নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:১১ পিএম, ২১ অগাস্ট, ২০১৮
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শাসনামল। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রত্যক্ষ মদদে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ওই গ্রেনেড হামলায় রক্তাক্ত হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। রক্তাক্ত হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলাদেশের গণতন্ত্র। এই গ্রেনেড হামলার মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন জঙ্গি দল হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি হান্নান। ইতিমধ্যেই অন্য একটি মামলায় তাঁর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। মুফতি হান্নান গ্রেনেড হামলার বিষয়ে পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। মুফতি হান্নানের সেই জবানবন্দিটি নিচে উল্লেখ করা হলো।
‘এই মামলায় পূর্বে একবার স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলাম। তখন আমি সব কথা বলতে পারি নাই। মাননীয় মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্বেচ্ছায় একটি দরখাস্ত দিয়ে আরো কিছু কথা বলার ও লেখার আছে জানালে তিনি আমার দরখাস্ত মঞ্জুর করেছেন। আজকে কারা কর্তৃপক্ষ আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন ওই বিষয়ে আমার বক্তব্য আপনার মাধ্যমে রেকর্ড করতে। আমি বিবেকের তাড়নায় পূর্বের প্রদত্ত দোষ স্বীকারোক্তির সঙ্গে আজকের বক্তব্য পেশ করিতেছি।
জোট সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর বাসা থেকে নেওয়া ১৫টি গ্রেনেড দিয়ে ওই দিন শেখ হাসিনার জনসভায় হামলা চালানো হয়। ওই হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিএনপির সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের মাধ্যমে জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে জোট সরকারের প্রতিনিধি ও তারেক রহমানের পরিচয় হয় এবং হাওয়া ভবনে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বৈঠক হয়। ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হলে বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে সরকার গঠন করে। তখন বিএনপির সঙ্গে আমাদের সংগঠনের সম্পর্ক আরো জোরদার করার লক্ষ্যে হুজির আমির মাওলানা আবদুস সালাম, শেখ ফরিদ, মাওলানা ইয়াহিয়া, আবু বক্কর, জাহাঙ্গীর বদর (জান্দাল), চট্টগ্রামের এমপি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও কুমিল্লার মুরাদনগরের এমপি কায়কোবাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমাদের আমির আবদুস সালাম তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
তাঁরা ১৯৯৬ সালে ধানখালীতে গ্রেপ্তার হওয়া ