কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে না পড়ায় এবার রাজশাহী অঞ্চলে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলনের সঙ্গে আলুর দামও বেশ ভাল। এতে হাসি ফুটেছে রাজশাহীর আলু চাষিদের মুখে। চাষিরা বলছেন, এবার আলুর বাম্পার ফলন সাথে দাম ভাল। দুই মিলে তারা এবার লাভের মুখ দেখবেন। আর এই দাম না থাকলে চাষিদের মাথায় হাত পড়বে।
চাষিদের বক্তব্য অনুযায়ী, গত অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আগাম জাতের আলু বীজ রোপণ শুরু হয়। ৬৫-৭০ দিনে আগাম জাতের এ আলুর ফলন হয় ৪৫-৫০ মণ প্রতিবিঘায়। তারপর জমি থেকে আলু তুলে হাটে ও বাজারে বিক্রি শুরু হয় আগামজাতের আলু। আমন ধান কেটে নামলা জাতের (পরে লাগানো) আলুর উৎপাদন বিঘা প্রতি ৮০ মণ থেকে ৯০ মণ পর্যন্ত ফলন হয়ে থাকে। দাম ভালো পাওয়ায় আগাম জাতের আলুতে কৃষককে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে না
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলায় এ বছর আলুর চাষ হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে। আর গত বছর আলুর চাষ হয়েছিল ৩৬ হাজার ৬৫১ হেক্টর জমিতে। তবে গত বছরের তুলনায় এই বছর আলুর চাষ ১ হাজার ৬৯৬ হেক্টর কমেছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ লাখ ২৬ হাজার ২১৩ মেট্রিক টন।
রাজশাহীতে চাহিদার কয়েকগুণ আলু উৎপাদন হয়। এ কারণে যোগানে তেমন কোনো ঘাটতি হবে না বলে জানিয়েছে কৃষি দপ্তর।
তানোর উপজেলার চাঁনপুর এলাকার কৃষক আক্কাস আলী জানান, তার নিজের ১০ বিঘা জমিতে ডায়মন্ড জাতের আগাম আলুর বীজ চাষ করেছেন। বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে ৬৫ মণ। তিনি বর্তমান বাজারে ২৩ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করছেন। ফলে তার বিঘাপ্রতি লাভ পাচ্ছেন ২০-২৫ হাজার টাকা।
তানোরের আলু চাষি কামরুল ইসলাম বলেন, প্রতি বিঘায় আলু উৎপাদনের খরচ বাদ দিয়ে কয়েক সপ্তাহ আগে যে দামে বিক্রি হয়েছে তাতে গড়ে ২০-২৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে এই অঞ্চলের কৃষকরা ৫২ টাকা কেজি দরেও আলু বিক্রি করেছেন। এখন প্রতি কেজি আলু ২৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ২৩ টাকা দরে বিক্রি করেও ভালো লাভ থাকছে।
তানোর উপজেলার চাঁনপুর এলাকার কৃষক মামুন অর রশিদ জানান, এ বছর ৪ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন তিনি। প্রতি বিঘায় আলু পেয়েছেন ৫০ মণ। তবে এই আলু আরও ৩০ থেকে ৩৫ দিন পরে জমি থেকে তুললে ৬০ থেকে ৬৫ মণ পাওয়া যেত। সেসময় এখনকার মত দাম নাও পাওয়া যেতে পারে, তাই আগাম আলু তুলে বাজারজাত করছেন তারা।
কৃষক আক্কাস আলী জানান, ১০ বিঘা জমিতে ডাইমন্ড জাতের আলু চাষ করেছেন তিনি। বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে ৬০ মণ। তার দাবি, প্রথম দিকে আলুর দাম ভালো ছিল। তখন বাজারে ৫০ থেকে ৫২ টাকা প্রতি কেজি আলু বিক্রি করেছেন। বর্তমানে প্রতি কেজি আলু ৩০ থেকে ৪০ টাকা। তাদেরকে আরও কম দামে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে হয়। সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন
উপজেলা ঘুরে ও চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ব্যস্ত সময় কাটাছে আলু তোলা শ্রমিক, চাষি ও ব্যবসায়ীরা। অন্য বছরের ন্যায় এবারো জমি থেকে আলু তোলাকে কেন্দ্র করে পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকদের কাজের সুযোগ হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে আলুর উৎপাদনের খরচ বাদ দিলে লাভ থাকবে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। মৌসুমের শুরুতে এই অঞ্চলের কৃষকরা ৫০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করেছেন। এখন প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে।
প্রথম দিকে জমি থেকে আলু আগাম তোলায় উৎপাদন কম হয়েছিল। তবে দাম বেশি হওয়ায় তাতে কৃষকরা লাভবান হয়েছেন। বর্তমানে আলুর দাম কম বলছেন তারা। গত বছরের তুলনায় এ মৌসুমে আলু উৎপাদনের খরচ বেড়েছে অনেক বেশি।
রাজশাহী নগরীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে খুচরায় ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। নগরীর মির্জাপুর এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বিনোদপুর বাজারে আলু কিনতে এসে জানান, কৃষকরা বলছেন দাম নেই। ব্যবসায়ীরা বলছে বেশি দামে কিনে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। তাহলে ক্রেতারা কি বলবে?
ব্যবসায়ীরা যে দামে ক্রেতাদের আলু খাওয়াচ্ছেন ক্রেতারা বাধ্য হয়ে সেই দামেই খাচ্ছেন। এখানে আমাদের কিছু করার নেই বাজার মনিটরিং দরকার।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন জানান, জেলার বাগমারা ও তানোর উপজেলার কৃষকরা আগাম আলুর চাষ বেশি করে থাকেন। প্রচন্ড ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশার কারণে আলুর উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কিন্ত আগাম আলু চাষ করে কৃষক দামও ভালো পাচ্ছেন। এবার আশা করা যাচ্ছে- আলুতে লোকসান হবে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মোজদার হোসেন আলু চাষ কৃষক
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।