চট্টগ্রামে এবার পাল্টাপাল্টি অবস্থান
নিয়েছেন শিক্ষার্থী ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের
(চুয়েট) দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুড়িয়ে
দেওয়া যানবাহনের ক্ষতিপূরণ দাবিসহ নানা দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বৃহত্তর
চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
অন্যদিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরাও
তাদের অবস্থানে অনড়। চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে উতপ্ত হয়ে
উঠেছে চট্টগ্রাম। টানা পাঁচ দিন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়কে।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) পরিবহন সংগঠনের
কার্যালয়ে জরুরি সভা শেষে ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন
পূর্বাঞ্চলীয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মৃণাল চৌধুরী।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত রোববার
(২৮ এপ্রিল) ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) ভোর ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর,
কক্সবাজার এবং তিন পার্বত্য জেলায় বাস, মিনিবাস, হিউম্যান হলার, অটোরিকশা ও অটোটেম্পু
চলাচল বন্ধ থাকবে। দূরপাল্লার কোনো বাস এসব জেলা ও মহানগর থেকে ছাড়বে না এবং ঢুকতেও
পারবে না।
এ ছাড়া গণপরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবিগুলো
হলো- চুয়েটে দুই শিক্ষার্থী নিহতের জেরে ৪-৫টি গাড়ি ভাঙচুর ও ৩টি বাস জ্বালিয়ে দেওয়ার
ঘটনায় মামলা গ্রহণ, ক্ষতিপূরণ দেওয়া, ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং চুয়েটের তিন শিক্ষার্থীকে
বহনকারী মোটরসাইকেলটির নিবন্ধন, চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স, তিনজন একসঙ্গে মোটরসাইকেলে
ওঠার নিয়ম ও তারা মাদকাসক্ত ছিল কি না এসব বিষয় তদন্ত কমিটি গঠন করা।
পূর্বাঞ্চলীয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের
সভাপতি মৃণাল চৌধুরী বলেন, আমাদের দাবি হচ্ছে, বাসের যেভাবে তদন্ত হচ্ছে, একইভাবে মোটরসাইকেলের
ক্ষেত্রেও তদন্ত করতে হবে। এ ছাড়া দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে পাঁচ লাখ করে ১০ লাখ টাকা
এবং আহত শিক্ষার্থীকে তিন লাখ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বাস মালিক সমিতি।
তিনি বলেন, এরপরও চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
চারদিন ধরে সড়ক অবরোধ করে গাড়ি চলাচল করতে দেয়নি। ৪/৫টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে তারা। এ
ছাড়া ৩টি গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের এসব কর্মকাণ্ড তো আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ মামলা করতে গেলেও থানা সেটা গ্রহণ করেনি। এ অবস্থায় ঐক্য পরিষদ বাধ্য
হয়ে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করেছে।
এ পরিস্থতিতে রোববার (২৮ এপ্রিল) থেকে
৯ মে পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে চুয়েট কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) রাতে জরুরি সিন্ডিকেট
সভা শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চুয়েট কর্তৃপক্ষের ঘোষণার পরও নিরাপদ সড়কের দাবিতে
নিজেদের অনড় অবস্থানের কথা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) নিরাপদ সড়কের দাবিতে
ফের ক্যাম্পাস জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীদের পক্ষে সাধারণ শিক্ষার্থী আরিফুল
ইসলাম তামিম কালবেলাকে বলেন, আমাদের আন্দোলনটি মূলত নিরাপদ সড়কে আন্দোলন। কর্তৃপক্ষের
সঙ্গে আমরা আলোচনায় করেছিলাম। কোনো সুরাহা হয়নি। পরে ৯ মে পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম
বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ অবস্থায় আমাদের দাবি আদায়ের ব্যাপার থেকে আমরা সরে আসিনি।
তিনি বলেন, শাহ আমানত বাসসহ আরও একটি
কোম্পানির বাস চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়কে বেশ বেপোরোয়া গতিতে চলে। এর আগে এ দুই পরিবহন
বাসের কারণে আমাদের অনেক সহপাঠী আহত হয়েছেন। এখন দুজনকে হারিয়েছি আমরা, আরও একজন হাসপাতালে
ভর্তি। সড়ক অবরোধের মতো কঠিন কর্মসূচি দিলে মানুষের ভোগান্তি হতে পারে। তাই অবরোধ কর্মসূচি
থেকে সরে আসা হয়েছে। আমাদের দাবিগুলো মানা না হলে নির্দিষ্ট সময়ের পর আমরা আবারও কর্মসূচি
ঘোষণা করব।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- পলাতক
চালক ও সহযোগীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা, ক্যাম্পাসে
আধুনিক চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন, আধুনিক অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা দেওয়া, রাস্তার মাথা এলাকা
থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত চার লেন মহাসড়ক করা, প্রতিটি বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার কাগজপত্র
ও চালকদের লাইসেন্স নিয়মিত যাচাই করা, ছাত্রকল্যাণ পরিষদকে জবাবদিহির আওতায় আনা এবং
ছাত্র প্রতিনিধিদল গঠন করা, নিহত ও আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া।
এর আগে সোমবার (২২ এপ্রিল) চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী চুয়েট শিক্ষার্থী শান্ত সাহা এবং তাওফিক হোসাইন নিহত হন। সহপাঠী মৃত্যুর ঘটনায় টানা চারদিন আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় অবরুদ্ধ ছিল চট্টগ্রাম-কাপ্তাই আঞ্চলিক মহাসড়ক।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নতুন সরকার বাজেট ঘোষণা জাতীয় সংসদ
মন্তব্য করুন