মাত্র
দুজন কর্মী নিয়ে শুরু করেছিলেন
যাত্রা, এখন সেখানে কাজ
করেন তিন শতাধিক কর্মী।
প্রথম দিন অর্ডার আসে
মাত্র বিশ কেজির, কিন্তু
বর্তমানে দৈনিক বেচাকেনা প্রায় ৮০ হাজার কেজি।
বলছিলাম, কৃষিপণ্য বিক্রির ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম
ফসল ডটকমের কথা।
এই প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা সাকিব হোসাইন। পরে মো. মামুনুর
রশীদকে অংশীদার বানিয়ে নেন। প্রথম তিন
মাস সাকিব ও মামুনুর নিজেরাই
কৃষিপণ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে
মোড়কজাত ও খুচরা বিক্রেতাদের
কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছেন।
২০২১
সালের জানুয়ারি মাসে স্বল্প পরিসরে
যাত্রা শুরু হয় এই
প্রতিষ্ঠানের। বর্তমানে ১১ হাজারের বেশি
কৃষকের উৎপাদিত সবজি কিনে নিজস্ব
পরিবহনে ঢাকার সব কাঁচাবাজারে সরবরাহ
করছে সাকিবের হোসাইনের এই উদ্ভাবনী উদ্যোগটি
(স্টার্টআপ)।
উদ্যোক্তা
হিসেবে সাকিবের যাত্রা শুরু হয় ২০১২
সালে। তখন তিনি সপ্তম
শ্রেণিতে পড়তেন, বয়স মাত্র ১২
বছর। এক বন্ধুর বড়
ভাই ছিলেন মেরিন প্রকৌশলী। চীন থেকে তিনি
সাকিবকে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্য এনে দিতেন।
ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে সেগুলো বিক্রি
করা হতো। এ কাজের
পাশাপাশি তিনি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং
শেখেন। সফটওয়্যার ও অ্যাপ তৈরি
করতে তাঁর ভালো লাগত।
২০১২ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত
তিনি অনলাইনে ইলেকট্রনিক পণ্য বিক্রি করতেন।
২০১৫
সালে দশম শ্রেণিতে পড়ার
সময় সাকিব প্রিন্ট ভ্যালি নামে আরেকটি উদ্যোগ
শুরু করেন। এই উদ্যোগের কাজ
ছিল ছাপাখানা ও গ্রাহকদের একটা
অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা। যে
বিশেষ সফটওয়্যারে এটি চালানো হতো,
সেটিও তাঁর বানানো। ২০১৭
পর্যন্ত চলে প্রিন্ট ভ্যালি।
মাসে তখন বিক্রি হতো
তিন–চার লাখ টাকার
পণ্য।
২০১৭
সালের শেষ দিকে সাকিব
আলাদিন কিডস নামের একটি
প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। ওখানে
তিনি বিপণন বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিষ্ঠানটি
পরবর্তী সময়ে শিশুদের জন্য
অনলাইনে একটি বড় বাজার
হিসেবে গড়ে ওঠে।
ফসল
ডটকমের প্রধান কার্যালয় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে। ১৪টি জেলায় রয়েছেন
পণ্য সংগ্রহ কেন্দ্র। এই কেন্দ্রগুলো থেকে
কৃষকদের কাছ থেকে নগদ
অর্থে পণ্য কেনা হয়।
করোনা
মহামারির সময়ে সাকিবের ভাবনায়
কৃষকদের নিয়ে কাজের আগ্রহ
জাগে। গ্রাম ও শহরে কৃষিপণ্যের
দামে বিস্তর পার্থক্য দেখে সিদ্ধান্ত নেন
এটা নিয়ে কাজ করবেন।
সাকিব দেখলেন পাঁচ টাকা পরিবহন
খরচ বাড়ার অজুহাতে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে
৩০ থেকে ৩৫ টাকা।
ঢাকার কারওয়ান বাজার এবং কাপ্তান বাজারে
মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত
ঘুরতেন তিনি।
ঢাকার
পাইকারি বাজার দেখার পর ২০২০ সালের
সেপ্টেম্বর–অক্টোবর মাস পর্যন্ত চষে
বেড়ান বাংলাদেশের ৩৮টি জেলা। সরাসরি
কথা বলেন নানা পর্যায়ের
সাত শতাধিক কৃষকের সঙ্গে। বোঝার চেষ্টা করেন কৃষিপণ্যের সরবরাহপ্রক্রিয়া
কীভাবে কাজ করে। সাকিব
খেয়াল করেন, কৃষকেরা তাঁদের পণ্যের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না।
অন্যদিকে বাজারে ক্রেতা চড়া দামে পণ্য
কিনছেন। সাকিব ভাবলেন, তিনি যদি ন্যায্যমূল্যে
কৃষকের সব পণ্য কিনে
