বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে ১৯৫২ সালের
ভাষা আন্দোলন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালের শুরু
থেকেই এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান। ১১ মার্চ
১৯৪৮ তৎকালীন পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘বাংলা ভাষা দাবি দিবস’ পালনের
কর্মসূচি থেকে প্রথমবার গ্রেফতার হন। এরপরই ভাষা আন্দোলনে গতি সঞ্চারিত হয়। এরপর রাষ্ট্রভাষা
বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত দিন ঘনিয়ে আসে। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে
রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ দিয়ে রচিত হয় বাংলা ভাষার উত্থানের ইতিহাস।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের অমূল্য যে দলিলগুলো
রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ‘তাজউদ্দীন আহমদের ডায়েরি’। ৫২’র ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত যেভাবে
হয়েছিল তার পরিপূর্ণ চিত্র পাওয়া যায় এই ডায়েরি থেকে যা বাংলার মানুষ তথা ইতিহাসে অত্যধিক
গুরুত্বপূর্ণ পরিগণিত হয়। মহান ভাষা আন্দোলনের মাসে তাই বাংলা ইনসাইডারে হুবহু প্রকাশিত
হচ্ছে তার লেখা ভাষা আন্দোলনের সেই দিনগুলোর চিত্র। তাজউদ্দীন আহমদ ইংরেজি ভাষায় লিখলেও
বাংলায় অনুদিত হওয়া তা পাঠকের আগ্রহ বিবেচনা করেপ্রকাশ করা হলো-
‘শুক্রবার
১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২
ভোর রাড়ে ৫টায় উঠেছি।
নাস্তা খাওয়ার জন্য সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আড়ালের
উদ্দেশে সাইকেলে দিগধা ছাড়লাম। মাদুলির মধ্য দিয়ে পৌঁছলাম দুপুর ১২টার দিকে। আমার গোসল
ও দুপুরের খাবারের পর সেখানে মফিজউদ্দিন মাস্টারের সাহেব রমিজউদ্দীনকে সঙ্গে নিয়ে পৌঁছলেন।
মির্জানগর জুনিয়র মাদ্রাসার সামনে সভায় যোগ
দিলাম। মওলানা আজিজ সভাপতিত্ব করলেন। আসর নামাজের পর বিকাল সাড়ে ৪টায় সভা শুরু হলো।
মাগরিব নামাজের আগে মফিজউদ্দীন সাহেব, চরমনোহরদীর আবদুল হাকিম, হেলাল উদ্দিন ও জুনিয়র
মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক বক্তৃতা করলেন।
আমি বক্তব্য রাখলাম সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিট
থেকে ৭টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত। আমি তুলে ধরলাম যোগাযোগের মতো স্থানীয় সমস্যাগুলো। সমালোচনা
করলাম শিক্ষানীতি ও সরকারের অন্যান্য কর্মকাণ্ডের, যা জনগণের জন্য দুর্ভোগ বয়ে এনেছে।
কথা বললাম ইরান, মিসর ও কাশ্মীর প্রসঙ্গে এবং কয়েকটি প্রস্তাব উত্থাপন করলাম, যার সব
ক’টিই পাস হয়ে গেল।
সভাপতির ভাষণের পর রাত ৯টায় সভার সমাপ্তি
ঘটল। মাদ্রাসার উন্নয়নের জন্য একটি কমিটি গঠিত হলো। সভায় লোকজনের উপস্থিতি ছিল প্রায়
৩ হাজার। এরপর আড়ালে ফিরে এলাম। মফিজ সাহেব রমিজউদ্দীন প্রমুখ আড়ালে আমার সঙ্গে রয়ে
গেলেন।
ঘুমোতে গেলাম রাত সাড়ে ১১টায়।
আবহাওয়া: আগের মতোই। দুপুরে সূর্য বসন্তকালের
প্রকৃতি ধারণ করেছিল।’
চলবে…….
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নতুন সরকার বাজেট ঘোষণা জাতীয় সংসদ
মন্তব্য করুন