ঈদকে সামনে রেখে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে রাজধানীবাসি। পরিবারের প্রিয় মুখের হাসি দেখতে কর্মব্যস্ত মানুষরা ছাড়ছেন কর্মস্থল। গত কয়েক দিনের তুলনায় গতকাল বেশিসংখ্যক মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। চোখে পড়ার মতো ভিড় ছিল রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে। এদিকে ট্রেনে তেমন ভিড় না থাকলেও লঞ্চের যাত্রী কিছুটা বেড়েছে।
রাজধানীর মহাখালী, গাবতলী, কল্যাণপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, কমলাপুর
ও গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালকেন্দ্রিক সড়কগুলোতে ছুটির দিনও যানজট তৈরি হয়েছে।
গতকাল কয়েকটি বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীর ভিড় বেড়েছে। নির্ধারিত সময়ে বাস
ছেড়ে যাচ্ছে। তবে ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ করেছে যাত্রীরা।
ঢাকার একটি কারখানায় চাকরি করেন জুবায়ের আলম। জিরো পয়েন্ট থেকে
ফুলবাড়িয়ার দিকে ছোট্ট মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। জানান, ঈদের ছুটি পেয়ে
পরিবার নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন তিনি। ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালে যাত্রী মঈনুল ইসলাম জানান,
তিনি বরিশাল যাবেন।
তবে আগে থেকে কোনো টিকিট না করায় এখন যে বাসে আগে উঠতে পারবেন সে
বাসে করেই চলে যাবেন। ভাড়া কিছুটা বেশি দিতে হবে, সেটাও তিনি ধরে নিয়েছেন।
স্বস্তি মিলছে ট্রেনযাত্রায়। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মোটামুটি
সব ট্রেনই সময়মতো ছেড়েছে। এরই মধ্যে চালু হয়েছে ঈদ যাত্রার
বিশেষ ট্রেন। গতকাল থেকে ঈদের ফিরতি টিকিটও বিক্রি শুরু করেছে রেলওয়ে।
ঢাকা (কমলাপুর) রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার
জানান, ৬৭টি ট্রেনের ঢাকা ছাড়ার প্রস্তুতি রয়েছে। ৪২টি আন্ত নগর, বাকিগুলো কমিউটার
ও মেইল ট্রেন।
এদিকে যাত্রী বাড়ছে লঞ্চেও। নৌপথে শুরুর দিকে যাত্রী কম থাকলেও
এখন সদরঘাটে যাত্রীর বিচরণ বেড়েছে। লঞ্চের সংখ্যাও বাড়িয়েছেন লঞ্চ মালিকরা। তবে গুলিস্তান
থেকে সদরঘাট পর্যন্ত সড়কে যানজটে যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সমপাদক সিদ্দিকুর রহমান
পাটোয়ারী বলেন, ‘আমরা যাত্রীর অপেক্ষায় আছি। অনেক যাত্রী আসবে সেটা এখনো বলা
যাবে না। তবে আশা করছি যাত্রীর চাপ বাড়বে। আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে
রেখেছি।’
অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু সেতুতে গাড়ির চাপ রয়েছে। যদিও যানজট
কম। ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। লক্ষ করা গেছেগতকাল
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহাসড়কের টাঙ্গাইলের অংশে যানবাহনের বাড়তি চাপ।
তবে কোথাও দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়নি। গত ২৪ ঘণ্টায় বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ২৪ হাজার ৭১০টি
যানবাহন পারাপার হয়েছে। মহাসড়কে টাঙ্গাইলের অংশে ৬৫ কিলোমিটার যানজট নিরসনে দায়িত্ব
পালন করছেন পুলিশের প্রায় ৭০০ সদস্য।
উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে দেখা
যায়, মহাসড়কে যানজট না থাকলেও গণপরিবহনের সংখ্যা কম, যাত্রীরা দাঁড়িয়ে আছে। পাশাপাশি
যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, ‘টাঙ্গাইলের
অংশে পরিবহন চালকরা
৬৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চার লেনের সুবিধা পাচ্ছেন’।
ঈদে ঘরমুখী মানুষের ভোগান্তি কমাতে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে
যানবাহন চলাচল স্বস্তিদায়ক করতে মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা লেন হচ্ছে। রয়েছে এক্সপ্রেসওয়েতে
বাইকের আলাদা লেন। মহাসড়কে অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োজিত করা হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের
গজারিয়ায় ঈদের
আগে-পরে ছয় দিন ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধ থাকবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক্সপ্রেসওয়েতে ৪০ কিলোমিটার
এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জ অংশের প্রায় ১৩ কিলোমিটার অংশে বিভিন্ন পয়েন্টে
থাকবে দুই শতাধিক পুলিশ।
কমেছে ফেরির ভোগান্তি। একসময় শিমুলিয়া ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে
থাকতে হতো ফেরি পারাপারের জন্য। পদ্মা সেতু হওয়ায় এখন আর সেই চিত্র নেই। ভোগান্তি ছাড়াই
দ্রুত পার হচ্ছে মানুষ।
ফরিদপুরের যাত্রী আবুল হোসেন জানান, যেহেতু এবার শিমুলিয়া ফেরিঘাট
নেই, পারাপারের ব্যাপার নেই। এখন পদ্মা সেতু দিয়ে আরামে বাড়ি যাওয়া যায়। আর ঘাটের চাঁদাবাজি
থেকেও পরিত্রাণ পেয়েছে মানুষ।
ইলিশ পরিবহনের চালক হাতেম শেখ জানান, এখন যাত্রীসংকট
আছে, যাত্রীর তুলনায় গাড়ি অনেক বেশি। যাত্রীরা এখন নিরিবিলি যেতে পারছে। তবে চাঁদা
দিতে হয় কয়েকটি স্থানে। প্রতি টিপে ১০০ টাকা দিতে হয় ঢাকার পোস্তগোলা ও সিরাজদিখানের
নিমতলী এলাকায়।
এদিকে এলেঙ্গা-রংপুরমুখী খুলেছে ১০ পথ। ঈদকে সামনে
রেখে সাসেক-২ প্রকল্পের আওতায় এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়কে নির্মিত একটি রেল ওভারপাস,
সাতটি ওভারপাস ও দুটি সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম
জাতীয় মহাসড়কের টোল প্লাজার সব লেনে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) কার্যক্রম চালু
করাসহ মেঘনা সেতু টোল প্লাজা-২-এর উদ্বোধন করা হয়েছে।
গতকাল থেকে বগুড়ার তিনমাথা রেল গেটে ৫৫০ মিটার দৈর্ঘের একটি রেল ওভারপাস, দুটি সেতু—সিরাজগঞ্জে ৫৬ মিটার দৈর্ঘ্যের দাতিয়া সেতু ও ৩২ মিটার দৈর্ঘ্যের ফটকি সেতু খুলে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জে মুলিবাড়ি ওভারপাস, পাঁচিলা ওভারপাস এবং দাতপুর ওভারপাস, বগুড়ায় বি ব্লক ক্যান্টনমেন্ট ওভারপাস এবং ফুলতলা ওভারপাস আর রংপুরে ধাপেরহাট ও মির্জাপুর ওভারপাস যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন
হিট স্ট্রোক তীব্র তাপদাহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ শিল্পমন্ত্রী
মন্তব্য করুন
প্রায় ১৩ বছর পর লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনে তিনটিতে চেয়ারম্যান পদে নতুন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। আর দক্ষিণ হামছাদী ও তেওয়ারীগঞ্জ এ দুইটি ইউনিয়নে এ পদে পুরাতনেই আস্থা রেখেছেন ভোটাররা। তবে পাঁচটি ইউনিয়নে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরকে পেয়ে উল্লাস প্রকাশ করছে পুরো নেট দুনিয়া।