নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ০১ এপ্রিল, ২০১৮
বেগম জিয়ার মুক্তি, আন্দোলন, নির্বাচন – এই তিন প্রশ্নে জিয়া পরিবারের সঙ্গে বিএনপি নেতৃবৃন্দের বিরোধ এখন প্রকাশ্য। দলের শীর্ষ নেতাদের বিশ্বাস করতে পারছেন না বেগম জিয়ার পরিবারের সদস্যরা। অন্যদিকে, দলের স্বার্থ না দেখে ব্যক্তি স্বার্থ দেখার অভিযোগ উঠেছে জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে। এইসব দ্বন্দ্ব বিএনপিকে শেষ পর্যন্ত ভাঙনের দিকেই নিয়ে যাবে বলে মনে করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম জিয়া গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে তিনি দলের দায়িত্ব তাঁর লন্ডনে পলাতক ছেলের উপর ন্যস্ত করে যান। কিন্তু বিএনপি নেতারা তাঁকে প্রকাশ্য নেতৃত্বে আনতে অস্বস্তি প্রকাশ করছে। বরং বিএনপিতে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কার্যকর নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। এটা বেগম জিয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। বিশেষ করে, দলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তারেক জিয়াকে অন্ধকারে রেখেই। তাছাড়া চট্টগ্রাম এবং খুলনার জনসভায় তারেক জিয়া বক্তব্য রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে আইনগত সমস্যার কথা বলে বক্তৃতা দেওয়া থেকে বিরত রাখা হয়। ক্ষুব্ধ তারেক জিয়া এরপর জানিয়ে দেন ‘ আপনারাই দল চালান ।‘
বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইমেজ সংকট এবং আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণেই তাঁরা তারেক জিয়াকে সামনে আনতে পারছেন না। একজন বিএনপি নেতা বলেছেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন গ্রেপ্তার হবার পর আমরা কূটনীতিকদের সঙ্গে দুটি বৈঠক করেছি। দুটিতেই তারেক জিয়াকে নিয়ে নেতিবাচক কথা হয়েছে। তাছাড়া হাইকোর্টের একটি আদেশে তারেক জিয়ার বক্তৃতা, বিবৃতি প্রচারে আইনগত নিষেধাজ্ঞা আছে এমন বক্তৃতা বিবৃতি দিলে বিএনপির উপরই খড়গ নেমে আসতে পারে।
বেগম জিয়া মুক্তি নিয়েও বিএনপি নেতৃবৃন্দ এবং জিয়া পরিবারের মধ্যে মতবিরোধ তুঙ্গে। বিএনপির নেতৃবৃন্দ চায় বেগম জিয়ার মুক্তি এবং বিদেশ যাত্রার আগে কিছু বিষয় সরকারের সঙ্গে রফা করতে। যেমন: বিএনপির আটক নেতা কর্মীদের মুক্তি, নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ইত্যাদি। কিন্তু জিয়া পরিবার মনে করছে, বেগম জিয়াকে জিম্মি করে বিএনপির দাবি আদায়ের কৌশল নিয়েছে। এটা ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলেছেন জিয়া পরিবারের সদস্যরা। জিয়া পরিবার চাইছে, আগে বেগম জিয়া মুক্তি নিয়ে বিদেশে যাক, তারপর দাবি দাওয়া দেখা যাবে। কিন্তু বিএনপি নেতারা বলছেন, একবার বেগম জিয়া বিদেশে চলে গেলে, সরকার তাদের কোনো কথাই শুনবে না। বিএনপি নেতাদের এরকম মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে জিয়া পরিবারের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। তারা মনে করছেন, বিএনপি নেতাদের অনীহা এবং আন্তরিকতার অভাবেই বেগম জিয়ার জামিন হয়নি।
আন্দোলনের কৌশল নিয়েও জিয়া পরিবারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের মতবিরোধ রয়েছে। তারেক জিয়া এবং জিয়া পরিবারের সদস্যরা চাইছিলেন জেলগেট কেন্দ্রীক কর্মসূচি। যেমন কারাগারের সামনে অবস্থান, কারাগারের সামনে অনশন। কিন্তু সরকারের অনুমতি পাওয়া যায়নি, এই অজুহাতে বিএনপি নেতারা কারাগারের সামনে কোন কর্মসূচী দেয়নি। জিয়া পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ঢাকাতেও তো জনসভার অনুমতি সরকার দেয়নি। কিন্তু কর্মসূচি তো ঘোষণা করা হয়েছিল। বিএনপি গা বাঁচাতেই এবং সরকারের সঙ্গে দেন-দরবার করতেই এভাবে সমঝোতার কর্মসূচি নিচ্ছে।
বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়া পর্যন্ত বিএনপি নেতারা মেনে নিয়েছিল। কারণ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাঁরা দু’জন বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা। কিন্তু বেগম জিয়া গ্রেপ্তারের পর তাঁর ভাই, বোন এবং সবশেষে প্রয়াত কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান দলের খবরদারি করছেন। একাধিক বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলছেন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এরা বিএনপির কেউ নন। তাহলে কেন এরা দলের কাজে নাক গলাবেন?
এসব পরিস্থিতির কারণে না হচ্ছে আন্দোলন, না হচ্ছে বেগম জিয়ার মুক্তি। এ অবস্থায় দলে বাড়ছে হতাশা এবং অবিশ্বাস। একটি দল ভাঙার জন্য এই দুটি উপাদানই যথেষ্ট।
Read In English: https://bit.ly/2H14n9g
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।