অসহযোগ আন্দোলন আজকের তারিখে ২০তম দিবসে পৌঁছায়, কিন্তু সারা দেশের মানুষের আন্দোলনের জোয়ারে বিন্দুমাত্র ভাটা তো পড়েইনি, জোয়ার বরং উত্তাল হয়ে উঠছে। সভা-সমাবেশ আর শোভাযাত্রার মাধ্যমে মুক্তিসংগ্রামের কর্মসূচির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনের প্রকাশ ২১ মার্চও সমান উৎসাহে ঘটতে থাকে। সরকারি অফিস-আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ভবনগুলোর শীর্ষে শীর্ষে কালো পতাকা। হাজার হাজার মানুষের অসংখ্য মিছিলে ঢাকা যেন আরও অগ্নিগর্ভ।
'জয় বাংলা', 'জয় বঙ্গবন্ধু' স্লোগানে মুখর নারী-পুরুষ-কিশোরদের সম্মিলিত মিছিল এগিয়ে চলে শহীদ মিনারের দিকে। সেখান থেকে মিছিল যায় ধানমন্ডির দিকে। সারা দিন ধরে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে শেখ মুজিবের বাসভবনের সামনে একের পর এক মিছিল আসতে থাকে। কোনো মিছিলকেই বঙ্গবন্ধু উপেক্ষা করেননি। ব্যস্ততার মধ্যেও বারবার এসে মিছিলগুলোকে স্বাগত জানিয়ে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন।
বক্তৃতাগুলোতে সুস্পষ্টভাবে বলেন, মৌলিক প্রশ্নে কোনো আপস হতে পারে না। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে। তিনি বলেন, 'আমরা অনেক রক্ত দিয়েছি। প্রয়োজন হলে চরম ত্যাগ স্বীকার করব। তবু দাবি আদায় করে ছাড়ব। জনতার জয় অবধারিত। এই দৃশ্যপটের ভেতর সকালে ঢাকার প্রেসিডেন্ট ভবনে (বর্তমানে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধা) প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনির্ধারিত বৈঠক হয়। বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ। পঞ্চম দফার
এ বৈঠক চলে দেড় ঘণ্টা। বৈঠক শেষে বাসভবনে ফিরে বঙ্গবন্ধু জানান, বৈঠকটি আকস্মিক ছিল না। আগের আলোচনার রেশ ধরে কিছু বিষয় স্পষ্ট করার জন্য এ বৈঠকের প্রয়োজন ছিল।১
ভুট্টো ঢাকায়, ইয়াহিয়ার সঙ্গে বৈঠক
বিকেলে পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো সদলবলে করাচি থেকে ঢাকায়
আসেন। ভুট্টো ও তাঁর দলকে সামরিক বেষ্টনী দিয়ে বিমানবন্দর থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আনা হয়। রাস্তার দুই পাশের পথচারীরা এ সময় ভুট্টোবিরোধী স্লোগান দেয়। হোটেলের সামনে অপেক্ষমাণ জনতা হোটেলে প্রবেশের সময় ভুট্টোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ভুট্টো লাউঞ্জে প্রবেশের পর সেখানেও একদল বিক্ষোভকারী প্ল্যাকার্ডসহ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তাঁর কাছে
সাংবাদিকদের যেতে দেওয়া হয়নি। ভুট্টো হোটেলে ঢোকার সময় ভবনের শীর্ষে কালো পতাকা উড়ছিল। সেনারা সে পতাকা নামিয়ে ফেলে। কিন্তু জনতার প্রতিবাদের মুখে আবার তারা কালো পতাকা ওড়াতে বাধ্য হয়।
সন্ধ্যায় কড়া সেনা পাহারায় ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে বসেন। রুদ্ধদ্বার কক্ষে দুই ঘণ্টারও বেশি আলোচনা চলে। বৈঠক শেষে হোটেলে ফিরে লাউঞ্জে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'এ মুহূর্তে আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, সব ঠিক হয়ে যাবে।' আর কিছু তিনি বলেননি। এরপর ভুট্টো তাঁর উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন।
করাচি থেকে আসা বিশিষ্ট আইনজীবী এবং আগরতলা মামলার অন্যতম কৌসুলি এ কে ব্রোহি সকালে শেখ মুজিবের সঙ্গে তাঁর বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন। আলোচনার সময় তিনি অভিমত দিয়ে বলেন, সামরিক আইন প্রত্যাহার ও শাসনতন্ত্র প্রণয়নের আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে
জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে আইনগত কোনো বাধা নেই। সন্ধ্যায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান মিয়া মমতাজ খান মোহাম্মদ দৌলতানার কক্ষে পশ্চিম পাকিস্তানি নেতারা বৈঠক করেন। এর আগে সকালে মিয়া মমতাজ
দৌলতানা পিডিপিপ্রধান নুরুল আমিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। ২ ২১ মার্চ ব্রিটিশ সরকার বাংলাদেশে আসা-যাওয়ার জন্য পাকিস্তানি বিমান ও জাহাজকে মালদ্বীপের ব্রিটিশ ঘাঁটি ব্যবহারের জন্য অনুমতি দেয়।৩
ভাসানীর পরামর্শ, জনতার কর্মসূচি
চট্টগ্রামের পোলো গ্রাউন্ডে বিকেলে এক বিশাল জনসভায় ন্যাপ ভাসানী প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ঘোষণা করেন, আলোচনায় ফল হবে না। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে শাসন ও সংবিধান প্রণয়নের সব দায়িত্ব অর্পণের জন্য প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষ তাদের মুক্তিসংগ্রামে শেখ মুজিবের পেছনে কাতারবন্দী। ইয়াহিয়া খানের বুদ্ধিমানের মতো কাজ হবে শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা দিয়ে সরে পড়া।
মহিলা সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে মগবাজারে অনুষ্ঠিত নারী সমাবেশে সেনাবাহিনীর সাবেক বাঙালি সেনাদের নিয়ে একটি প্যারামিলিটারি গঠনের আহ্বান জানানো হয়। সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষুব্ধ লেখক ও শিল্পীরা আয়োজন করেন একটি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নারায়ণগঞ্জে নারীরা একটি নৌমিছিল বের করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশ শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ ২৩ মার্চ থেকে 'পশ্চিম পাকিস্তানি পণ্য বর্জন সপ্তাহ' পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। ৪
সূত্র: ১. ইত্তেফাক, ২২ মার্চ ১৯৭১। ২. পূর্বোক্ত। ৩. পূর্বোক্ত, ২৩ মার্চ ১৯৭১। ৪. পূর্বোক্ত, ২২ মার্চ ১৯৭১।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ২১ মার্চ ১৯৭১
মন্তব্য করুন
রোগীকে চিকিৎসা দিতে দেরি করায় ডাক্তারকে বেধড়ক পেটানো সেই আওয়ামী
লীগ নেতা এলিম পাহাড় এবার পা ধরে মাফ চেয়েছেন।
রোববার (৫ মে) শরীয়তপুর-১ আসনের এমপি ইকবাল হোসেন অপুর উপস্থিতিতে
চিকিৎসকের পা ধরে মাফ চান তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার মাফ চাওয়ার ভিডিওটি ছড়িয়ে
পড়েছে। এলিম পাহাড় শরীয়তপুর জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী সভাপতি।
ভুক্তভোগীরা হলেন, চিকিৎসক শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার
ডাক্তার শেহরিয়ার ইয়াছিন ও তত্ত্বাবধায়ক হাবিবুর রহমান।
ভিডিওতে দেখা যায়, সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপুর বাসভবনে হামলার
শিকার চিকিৎসকরাসহ কয়েকজন চিকিৎসক বসে আছেন। এলিম পাহাড়কে তাদের পায়ে ধরে মাফ চাইতে
বলছেন এমপি। তখন এলিম দুই চিকিৎসকের মধ্যে প্রথমে ডাক্তার শেহরিয়ারের পায়ে এবং পরে
তত্ত্বাবধায়ক হাবিবুর রহমানের কাছে পা ধরে ক্ষমা চান। এ সময় তাকে সংসদ সদস্য ইকবাল
হোসেন অপুর পায়ে ধরতেও দেখা যায়।
ভিডিওতে পালং মডেল থানার ওসি মেজবাউদ্দিন আহমেদ, যুবলীগ নেতা বাচ্চু
বেপারী, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সিদ্দিক পাহাড় ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিব) শরীয়তপুর
জেলা শাখার সভাপতি ডা. মনিরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে দেখা যায়।
মীমাংসার বিষয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক
হাবিবুর রহমান বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা কমিটির সভাপতি। ঘটনাটি
না বাড়িয়ে মীমাংসা করার জন্য তিনি অনুরোধ করেছেন। তাই তার উপস্থিতিতে ওই ব্যক্তি ক্ষমা
