মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে আজ আবার বাংলাদেশ প্রসঙ্গটি এসেছে। পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার হয়রানির নিন্দা জানিয়েছেন। একই সাথে তিনি এই রাজনৈতিক কারণে আটক নেতাকর্মীদেরকে হয়রানি না করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। যথারীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশের ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার যখন এই বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন ইমরান খানকে একটি গোপন নথি ফাঁসের মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। ইমরান খান যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করতে পারে সে জন্যই এই রায় দেওয়া হয়েছে বলে সেখানকার আইনজীবীরা প্রশ্ন তুলেছেন।
গত কয়েকমাস ধরেই ইমরান খান এবং তার রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে ফেলার জন্য নানা রকম প্রচেষ্টা চলছে। চলছে হয়রানি, গ্রেপ্তার এবং এমন অদ্ভুত সব মামলা দেওয়া হচ্ছে, যা সভ্য দেশে কল্পনার অতীত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের এই সমস্ত গ্রেপ্তার, হয়রানি এবং ইমরান খানের বিরুদ্ধে নিপীড়নের ব্যাপারে নীরব। আবার বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে যখন বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তখন তাকে বলছে, রাজনৈতিক হয়রানি।
প্রশ্ন উঠেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই দ্বৈত অবস্থান কেন? বাংলাদেশে গত ২৮ অক্টোবর থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সহিংস রাজনীতি শুরু করে। তারা ২৮ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করে। হাসপাতাল ভাঙচুর করে, একজন পুলিশ কনস্টেবলকে বেধড়ক ভাবে পেটাতে।
২৮ অক্টোবর থেকে নির্বাচন পর্যন্ত সময়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা বহু বাসে আগুন লাগায়। দুটি ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করে এবং মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে। এ ধরনের ঘটনাগুলো কোন ভাবে রাজনৈতিক ঘটনা নয়। বরং এই ধরনের ঘটনাগুলো সুনির্দিষ্টভাবে সন্ত্রাসী তৎপরতা। আর এই সন্ত্রাসী তৎপরতার জন্য যাদেরকে আইনের আওতায় আনা উচিত, তাদেরকে আইনের আওতায় এনে আইন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট মামলায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই সমস্ত মামলাগুলো আবার যে দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে এমনটা নয়। স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়ায় এই মামলাগুলো এগোচ্ছে। কিন্তু পাকিস্তানের ঘটনাটি সম্পূর্ণ বিপরীত। পাকিস্তানে পাকিস্তানে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদে। এমনকি ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর তিনি যেন আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় না আসতে পারে সেজন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রভাব বিস্তার করছে এটি মার্কিন গণমাধ্যমের খবর। ইমরান খানের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পর সেখানে নির্বাচন পেছানো হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আজ্ঞাবহ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এই তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি দায়িত্ব যেন এমরান খান ক্ষমতায় না আসতে পারেন।
প্রশ্ন উঠেছে, ইমরান খানের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন এরকম কঠোর অবস্থানে গেছে? এর কারণ হলো, ইমরান খান মার্কিন আধিপত্য স্বীকার করেনি। তিনি স্বাধীন কূটনীতিতে বিশ্বাস করতেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে তিনি চীনের সঙ্গে সখ্যতা গড়তে চেয়েছিলেন। আর এ কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইমরান খানকে হঠাতে মরিয়া। ইমরান খানকে বিভিন্ন মামলায় জেল দেওয়া, তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে নিশ্চুপ। আর এখানেই বোঝা যায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকারের কথা, তাদের গণতন্ত্রের কথা, স্রেফ কথার কথা। কারণ, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান দুটি দেশের চিত্র পাশাপাশি দাড় করালেই বোঝা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈতনীতি, যা নিজের স্বার্থেই পরিচালিত।