ফেলতে পারেন, তাহলে তাঁদের অবস্থার পরিবর্তন করা সম্ভব। সেই
চিন্তা থেকেই ফসল ডটকমের জন্ম।
২০২০
সালের শেষ দিকে ফসল
ডটকমের কার্যক্রম শুরু করেন সাকিব।
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন ২০২১ সালের
জানুয়ারিতে। বর্তমানে ১১ হাজারের বেশি
কৃষকের উৎপাদিত সবজি কিনে নিজস্ব
পরিবহনে ঢাকার সব কাঁচাবাজারে সরবরাহ
করছে সাকিবের হোসাইনের এই উদ্ভাবনী উদ্যোগটি
(স্টার্টআপ)।
এ বিষয়ে ফসল ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা
২৪ বছর বয়সী সাকিব
বলেন, ‘পৃথিবীর যত বড় বড়
স্টার্টআপ কোম্পানি রয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগই কোনো একটা
সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমাদেরও একটা সমস্যা থেকে
“ফসল”–এর ধারণা মাথায়
আসে। সমস্যাটা হলো কৃষকের ন্যায্য
দাম না পাওয়া। এর
সমাধানে প্রচলিত ব্যবস্থা থেকে সরে এসে
উদ্ভাবনী কিছু করার চেষ্টা
করেছি।
সাকিব
হোসাইন বলেন, প্রথম দিন মাত্র ৫
কেজি বেগুন আর ১৫ কেজি
পটল—মোট ২০ কেজি
সবজির চাহিদা (অর্ডার) এসেছিল। কিন্তু তিন বছরের ব্যবধানে
বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে আমাদের এই
ওয়েবসাইট থেকে বিক্রি হয়
প্রায় ৮০ হাজার কেজি
(৮০ টনের বেশি) সবজি।
তিনি
আরও জানান, এছাড়াও শুরুতে আমাদের মাত্র দুজন কর্মী ছিলেন,
এখন সেখানে প্রতিদিন তিন শতাধিক কর্মী
কাজ করেন। ফসল ডটকমে যে
কৃষকেরা পণ্য সরবরাহ করেছেন,
তাঁরা প্রচলিত বিপণনব্যবস্থার চেয়ে বেশি আয়
করেছেন। পাঁচ হাজারের বেশি
খুচরা দোকানদার যুক্ত হয়েছেন আমাদের এই প্ল্যাটফর্মটিতে।
ঢাকার
বিভিন্ন কাঁচাবাজারে ফসল ডটকমের বিক্রয়কর্মীরা
প্রতিদিন পণ্যের চাহিদা গ্রহণ করেন। সে অনুযায়ী ভোর
পাঁচটার মধ্যে নিজস্ব পরিবহনে পণ্য পৌঁছে যায়
খুচরা বিক্রেতার কাছে। শুধু ঢাকায় নয়,
ফসল ডটকম দেশের ৩৫টি
জেলায় পণ্য সরবরাহ করে
থাকে।
ফসল
ডটকমের প্রধান কার্যালয় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে। ১৪টি জেলায় রয়েছেন
পণ্য সংগ্রহ কেন্দ্র। এই কেন্দ্রগুলো থেকে
কৃষকদের কাছ থেকে নগদ
অর্থে পণ্য কেনা হয়।
শাকসবজি মোড়কজাত করার জন্য ঢাকার
মহাখালীতে আছে ফসলের কেন্দ্রীয়
প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র। এমন কেন্দ্র ঢাকার
বাইরে আছে আরও আটটি।
রাজধানীর অধিকাংশ কাঁচাবাজারে ফসল ডটকম পণ্য
সরবরাহ করে। এ ছাড়া
বড় বড় সুপারশপ, যেমন
ডেইলি শপিং, মীনাবাজার এবং ই–কমার্স
প্রতিষ্ঠান ফুড পান্ডা, চালডাল,
দারাজ ছাড়াও প্রায় ২০০ রেস্তোরাঁয় কৃষকের
পণ্য সরাসরি পৌঁছে দিচ্ছে ফসল।
ভবিষ্যৎ
পরিকল্পনা সম্পর্কে সাকিব বলেন, ‘পরিকল্পনা একটিই। কৃষক এবং ভোক্তা—দুই পক্ষের সঠিক
মূল্যায়ন। আমরা একটি লক্ষ্যে
এগোচ্ছি। প্রতিবছরের জন্যই আমাদের কিছু পরিকল্পনা রয়েছে।
পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি
বাংলাদেশে এমন একটি ইকোসিস্টেম
তৈরি করতে, যেটি ব্যবহার করে
আমরা প্রত্যেকেই উপকৃত হব।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাপদাহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।
