রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ইলেকট্রিক কেটলি থেকেই
আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর সেই আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে খুব দ্রুত। আর ভবনটির একটিমাত্র
সিঁড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার রাখার কারণে মানুষ নামতে পারেনি। এ ছাড়া ভবনটির ভেতরে গ্যাস
জমে থাকার কারণেও আগুন দ্রুত ছড়ায়।
এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান এবং ফায়ার সার্ভিস
ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশনস) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী
এ তথ্য দেন।
গতকাল রবিবার (৭ এপ্রিল) তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ভবনের নিচতলায় ‘চা চুমুক’ নামের
কফি শপের ইলেকট্রিক কেটলির শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত। আগুন অতিমাত্রায় ছড়াতে
সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে লিকেজের কারণে জমে থাকা গ্যাস। চার-পাঁচ মিনিটের মধ্যে
আগুন পুরো নিচতলা গ্রাস করে নেয়’।
তিনি বলেন, ‘ভবনে একটি এক্সিট সিঁড়ি থাকলেই এত লোক মারা যেত না।
আর আগুন ব্যাপক রূপ নেয় লিকেজ থেকে ছড়ানো গ্যাসের কারণে। ওই ভবনে বেশ কিছু আইনি ব্যত্যয়
দেখার কথা জানায় ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি’।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বেইলি রোডের ওই আটতলা
ভবনে আগুন লেগে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়।
দেখা যায়, ভবনের নিচতলা থেকে ছাদ পর্যন্ত ডজনখানেক রেস্তোরাঁ ও
কফি শপ ছিল। সাপ্তাহিক ছুটির আগের রাতে রেস্তোঁরাগুলোতে ভিড় করেছিল অনেক মানুষ, যাদের
বরণ করতে হয়েছে করুণ পরিণতি। ওই ঘটনার পর রাজউকসহ ভবনের নকশা ও নিরাপত্তা অনুমোদনকারী
সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধেও গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস ও রাজউক পৃথক
তদন্ত কমিটি গঠন করে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে
ওই কমিটিতে ফায়ার সার্ভিস, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, রাজউক ও বুয়েটের প্রতিনিধিদের
রাখা হয়।
চার মাসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন উচ্চ আদালত। কমিটিগুলোর
মধ্যে ফায়ার সার্ভিস নির্ধারিত সময়ে তদন্ত শেষ করে গত সপ্তাহে নিজেদের অধিদপ্তরে প্রতিবেদন
জমা দেয়।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল বলেন, ‘শুধু শর্ট সার্কিট বা বৈদ্যুতিক
সমস্যা থেকে আগুন ধরলে এত দ্রুত ছড়ায় না বা আগুন এত বড় আকার ধারণ করে না। আগুনের একেবারে
প্রাথমিক অবস্থার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে সেগুলোতে আমরা দেখেছি, প্রথম চার-পাঁচ
মিনিটের মধ্যেই আগুন ‘ডেভেলপড স্টেজে’ চলে যায় (আগুনের চারটি
স্তর আছে)।”
প্রথমত কেবলের মাধ্যমে ছড়ায় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরে সেটি আশপাশের
দাহ্য বস্তুর মাধ্যমে ছড়ায়। কিন্তু সেই আগুন এত বড় আকার হয় না। এ ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক
উৎস থেকে লেগে আগুনটা গ্যাসে ছড়িয়েছে’।
প্রাথমিকভাবে ফায়ার এক্সটিঙ্গুইশার দিয়ে অনেকে আগুন নেভাতে চেষ্টাও
করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেখানে একজন পুলিশও ছিল। কিন্তু গ্যাসের কারণে তারা ব্যর্থ
হন। ছয় মিনিটের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম গাড়ি যখন সেখানে পৌঁছায়, ততক্ষণে পুরো
নিচতলা আগুনে ব্লক হয়ে যায়’।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্তে
ওই ভবনে অন্তত ১৩টি ‘ব্যত্যয়’ পাওয়া গেছে, এর মধ্যে কয়েকটি গুরুতর। প্রথম
