নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫০ পিএম, ২৪ জুলাই, ২০১৮
সুশাসন নিশ্চিত করতে ও প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়াতে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ২৩টি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদাণকালে তিনি এ সকল নির্দেশনা দেন।
জেলা প্রশাসক বা ডিসিদের প্রধানমন্ত্রী যে সকল নির্দেশনা দিয়েছেন তার মধ্যে তৃণমূলে সেবা পৌঁছে দেওয়া, মাদক নিয়ন্ত্রণ, জঙ্গিবাদ দমন, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. ডিসিদের সরকারি দপ্তরগুলোর বিদ্যমান সকল সেবা তৃণমূলে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে তথ্য মেলা, সেবাসপ্তাহ পালনসহ ইত্যাদি কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
২. সরকারি সেবা পেতে সাধারণ মানুষ যাতে কোনোভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হন, ডিসিদের সেদিকে কঠোর দৃষ্টি রাখতে হবে।
৩. তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করতে হবে। মাঠ পর্যায়ে গিয়ে জনগণের কথা শোনার ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে।
৪. গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্ভাবনাময় স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে উদ্যোগী হতে হবে। দেশীয় সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে জোর দেওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। আর কীভাবে তা সম্ভব ডিসিদের তা ভাবার নির্দেশনা দেন তিনি।
৫. দেশের যুবসমাজকে মাদকের ভয়াবহ থাকা থেকে রক্ষা করতে হবে। এই উদ্দেশ্যে মাদকবিরোধী অভিযান চলবে।
৬. জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে সারা দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে।
৭. শিল্পাঞ্চলে শান্তি রক্ষা, পণ্য পরিবহন ও আমদানি-রফতানি নির্বিঘ্ন করতে ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পেশিশক্তি ও সন্ত্রাস নির্মূল করার ব্যবস্থা গ্রহণ করার কোথাও বলেছেন তিনি। এক্ষেত্রে অপরাধীদের দলীয় পরিচয় বিবেচনা করার নির্দেশে দিয়েছেন তিনি ডিসিদের।
৮. শিক্ষার সব স্তরে নারী শিক্ষার হার বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে ডিসিদের। এছাড়া ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মূলধারায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৯. ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বাড়াতে হবে। এছাড়া সরকারি ভূমি রক্ষায় সর্বদা দৃষ্টি রাখতে হবে।
১০. কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় সকল উপাদান অর্থাৎ সার, বীজ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ইত্যাদির সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে হবে।
১১. দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম আরও জোরদার করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে ডিসিদের।
১২. ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বাজারজাতকরণ প্রতিরোধে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে এবং এই ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড কঠোর হাতে দমন করতে হবে।
১৩. আদালতে মামলার জট কমানোর উদ্দেশ্যে এবং সাধারণ মানুষকে যাতে সহজে সুবিচার দেওয়া যায় সেই উদ্দেশ্যে গ্রাম আদালতগুলোকে কার্যকর করতে হবে।
১৪. পরিবেশ রক্ষায়ও কাজ করতে হবে ডিসিদের। এই উদ্দেশ্যে জনসচেতনতা বাড়াতে এবং এই বিষয়ে আইন ও বিধি-বিধানের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
১৫. প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় প্রশমনে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২’ এর প্রয়োগ করতে হবে এবং এ সংক্রান্ত স্থায়ী নির্দেশনাবলী অনুসারে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
১৬. বাজার ব্যবস্থার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির যেকোনো অপচেষ্টা কঠোর হাতে দমন করার কথা বলেছেন তিনি।
১৭. সমাজের প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
১৮. নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে এবং নারী ও শিশু পাচার, যৌতুক, ইভটিজিং এবং বাল্যবিয়ের মতো সামাজিক সমস্যার রোধে ডিসিদের নিজ নিজ জেলায় নজরদারি বাড়াতে হবে।
১৯. নারী নির্যাতন বন্ধে নারীর প্রতি সহিংসতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
২০. ডিসিরা জেলা পর্যায়ে যেসব কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সেসব কমিটিকে সক্রিয়, গতিশীল ও ফলপ্রসূ করতে হবে।
২১. দেশের সকল পার্বত্য জেলার ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, বনাঞ্চল, নদী-জলাশয়, প্রাণিসম্পদ এবং গিরিশৃঙ্গগুলোর সৌন্দর্য সংরক্ষণ করতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
২২. ডিসিদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিকাশে নেতৃত্ব দিতে হবে।
২৩. ডিসিদের সবাইকে নিজ নিজ জেলায় ক্রীড়া, বিনোদন ও সৃজনশীল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পরিধি বাড়াতে হবে। বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে জেলার শিশু-কিশোরদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সংস্কৃতিবোধ ও বিজ্ঞানমনস্কতা জাগিয়ে তুলতে হবে।
সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী নিজ কার্যালয়ের শাপলা মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০১৮ উদ্বোধন করেন।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।