কক্সবাজারের ইদগাঁও উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ১ হাজার ২৮৪ হেক্টর জমির বোরো ক্ষেত পানির অভাবে ফেটে চৌচির হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন হাজারো কৃষক। উজানের ড্যাম অতিরিক্ত পানি ধরে রাখায়ে পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ভাটি অঞ্চলের পোকখালী, চৌফলদন্ডি ও জালালাবাদ ইউনিয়নে শুষ্ক মৌসুমে বোরো আবাদ নিশ্চিত করতে ফুলেশ্বরী নদীর ওপর নির্মাণ করা হয় রাবার ড্যাম।
একই নদীর উজানে তথা ঈদগাঁও পয়েন্টে আরও একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয় ঈদগাঁওসহ বাকী ইউনিয়নের চাষাবাদে মিঠাপানির সেচ সুবিধা নিশ্চিতে। ভুক্তভোগী কৃষকেরা জানায়, ঈদগাঁও পয়েন্টে নির্মিত রাবার ড্যামের রাবার ফুলিয়ে উজান থেকে নেমে আসা পানি ধরে রাখায় ভাটির দিকের তিন ইউনিয়নের কৃষকদের মাথায় হাত উঠেছে। মিঠাপানি না পেয়ে এসব ইউনিয়নের ১ হাজার ২৮৪ হেক্টর জমির রোপিত বোরো ধানের চারা পুড়ে বিবর্ণ হয়ে পড়ছে। অনেক কৃষক দূর থেকে কলসি করে পানি এনে সেচ
দিচ্ছেন তাদের জমিতে। এই অবস্থায় ঈদগাঁও রাবার ড্যামের ধরে রাখা পানি না ছাড়লে এবার আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কায় কৃষকের ঘরে ঘরে কান্নার রোল পড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে গত বুধবার (২০ মার্চ) দিবাগত রাত থেকে পরদিন বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) ভোর পর্যন্ত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত যেন কপাল পোড়া হাজারো কৃষকের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। অবশ্য বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকায় মিঠা পানির উৎস নিয়ে ফের আতঙ্ক ভর করেছে কৃষক পরিবারগুলোতে।
ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, উজান থেকে পানি কম আসায় ঈদগাঁও রাবার ড্যাম পরিচালনা কমিটি পানি ছাড়ছেন না। এতে পোকখালী রাবার ড্যাম ফোলানো হলেও তা পানিশূন্য। এই অবস্থায় উপজেলার পোকখালী, চৌফলদণ্ডি ও জালালাবাদ ইউনিয়নে ১ হাজার ২৮৪ হেক্টরের বেশি জমিতে চাষ করা বোরো ধান ও শীতকালীন সবজি ক্ষেত শুকিয়ে মারা যাচ্ছে।
পোকখালী ইউনিয়নের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকার কৃষক জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আমার পাঁচ একর ধান চাষের জমি রয়েছে। সেই জমিতে বোরো আবাদ করার জন্য এনজিও থেকে দুই লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছি। বোরো আবাদের পর ধান গোলায় তুলে এনজিও থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করে দেবো। পাশাপাশি নিজেও আর্থিকভাবে লাভবান হবো। কিন্তু দেরিতে রাবার ড্যাম ফোলানোর কারণে পর্যাপ্ত মিঠা পানি মিলছে না নদীতে। এই পরিস্থিতিতে কলসি করে দূর থেকে পানি এনে জমিতে ছিটাচ্ছি। কিন্তু আশানুরূপ পানির অভাবে জমিতে রোপিত ধানের চারা পুড়ে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে।’
পোকখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও পোকখালী রাবার ড্যাম ব্যবস্থাপনা সমিতির সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন বলেন, ফুলেশ্বরী নদীর ওপর দুই পয়েন্টে দুটি রাবার ড্যাম নির্মাণ হলেও উপরি অংশের রাবার ড্যাম উজানের সব পানি ধরে রেখেছে। এতে নিচু অংশের জমির চাষাবাদে সেচ নিয়ে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতায় পড়েছেন কৃষকেরা। মূলত উজানের পানির সমবন্টন নিশ্চিত না করায় এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ঈদগাঁও রাবার ড্যামে পানি জমা থাকলেও সম বণ্টন না হওয়ায় পানির অভাবে জালালাবাদ, পোকখালী–চৌফলদণ্ডি বিলের ফসলি মাঠ শুকিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা।
চৌফলদন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, কৃষকদের অনেক অনুনয়–বিনয়ের পর কয়েকদিন আগে ঈদগাঁও রাবার ড্যাম থেকে ধরে রাখা অল্প পানি ছেড়েছিল। কিন্তু সেই অল্প পানি মুহূর্তেই গিলে ফেলে শুকনো খালের তলদেশ। এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ঋণ নিয়ে চাষ করা কৃষকেরা নিশ্চিত পথে বসবেন।
এ বিষয়ে ঈদগাঁও রাবার ড্যাম ব্যবস্থাপনা সমিতির সভাপতি ও মেম্বার আরমান উদ্দিন বলেন, ‘প্রথমত শুষ্ক মৌসুম গত হয়েছে, তার ওপর বৃষ্টিপাতও নেই। আবার নদীর উপরি অংশের বিভিন্নস্থানে শ্যালো মেশিনে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হওয়ায় নদীর পানির বেশ অপচয় হচ্ছে। তাই আমাদের অংশেও পানি সংকট রয়েছে। এসব কারণে নিচের দিকে পানি ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না।’
ঈদগাঁও উপজেলা (চলতি দায়িত্ব) কৃষি কর্মকর্তা জাহিদ হাসান বলেন, ‘ঈদগাঁও উপজেলার সবক’টি ইউনিয়নে এবার বিপুল পরিমাণ বোরো আবাদ হয়েছে। কিন্তু রাবার ড্যামে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পোকখালী, চৌফলদন্ডী ও জালালাবাদের কয়েকশ হেক্টরের বেশি জমির চাষ প্রায় নষ্ট হওয়ার পথে। সংকট কাটানো সম্ভব না হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। তবে সংকট সমাধানের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’
ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই বিষয়ে ঈদগাঁও–পোকখালী রাবার ড্যাম পরিচালনা কমিটির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে পানি সমভাবে বণ্টন করা হবে। এর ব্যত্যয় হলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
পানির অভাবে বোরো ধানের মাঠ ফেটে চৌচির বিপাকে কৃষকরা পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে রাবার ড্যাম
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাপদাহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।
প্রথম দুই দফা ভোটের যে হার, তাতে বিজেপির মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিজেপির নেতারা ভোটে যে ভূমিধস বিজয় আশা করছিলেন সেটি হবে না। ভারতের কোন কোন গণমাধ্যমগুলো ভোটের ফলাফলে নাটকীয় ঘটনা ঘটারও ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে ২০০৪ সালের নির্বাচনে যেভাবে কংগ্রেস অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে বিজেপিকে ধরাশায়ী করেছিল সেরকম কোন ঘটনা ঘটতেও পারে বলে মনে আশঙ্কা করছেন অনেকে। অবশ্য এখনও আরও পাঁচ দফা ভোট বাকি আছে এবং বিজেপি আশা করছে যে, পরবর্তী ধাপগুলোতে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে এবং বিজেপি তাদের জয়ের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখবে। নরেন্দ্র মোদি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে দেওয়ার জন্য বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন।
ভারতের নির্বাচনের ফলাফল কী হবে তা বোঝা যাবে আগামী ৪ জুন। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে ভোটের হাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে এটা স্পষ্ট যে, ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোটের যে নিরঙ্কুশ বিজয়ের ধারণা করা হয়েছিল, সেটি বাস্তবতা নাও পেতে পারে। আর এ কারণেই মোদী যদি শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন, তাহলে সেটি হবে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বড় ব্যতিক্রমী ঘটনা এবং এটি হবে ভারতের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চমক।
এখন যখন ভারতের নির্বাচনে একটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বা অনিশ্চয়তার ফলাফলের শঙ্কা জেগেছে তখন প্রশ্ন উঠছে যে, বিজেপি যদি এই নির্বাচনে পরাজিত হয় তাহলে বাংলাদেশে কী হবে? গত দুটি নির্বাচনে ভারতের বিজেপি সরকার বাংলাদেশকে নিরঙ্কুশভাবে সমর্থন দিয়েছে। ২০১৮ এবং ২০২৪ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে বিজেপি সরকার।
বিশেষ করে ২০২৪ এর নির্বাচনে ভারতীয় সরকারের পরিপূর্ণ সমর্থন ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করত এবং এই নির্বাচনকে অস্বীকৃতি জানাত বলেও অনেকে মনে করেন। মার্কিন মনোভাব পাল্টানোর ক্ষেত্রে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আর নির্বাচনের পর বিএনপি থেকে শুরু করে জাতীয় পার্টি প্রত্যেকেই বলছে যে, ভারত বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখেছে। যদিও এরকম অভিযোগকে আওয়ামী লীগ অস্বীকার করে এবং আওয়ামী লীগ মনে করে যে, জনগণের ভোটে তারা নির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি আওয়ামী লীগ বা বিজেপি কেউই অস্বীকার করে না।
এখন প্রশ্ন হল, যদি বিজেপি পরাজিত হয়, ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশের সমীকরণ কী হবে? কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বর্তমান সরকারের জন্য সমীকরণের কোন পরিবর্তন হবে না। কারণ ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গেও আওয়ামী লীগ সরকারের একটি সুসম্পর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যে ইন্ডিয়া জোটের প্রধান দল কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছে।
অনেকে মনে করেন যে, এখন ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী মনোভাবের কারণে সীমান্তে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য রাখা হচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশের মধ্যে একটা ভারতবিরোধী মনোভাব তৈরি হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যদি নরেন্দ্র মোদি তাহলে এই অবস্থানের পরিবর্তন হবে। দুই দেশের সম্পর্ক আরও বিকশিত হবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভারত লোকসভা নির্বাচন মল্লিকার্জুন খাড়গে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।