ব্যত্যয়টি হচ্ছে সিঁড়ি। তাদের ভবনের যে আয়তন ও যত লোকের আনাগোনা, তাতে অন্তত দুটি সিঁড়ি
থাকা আবশ্যক ছিল। কিন্তু ভবনের একটিই সিঁড়ি, সেটিতেও গ্যাস সিলিন্ডার রাখা অবস্থায়
পেয়েছি আমরা। একটি এক্সিট সিঁড়ি থাকলেই মানুষগুলো বেঁচে যেত। অকুপেন্সি অনুযায়ী সিঁড়ি
হওয়ার কথা। টোটাল জনবল ৫০ জন হলে একটি সিঁড়ি। ৫০ থেকে ৫০০ হলে দুটি সিঁড়ি। এক্সিট সিঁড়ি
মাত্র একটি ছিল; যেটি হওয়ার কথা ছিল ভবনের আয়তন অনুযায়ী ন্যূনতম দুটি। সেই সিঁড়িও অকুপাইড
ছিল, সিলিন্ডার রেখে পথ আটকানো ছিল।”
তখনকার পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, ‘ভবনের
ওপরতলায় আটকে পড়া মানুষজন আগুন লাগার পর নিচে নামার জন্য এসে দেখেছে নিচতলায় আগুন,
টেম্পারেচার খুব হাই। যেই নিচের দিকে নামতে পারেনি, তখন ওরা বিভিন্ন রুমের মধ্যে ঢুকে
গেছে। তারা ভেবেছে তিন-চার তলা মনে হয় নিরাপদ। ওই ভবনের ছাদও খোলা ছিল না। আর বাংলাদেশের
৯৫ শতাংশ মানুষই চিন্তা করে সিঁড়িতে তালা আছে। যারা ফ্ল্যাট বাসায় থাকে তারা দেখে অভ্যস্ত
যে সিঁড়িতে তালা লাগানো। সে কারণে তারা ভবনের বিভিন্ন কক্ষে ঢুকে যায়। সেসব কক্ষে ন্যূনতম
কোনো ভেন্টিলেশন ছিল না। আমরা একটি রুমেই ৪০ জনের মতো পেয়েছি। ভেন্টিলেশন থাকলে হয়তো
বিষয়টি অন্য রকম হতে পারত।’
তিনি বলেন, রাজউকের কাছ থেকে অফিস-কাম-বাসার (এফ টাইপ) অনুমোদন
নিয়েছে ভবনটি। কিন্তু সেখানে রেস্তোরাঁ ও দোকান করা হয়েছে। এটি বেসিক্যালি আই টাইপ
ভবন। তারা এফ টাইপটিকে আই টাইপ বানিয়ে ফেলেছে। কিছু ডিজাইন চেঞ্জ করেছে, কিছু বাড়িয়েছেও।
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের ভবনে কমপক্ষে ৫০ হাজার গ্যালন
পানি ধারণক্ষমতার ওয়াটার রিজার্ভার না থাকলে আমরা ছাড়পত্র দিই না। কিন্তু সেখানে পানির
ক্যাপাসিটি ১০ হাজার গ্যালন। পানি ছিল আরো কম। এ ধরনের অগ্নিদুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য ফায়ার
সেফটি প্ল্যান ২০০৩ এবং রাজউক থেকে অনুমোদন করা নকশা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের সুপারিশ
করেছে তদন্ত কমিটি।’
মন্তব্য করুন
রোগীকে চিকিৎসা দিতে দেরি করায় ডাক্তারকে বেধড়ক পেটানো সেই আওয়ামী
লীগ নেতা এলিম পাহাড় এবার পা ধরে মাফ চেয়েছেন।
রোববার (৫ মে) শরীয়তপুর-১ আসনের এমপি ইকবাল হোসেন অপুর উপস্থিতিতে
চিকিৎসকের পা ধরে মাফ চান তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার মাফ চাওয়ার ভিডিওটি ছড়িয়ে
পড়েছে। এলিম পাহাড় শরীয়তপুর জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী সভাপতি।
ভুক্তভোগীরা হলেন, চিকিৎসক শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার
ডাক্তার শেহরিয়ার ইয়াছিন ও তত্ত্বাবধায়ক হাবিবুর রহমান।
ভিডিওতে দেখা যায়, সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপুর বাসভবনে হামলার
শিকার চিকিৎসকরাসহ কয়েকজন চিকিৎসক বসে আছেন। এলিম পাহাড়কে তাদের পায়ে ধরে মাফ চাইতে
বলছেন এমপি। তখন এলিম দুই চিকিৎসকের মধ্যে প্রথমে ডাক্তার শেহরিয়ারের পায়ে এবং পরে
তত্ত্বাবধায়ক হাবিবুর রহমানের কাছে পা ধরে ক্ষমা চান। এ সময় তাকে সংসদ সদস্য ইকবাল
হোসেন অপুর পায়ে ধরতেও দেখা যায়।
ভিডিওতে পালং মডেল থানার ওসি মেজবাউদ্দিন আহমেদ, যুবলীগ নেতা বাচ্চু
বেপারী, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সিদ্দিক পাহাড় ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিব) শরীয়তপুর
জেলা শাখার সভাপতি ডা. মনিরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে দেখা যায়।
মীমাংসার বিষয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক
হাবিবুর রহমান বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা কমিটির সভাপতি। ঘটনাটি
