অবশেষে যেটি আশঙ্কা করা হয়েছিল তাই ঘটল। ইরান ড্রোন আক্রমণ করল ইসরায়েলের উপর। যদিও অধিকাংশ ড্রোনই নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে ইসরায়েল। তারপরও এটি যুদ্ধের সূচনা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ এর পাল্টা প্রতিশোধ যে ইসরায়েল নেবে এটা হলফ করেই বলা যায়। অতীত অভিজ্ঞতা তাই বলে। যদিও ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এটি আপাতত শেষ। কিন্তু ভবিষ্যতে যদি ইসরায়েল হামলা করে তাহলে আরও কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
ইরানের পক্ষ থেকে এটিও বলা হয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেন এ বিরোধ থেকে দূরে থাকে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বিরোধ থেকে দূরে থাকছে না। তারা এ হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়েছে এবং পাল্টা হামলার প্রস্তুতিও গ্রহণ করা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে ইরান-ইসরায়েল যে পরিস্থিতি তা যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, এটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
এই যুদ্ধের প্রভাব সারাবিশ্বে পরবে, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো এ যুদ্ধের কারণে নানা রকম প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের উপর এ যুদ্ধের নানা রকম প্রভাব পরতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। যে সমস্ত প্রভাবগুলো পরবে তার মধ্যে রয়েছে:
১. তেলের দাম বাড়তে পারে: এমনিতেই মধ্যপ্রাচ্যে বেশকিছুদিন ধরে উত্তেজনা চলছে। গাজায় ইসরায়েলি নীপিড়ন এবং নির্যাতনের কারণে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে একটি অস্থিরতা বিরাজ করছে। এর মধ্যে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা এই অস্থিরতাকে আরও বাড়িয়ে দেবে। এর ফলে, প্রথম যে ঘটনাটি ঘটবে তা হলো, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনিতেই বাংলাদেশ জ্বালানি সংকটে রয়েছে। জ্বালানি সংকট মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। এর ফলে এ সংকট নাগালের বাইরে চলে যাবে। এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তা বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২. অর্থনৈতিক সংকট বাড়তে পারে: এই ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটকে বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা। কারণ জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেলে অন্যান্য জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের আমদানি নির্ভর জ্বালানি খাত বড় ধরনের সংকটে পড়বে। ফলে আমাদের রপ্তানি আয়ের উপর প্রভাব পড়তে পারে এবং জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেলে আপনা-আপনিভাবে অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। ফলে আমরা একটা বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়তে পারি বলে অনেকে মনে করছেন।
৩. প্রবাসী আয় কমার শঙ্কা: এই যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রবাসী আয়ের উপর আঘাত হানতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে কর্মসংস্থান কমে যাবে। কর্মী ছাটায়ের ঘটনা ঘটতে পারে এবং অনিবার্যভাবে এটি প্রবাসী আয়ের উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছে।
৪. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নতুন মেরুকরণ: এই ইসরায়েল এবং ইরানের সহিংস পরিস্থিতি বাংলাদেশকে নতুন কূটনৈতিক চাপে ফেলতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বাভাবিকভাবেই তার বন্ধু বলয় বাড়াতে চাইবে এবং বাংলাদেশ যাতে কোনভাবেই ইরানের পক্ষে বা ইসরায়েলের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ না করে তা নিশ্চিত করতে চাইবে। ফলে নতুন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ বাড়বে এবং বাংলাদেশকে একটি নিরপেক্ষ অবস্থান দেওয়ার জন্য বা ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে। সবকিছু মিলিয়ে এ যুদ্ধ যদি দীর্ঘদিন গড়ায় তাহলে তা বাংলাদেশের উপর বড় ধরনের অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ইসরায়েল ইরান হামলা নেতানিয়াহু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।