প্রথম দুই দফা ভোটের যে হার, তাতে বিজেপির মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিজেপির নেতারা ভোটে যে ভূমিধস বিজয় আশা করছিলেন সেটি হবে না। ভারতের কোন কোন গণমাধ্যমগুলো ভোটের ফলাফলে নাটকীয় ঘটনা ঘটারও ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে ২০০৪ সালের নির্বাচনে যেভাবে কংগ্রেস অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে বিজেপিকে ধরাশায়ী করেছিল সেরকম কোন ঘটনা ঘটতেও পারে বলে মনে আশঙ্কা করছেন অনেকে। অবশ্য এখনও আরও পাঁচ দফা ভোট বাকি আছে এবং বিজেপি আশা করছে যে, পরবর্তী ধাপগুলোতে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে এবং বিজেপি তাদের জয়ের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখবে। নরেন্দ্র মোদি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে দেওয়ার জন্য বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন।
ভারতের নির্বাচনের ফলাফল কী হবে তা বোঝা যাবে আগামী ৪ জুন। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে ভোটের হাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে এটা স্পষ্ট যে, ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোটের যে নিরঙ্কুশ বিজয়ের ধারণা করা হয়েছিল, সেটি বাস্তবতা নাও পেতে পারে। আর এ কারণেই মোদী যদি শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন, তাহলে সেটি হবে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বড় ব্যতিক্রমী ঘটনা এবং এটি হবে ভারতের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চমক।
এখন যখন ভারতের নির্বাচনে একটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বা অনিশ্চয়তার ফলাফলের শঙ্কা জেগেছে তখন প্রশ্ন উঠছে যে, বিজেপি যদি এই নির্বাচনে পরাজিত হয় তাহলে বাংলাদেশে কী হবে? গত দুটি নির্বাচনে ভারতের বিজেপি সরকার বাংলাদেশকে নিরঙ্কুশভাবে সমর্থন দিয়েছে। ২০১৮ এবং ২০২৪ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে বিজেপি সরকার।
বিশেষ করে ২০২৪ এর নির্বাচনে ভারতীয় সরকারের পরিপূর্ণ সমর্থন ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করত এবং এই নির্বাচনকে অস্বীকৃতি জানাত বলেও অনেকে মনে করেন। মার্কিন মনোভাব পাল্টানোর ক্ষেত্রে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আর নির্বাচনের পর বিএনপি থেকে শুরু করে জাতীয় পার্টি প্রত্যেকেই বলছে যে, ভারত বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখেছে। যদিও এরকম অভিযোগকে আওয়ামী লীগ অস্বীকার করে এবং আওয়ামী লীগ মনে করে যে, জনগণের ভোটে তারা নির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি আওয়ামী লীগ বা বিজেপি কেউই অস্বীকার করে না।
এখন প্রশ্ন হল, যদি বিজেপি পরাজিত হয়, ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশের সমীকরণ কী হবে? কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বর্তমান সরকারের জন্য সমীকরণের কোন পরিবর্তন হবে না। কারণ ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গেও আওয়ামী লীগ সরকারের একটি সুসম্পর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যে ইন্ডিয়া জোটের প্রধান দল কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছে।
অনেকে মনে করেন যে, এখন ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী মনোভাবের কারণে সীমান্তে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য রাখা হচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশের মধ্যে একটা ভারতবিরোধী মনোভাব তৈরি হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যদি নরেন্দ্র মোদি তাহলে এই অবস্থানের পরিবর্তন হবে। দুই দেশের সম্পর্ক আরও বিকশিত হবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভারত লোকসভা নির্বাচন মল্লিকার্জুন খাড়গে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।