না বাড়িয়ে মীমাংসা করার জন্য তিনি অনুরোধ করেছেন। তাই তার উপস্থিতিতে ওই ব্যক্তি ক্ষমা
চেয়েছেন। তাই তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী চিকিৎসক ডাক্তার শেহরিয়ার ইয়াছিন বলেন, স্থানীয় সংসদ
সদস্য অনুরোধ করায় আমি মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করতে বাধ্য হয়েছি। আমার কানের পর্দা
ও কণ্ঠনালিতে আঘাত লেগেছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা এলিম পাহাড়, মোবাইল
ফোনে বলেন, সংসদ সদস্য আমাদের মুরব্বি। উনি বলেছেন, তাই মীমাংসা করেছি। আমার ছেলেরে
অন্য জায়গায় চিকিৎসা করাচ্ছি।
এ বিষয়ে শরীয়তপুরের জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলম (পিপিএম)
বলেন, শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় ভুক্তভোগী জেলা পুলিশের কাছে
একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের সঙ্গে সঙ্গেই এলিম পাহাড়কে আটক করে পুলিশ। কিন্তু
আসামি গ্রেপ্তারের পর ভুক্তভোগী তার অভিযোগপত্রটি তুলে নেন। যার কারণে কোনো মামলা গ্রহণ
করা সম্ভব হয়নি।
এর আগে শনিবার (৪ মে) দুপুরে সাড়ে ১২টার দিকে মারামারিতে আহত ছেলেকে চিকিৎসা দিতে দেরি করার অভিযোগে ডা. শেহরিয়ারকে বেধড়ক পেটান এলিম পাহাড়। এই সময় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবিবুর রহমানকেও লাঞ্ছিত করা হয়। পরে ডা. শাহরিয়ার বাদী হয়ে দুপুরে সদরের পালং মডেল থানায় একটি মামলার আবেদন করলে পুলিশ এলিম পাহাড়কে আটক করে।
এমপি ইকবাল হোসেন অপু শ্রমিক নেতা চিকিৎসক
মন্তব্য করুন
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান থানার ওসি
মো. মুজাহিদুল ইসলামসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রোববার (৫ মে) দুপুরে মুন্সীগঞ্জ জেলা
ও দায়রা জজ আদালতে পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ এনে মামলাটি দায়ের করেন নির্যাতনের
শিকার আব্দুল বারেক।
মামলা দায়ের করা আব্দুল বারেক সিরাজদিখান
উপজেলার বড়বর্তা গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় কেয়াইন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. হোসেন মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মুন্সীগঞ্জ সিনিয়র জেলা
ও দায়রা জজ কাজী আব্দুল হান্নান মামলার ঘটনার সত্যতা যাচাই-পূর্বক তদন্ত করে প্রতিবেদন
দেওয়ার জন্য পিবিআই পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
একইসঙ্গে বাদী তথা ভুক্তভোগীদের জখমের
বিষয়ে সিভিল সার্জনকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. জামাল
হোসাইন জানান, গত ১৮ এপ্রিল জেলার সিরাজদিখান থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়। ২৪ এপ্রিল
ওই মামলায় এজাহার নামীয় আসামি দেখিয়ে উপজেলার কুচিয়ামোড়া গ্রামের আব্দুল বারেকসহ ১১
জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এরপর ওই দিন রাতে গ্রেপ্তারকৃতদের থানা
পুলিশের হেফাজতে নির্যাতন করা হয়। পরদিন গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে
পাঠানো হয়।
তিনি আরও বলেন, জেল হাজতে থেকে আব্দুল
বারেক বাদী হয়ে সিরাজদীখান থানার ওসি ও অন্যান্য আরো ৮ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে পুলিশের
হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেছেন আদালতে।
এ ব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার (সিরাজদিখান
সার্কেল) মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, শুনেছি আদালতে একটি পিটিশন মামলা হয়েছে। তবে ওই
ঘটনার সময় আমি ট্রেনিংয়ে ছিলাম।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিমানবন্দর বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী জাতীয় সংসদ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন