৃতি আদায়ের জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখছে। নির্বাচনের পর এই কুটনৈতিক লড়াইয়ে কে জয়ী হয় সেটি একটি বড় বিষয় বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।