সাভারের
আশুলিয়া থেকে লাশ উদ্ধার
হওয়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থী আবির মাশরুরের (২৫)
মৃত্যু ঘিরে রহস্য তৈরি
হয়েছে। পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদনে ‘প্রাথমিক তদন্তে ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে পাঁচতলা ভবনের ছাদ থেকে লাফ
দিয়ে মারা গেছেন’ উল্লেখ
করা হলেও মানতে পারছেন না পরিবারের
সদস্যরা। স্বজনদের দাবি, পরিকল্পিতভাবে আবিরকে হত্যার পর আত্মহত্যা বলে
চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
গত বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে আশুলিয়ার খাগান
এলাকায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-সংলগ্ন একটি পাঁচতলা ভবনের
নিচ থেকে আবিরের লাশ
উদ্ধার করা হয়। ওই
ভবনের ছাদ থেকে পড়ে
আবির মারা যান বলে
জানা গেছে। এ ঘটনায় সাভার
মডেল থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা
হয়েছে। আবিরের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা
করতে চাইলেও থানা থেকে স্বজনদের
বলা হয়েছে, তদন্তে হত্যার বিষয়টি উঠে এলে অপমৃত্যুর
মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে গণ্য হবে।
রাজধানীর
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সি ব্লকের একটি
বাসায় থেকে পড়াশোনা করতেন
নিহত আবির। আবির বগুড়া শহরের
লতিফপুর কলোনি এলাকার অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক মিজানুর রহমানের ছেলে। বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তার বাড়িতে গিয়ে
দেখা গেছে, মাতম চলছে। ছেলের
প্রসঙ্গ তুলতেই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলেন
তিনি। কিছুক্ষণ পর বলেন, ‘আবির
আত্মহত্যা করেনি। আত্মহত্যা করার মতো কোনো
ঘটনাই ঘটেনি। এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
আমরা চাই, আবিরের মৃত্যুর
রহস্য পুলিশ উদ্ঘাটন করুক।’
মিজানুর
বলেন, ‘আবির গত কয়েক
মাস বাড়িতেই ছিল। ২ ফেব্রুয়ারি
চাকরির ইন্টারভিউ দিতে ঢাকা গিয়েছিল।
সাভারে পরিচিত কয়েকজন থাকায় ১৫ ফেব্রুয়ারি খাগান
এলাকায় যায়। পরে জানতে
পারি, রাতে নাকি ছাদ
থেকে লাফিয়ে পড়ে সে মারা
গেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা
পুলিশের কাছ থেকে ওই
রাতের সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছি। আবির রাত একটার
দিকে নিচতলার ফ্ল্যাট থেকে বাসার কেচিগেট
দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা
করে। গেট বন্ধ থাকায়
বের হতে পারেনি। পরে
নিচতলার আরেকটি ফ্ল্যাটের সামনে যায়। এরপর দ্রুত
সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে
চলে যায়। আমাদের মনে
হচ্ছে এটা হত্যা। আমরা
চাই, এ ঘটনার সুষ্ঠু
তদন্ত হোক।’
আবিরের
বন্ধুরা জানান, খাগান এলাকায় ওই ভবনের নিচতলার
একটি ফ্ল্যাটে তাঁরা চারজন থাকেন। সবাই ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল
ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে দুজনের বাবা পুলিশ কর্মকর্তা।
তাঁরা আবিরের পূর্বপরিচিত। এ ছাড়া ২০১৮
সাল থেকে আবির জাহাঙ্গীরনগর
বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর বন্ধুদের কাছে
আসতেন। বগুড়ায় কলেজে থাকতে একই কলেজের বান্ধবীর
সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। ওই শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীরনগরে
পড়েন।
জাহাঙ্গীরনগর
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবিরের বাল্যবন্ধু ফাহিম ফয়সাল বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, রাত
১টা ৫ মিনিটে আবির
যখন ফ্ল্যাট থেকে বের হন,
তখন তাঁর চেহারায় আতঙ্কের
ছাপ ছিল। আবির যখন
গেটের কাছে যান, তখন
পেছনে ওই ফ্ল্যাটের ফাহমিদুলকে
দেখা যায়। আবির সিঁড়ি
দিয়ে ওপরে ওঠার সময়
ফাহমিদুল তাঁকে থামানোর চেষ্টা করে। পরে ফাহমিদুল
ফ্ল্যাটের দরজার সামনে গিয়ে কিছু একটা
বললে ভেতর থেকে দুজন
বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে
ওপরে ওঠেন। এরপর ফুয়াদ ওপরে
উঠে ১০-১২ সেকেন্ডের
মধ্যে মাথায় হাত দিয়ে নিচে
নেমে আসেন।
ফাহমিদুল
ইসলাম বলেন, ‘ওই দিন রাত
সাড়ে ৯টার দিকে আবির
ভাই আমাদের বাসায় আসেন। সাড়ে ১১টা পর্যন্ত
আমাদের সঙ্গে গল্প করেন। এরপর
ভাই (আবির) পাশের কক্ষে একা একা কিছুক্ষণ
থাকেন। একসময় ভাই বের হয়ে
কারও কাছে ব্যালেন্স (ফ্লেক্সিলোড)
হবে কি না, জানতে
চান। বন্ধু তালহার মাধ্যমে ৫০ টাকা ব্যালেন্স
দিই ভাইয়ের নম্বরে। এরপর আবার পাশের
কক্ষে গিয়ে তিনি কথা
বলেন। এরপর তিনি বাসার
বাইরে যেতে চান। আমিও
পেছনে পেছনে যাই। গেট বন্ধ
থাকায় দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে ছাদে যান
আবির ভাই। আমি থামানোর
চেষ্টা করি। পরে ফ্ল্যাটের
অন্যদের ডাকি। তিনি ছাদ থেকে
লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।’
আবিরের
ফোনের কল রেকর্ড থেকে
জানা যায়, বৃহস্পতিবার দিবাগত
রাত ১২টা ৫৩ মিনিটে
তাঁর ফোনে ফ্লেক্সিলোড করা
হয়েছে। এ ছাড়া রাত
১টা ১ মিনিটে এবং
১টা ৩ মিনিটে কল
রেকর্ড পাওয়া যায়। নম্বরটি তাঁর
বান্ধবীর। এরপরই ঘটনাটি ঘটে।
আবিরের
বান্ধবী বলেন, ‘ঘটনার রাতে আমি দুবার
তাঁকে কল দিয়েছিলাম। দুবারই
রিসিভ করে; কিন্তু কোনো
কথা বলে নাই। কয়েক
সেকেন্ড কোনো কথা না
বলায় আমি দুবারই কেটে
দিয়েছি। পরে রাত তিনটার
দিকে তাঁর (আবির) বাবা আমাকে ঘটনাটি
জানান। আমাদের কোনো ঝামেলা হয়নি।
সে তো বলেছিল ভালোবাসা
দিবসে দেখা করতে না
পারায় আমাকে সারপ্রাইজ দেবে।’
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান বলেন, এ ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। পুলিশের তদন্ত চলছে। তদন্তে কারও সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেলে সেই অনুযায়ী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নর্থ সাউথ. শিক্ষার্থী মৃত্যু রহস্য স্বজন আবির হত্যা
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রথম পর্যায়ের উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত। ১৫০টি উপজেলায় এখন জনগণ ভোটের অপেক্ষায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৫৯টি উপজেলায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন গতকাল শেষ হয়েছে। সেখানেও এখন নির্বাচনী প্রচারণার ডামাডোল শুরু হয়েছে। কিন্তু উপজেলা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হবে কি না, উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে কি না এবং উপজেলা নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে কি না তা নিয়ে একদিকে যেমন জনগণের সংকট রয়েছে তেমনই নির্বাচন কমিশনও এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত।
লক্ষ্মীপুর সদরের তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরপরই হামলার শিকার হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নেপথ্যে নির্বাচনে কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ। এঘটনায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী দুই প্রার্থীকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখসহ ৯১১ জনের বিরুদ্ধে দুইটি মামলাও দায়ের করেন। ফলে নির্বাচনের পর আনন্দের বদলে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে ওই ইউনিয়নে।