মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুই লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় লাভ করে বাঙালি। কিন্তু, এই বিজয় পূর্ণতা পায় ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি। কারণ, এদিনই যুদ্ধবিদ্ধস্ত স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর তাই এখনো প্রতি বছর ১০ জানুয়ারি দেশবাসী পালন করেন বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস।
দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হলেও বাঙালি জাতির মনে স্বস্তি ছিল না, বিজয়ের আনন্দ ছিল ম্লান। সবাই তখন অপেক্ষায়, সবার মনে প্রশ্ন- কবে ফিরবেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান?
১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়ার পর বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্ব নেতারাও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। এর ফলশ্রুতিতে পরাজিত পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী বন্দীদশা থেকে বঙ্গবন্ধুকে পূর্ণ সম্মান জানিয়ে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। জাতির পিতা পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি ভোর রাতে। এদিন বঙ্গবন্ধু ও ড. কামাল হোসেনকে পিআইয়ের একটি বিশেষ বিমানে তুলে দেয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তাঁরা পৌঁছান লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে। বেলা ১০টার পর থেকে তিনি কথা বলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দীন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে। পরে ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিমানে দেশের পথে যাত্রা করেন বঙ্গবন্ধু। লন্ডন থেকে রওনা হয়ে ১০ জানুয়ারি সকালে বঙ্গবন্ধু নামেন দিল্লীতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রিসভা, প্রধান নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য অতিথি ও সে দেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ সময় বঙ্গবন্ধু ভারতের নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের কাছে তাদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। ১০ জানুয়ারি বিজয়ীর বেশে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসেন বাঙালীর নয়নমণি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন বিজয়ের মালা পরে। সেদিন বাংলাদেশে ছিল এক মহোৎসবের আমেজ। বাঙালী জাতিও অতিআগ্রহে অপেক্ষায় ছিল কখন তাদের প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন দেশের মাটিতে পা রাখবেন। পুরো দেশের মানুষই যেন জড়ো হয়েছিল ঢাকা বিমানবন্দর এলাকায়। বিমানবন্দর থেকে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দান (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পর্যন্ত রাস্তা ছিল লোকারণ্য। অবশেষে বন্দীর নাগপাশ ছিন্ন করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বিজয়ের বেশে নামলেন বিমান থেকে। পা রাখলেন লাখো শহীদের রক্তস্নাত স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে। গোটা জাতি আত্মহারা হয়ে সেদিন স্লোগান দিয়েছিল ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে, যা আজ জাতীয় স্লোগানে পরিণত হয়েছে। ১০ জানুয়ারি বিকেল পাঁচটায় তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরের দিন বিভিন্ন পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি হয়, প্রকাশ পায় আনন্দের কান্নার চিত্র, খুশিতে আত্মহারা বাঙালির চিত্র। প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে ১০ জানুয়ারি সাড়ে সাত কোটি বাঙালী আনন্দাশ্রুতে সিক্ত হয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলে বাংলার আকাশ-বাতাস। সেদিন ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারব কিনা। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। রক্ত দিয়ে হলেও আমি বাঙালী জাতির এই ভালবাসার ঋণ শোধ করে যাব।’ তিনি কথা রেখেছেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোন আমলেই ঋণী ছিলেন না। ঋণী বাংলাদেশের মানুষ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এক ডাকে জড়ো হয়ে দেশ স্বাধীন করেছিল মুক্তিযোদ্ধারা। ঐতিহাসিক সেই দলিল এখন স্বর্ণাক্ষরে লেখা। বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের কাছে ঋণী, যে ঋণ শোধ হবে না কোনদিন। আর তাই, বছরের পর বছর শ্রদ্ধাভরে নত হবে জাতি, করবে সম্মান। এক সুরে বলবে, জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রত্যাবর্তন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জননিরাপত্তা বিভাগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিশ্বায়নের এ যুগে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী। এক দেশ থেকে আরেক দেশে নানা প্রয়োজনে ছুঁটছে মানুষ। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের অনেক তরুণ তরুণী উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমাচ্ছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। কেউ কেউ শিক্ষা জীবন শেষে দেশে ফিরলেও খাপ খাওয়াতে না পেরে ভুগছে হতাশায়। অনেকেই আবার উচ্চশিক্ষা থেকে থেকে যাচ্ছে বিদেশে। ফলে একদিকে যেমন মেধাবী শিক্ষার্থীদের হারাচ্ছি আমরা, অন্যদিকে তারাও দেশকে দিতে পারছেন না শিক্ষার ফসল।