চেয়েছেন। তাই তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী চিকিৎসক ডাক্তার শেহরিয়ার ইয়াছিন বলেন, স্থানীয় সংসদ
সদস্য অনুরোধ করায় আমি মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করতে বাধ্য হয়েছি। আমার কানের পর্দা
ও কণ্ঠনালিতে আঘাত লেগেছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা এলিম পাহাড়, মোবাইল
ফোনে বলেন, সংসদ সদস্য আমাদের মুরব্বি। উনি বলেছেন, তাই মীমাংসা করেছি। আমার ছেলেরে
অন্য জায়গায় চিকিৎসা করাচ্ছি।
এ বিষয়ে শরীয়তপুরের জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলম (পিপিএম)
বলেন, শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় ভুক্তভোগী জেলা পুলিশের কাছে
একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের সঙ্গে সঙ্গেই এলিম পাহাড়কে আটক করে পুলিশ। কিন্তু
আসামি গ্রেপ্তারের পর ভুক্তভোগী তার অভিযোগপত্রটি তুলে নেন। যার কারণে কোনো মামলা গ্রহণ
করা সম্ভব হয়নি।
এর আগে শনিবার (৪ মে) দুপুরে সাড়ে ১২টার দিকে মারামারিতে আহত ছেলেকে চিকিৎসা দিতে দেরি করার অভিযোগে ডা. শেহরিয়ারকে বেধড়ক পেটান এলিম পাহাড়। এই সময় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবিবুর রহমানকেও লাঞ্ছিত করা হয়। পরে ডা. শাহরিয়ার বাদী হয়ে দুপুরে সদরের পালং মডেল থানায় একটি মামলার আবেদন করলে পুলিশ এলিম পাহাড়কে আটক করে।
এমপি ইকবাল হোসেন অপু শ্রমিক নেতা চিকিৎসক
মন্তব্য করুন
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান থানার ওসি
মো. মুজাহিদুল ইসলামসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রোববার (৫ মে) দুপুরে মুন্সীগঞ্জ জেলা
ও দায়রা জজ আদালতে পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ এনে মামলাটি দায়ের করেন নির্যাতনের
শিকার আব্দুল বারেক।
মামলা দায়ের করা আব্দুল বারেক সিরাজদিখান
উপজেলার বড়বর্তা গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় কেয়াইন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. হোসেন মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মুন্সীগঞ্জ সিনিয়র জেলা
ও দায়রা জজ কাজী আব্দুল হান্নান মামলার ঘটনার সত্যতা যাচাই-পূর্বক তদন্ত করে প্রতিবেদন
দেওয়ার জন্য পিবিআই পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
একইসঙ্গে বাদী তথা ভুক্তভোগীদের জখমের
বিষয়ে সিভিল সার্জনকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. জামাল
হোসাইন জানান, গত ১৮ এপ্রিল জেলার সিরাজদিখান থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়। ২৪ এপ্রিল
ওই মামলায় এজাহার নামীয় আসামি দেখিয়ে উপজেলার কুচিয়ামোড়া গ্রামের আব্দুল বারেকসহ ১১
জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এরপর ওই দিন রাতে গ্রেপ্তারকৃতদের থানা
পুলিশের হেফাজতে নির্যাতন করা হয়। পরদিন গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে
পাঠানো হয়।
তিনি আরও বলেন, জেল হাজতে থেকে আব্দুল
বারেক বাদী হয়ে সিরাজদীখান থানার ওসি ও অন্যান্য আরো ৮ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে পুলিশের
হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেছেন আদালতে।
এ ব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার (সিরাজদিখান
সার্কেল) মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, শুনেছি আদালতে একটি পিটিশন মামলা হয়েছে। তবে ওই
ঘটনার সময় আমি ট্রেনিংয়ে ছিলাম।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিমানবন্দর বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী জাতীয় সংসদ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন