ঢাকার ইতিহাসে
একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ দখল করে আছে বাকরখানি। একসময় এটি পুরান ঢাকার জনপ্রিয় খাবার থাকলেও
এখন পুরো ঢাকা শহর জুড়েই পাওয়া যায় এই খাবার। ঢাকার অলি-গলিতে প্রায়ই চোখে পড়ে দোকানে
বসেই বাকরখানি তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা। আর তাদের সামনে সাজিয়ে রাখা আছে বিভিন্ন পদের
সারি সারি বাকরখানি।
তবে প্রসিদ্ধ
এই বাকরখানির ইতিহাসের পেছনেও রয়েছে করুন এক কাহিনী। নাজির হোসেনের লেখা 'কিংবদন্তীর
ঢাকা' বই থেকে জানা যায়, তুরস্কের অধিবাসী তরুণ আগা বাকের ভাগ্যের অন্বেষণে এসেছিলেন
ভারতবর্ষে। তখন বাংলার মসনদে আসীন মুর্শিদকুলি খাঁ। নিজের যোগ্যতায় মুর্শিদকুলি খাঁর
সেনাবাহিনীর উচ্চপদে আসীন হন তিনি। সে সময়ের বিখ্যাত গায়িকা ও নৃত্যশিল্পী খনি বেগমের
সঙ্গে মন দেওয়া-নেওয়া হয়েছিল আগা বাকেরের। কিন্তু উজিরে আলা জাহান্দর খাঁর পুত্র জয়নুল
খাঁর দৃষ্টি পড়ে খনি বেগমের ওপর। এ নিয়ে বাকেরের সঙ্গে লড়াই বেঁধে যায় তার। খনি বেগমকে
অপহরণ করে চন্দ্রদ্বীপে পালিয়ে যান জয়নুল। খনি বেগমকে মুক্ত করতে ছুটে যান বাকের। তার
তরবারির আঘাতেই মৃত্যুর দ্বারে পৌঁছে যান জয়নুল খাঁ। কিন্তু যাওয়ার আগে ছুরি বসিয়ে
দেন খনি বেগমের বুকে। মৃত্যু হয় খনি বেগমের।
শোকে পাগলপ্রায়
বাকের সেখানেই থাকতে শুরু করেন। এরপর এক সময় উমেদপুরের জমিদারি লাভ করেন তিনি। তার
নামেই বর্তমান বরিশাল জেলার নামকরণ করা হয়েছিল বাকেরগঞ্জ। তবে খনি বেগমের স্মৃতি কখনোই মন থেকে মুছে ফেলতে
পারেননি বাকের। তাই তার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত রুটি ধরনের খাবারটির নাম রাখেন
'বাকের-খনি'। সেটি কালক্রমে পরিচিত হয় বাকরখানি নামে।
সময়ের আবর্তনে
অনেক বিখ্যাত খাবার হারিয়ে গেলেও এখোনো ঢাকাবাসীর কাছে আগের মতই জনপ্রিয় এই বাকরখানি।
বাকরখানি তৈরির কারিগরেরা এখোনো ধরে রেখেছেন প্রসিদ্ধ এই খাবারের নিখুত নির্মাণশৈলী।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে
নবদাহ হাউসিং-এর কোল ঘেঁষে রয়েছে পুরোনো এক বাকরখানির দোকান। বাংলা ইনসাইডারের সাথে
কথা বলেন দোকানের কারিগর সেলিম রেজা। তিনি বলেন, আগে বাকরখানির যেমন চাহিদা ছিল, সেটা
এখনো আছে। আর এটার মধ্যে ক্ষতিকর কিছু না থাকায় সব ধরণের মানুষই পছন্দ করে।
ঢাকার বাকরখানি
এতটাই আন্তর্জাতিক প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল যে ঢাকা ছাড়াও সমগ্র হিন্দুস্তানেই পাঠানো
হত এই খাবার। ঐতিহ্যের সে ধারা বজায় রেখে এখনও পুরান ঢাকার বিখ্যাত এই বাকরখানি যাচ্ছে
কুয়েত, শ্রীলঙ্কা, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
বাকরখানি পুরান ঢাকা করুণ প্রেম কাহিনী জনপ্রিয় খাবার খনি বেগম মুর্শিদকুলি খাঁ আগা বাকের
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।