ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার পর থেকে বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। অবন্তিকার আত্নহত্যার পর উঠে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীদের পুরনো সব অভিযোগও।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনার করা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি তিন সপ্তাহেও প্রতিবেদন দিতে পারেনি। কমিটির প্রধান বলছে, ঈদের ছুটি শেষেও আরো সময় লাগবে।
গত ১৬ মার্চ গঠিত ওই কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে কোনো সময় বেঁধে দেওয়া না হলেও ‘দ্রুততম সময়ে’র কথা বলা হয়।
গত ১৫ মার্চ রাত ১০টার দিকে কুমিল্লার বাগিচাগাঁওয়ের বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস নেন অবন্তিকা। মৃত্যুর আগে ফেইসবুক পোস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও আম্মান সিদ্দিকীকে জড়িয়ে দীর্ঘ পোস্ট লিখে যান।
শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মধ্যে অবন্তিকার মায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন দ্বীন ও আম্মান। পুলিশের পাশাপাশি তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও।
এর প্রধান করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি জাকির হোসেনকে।
গত ১৫ মার্চ কুমিল্লায় নিজ বাসায় আত্মহত্যা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে মাস্টাসের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা।
গত ২২ মার্চ কমিটির ৫ সদস্য অবন্তিকার বাসায় গিয়ে তার মা তাহমিনা শবনমের সঙ্গে প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠক করেন তারা। পরে তারা কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও আম্মান সিদ্দিকীর সঙ্গেও কথা বলেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কুমিল্লা কোতয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শিবেন বিশ্বাসের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন তারা।
প্রতিবেদন নিতে এত সময় লাগছে কেন, এই প্রশ্নে অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, “আমাদের কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। এরই মধ্যে আমরা তদন্ত কমিটি ৯ বার বৈঠক করেছি। ঈদের পর বিশ্ববিদ্যালয় চালু হলে যত দ্রুত সম্ভব আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব।
“অবন্তিকার মোবাইলের কল লিস্ট, গ্যালারিতে থাকা স্ক্রিনশট, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ টেক্সট, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনসহ সকল সামাজিক মাধ্যমের কথোপকথনের বিষয়ে তথ্য চেয়ে পুলিশের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পুলিশের কাছ থেকে তথ্য পেলে প্রতিবেদনটি জমা দিতে সুবিধা হবে।”
গত ২৫ মার্চ প্রথমে ওই চিঠি জেলা পুলিশ সুপারের কাছে ই-মেইলে পাঠানো হয়। কিন্তু সাড়া মেলেনি। সবশেষ বৃহস্পতিবার ডাক যোগে একই চিঠি পাঠানো হয়েছে বলেও জানান জাকির হোসেন।
কুমিল্লা কোতয়ালি মডেল থানার ওসি ফিরোজ হোসেন বলেন, “এমন কোনো চিঠি আমরা এখনও পাইনি। চিঠি পেলে জগন্নাথের তদন্ত দলকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হবে।”
অবন্তিকার মায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শিবেন বিশ্বাস বলেন, “অবন্তিকার মোবাইল ফোন আদালতের অনুমতিক্রমে ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হবে। তবে ঈদের পর ছাড়া এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। অবন্তিকার মোবাইল ফোন এ মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত।”
আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে ১৬ মার্চ রাতে কুমিল্লা কোতয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন অবন্তিকার মা। এতে দ্বীন ইসলাম ও আম্মান সিদ্দিকীকে আসামি করা হয়। তারা দুই জন বর্তমানে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি।
ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী তদন্ত কমিটি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।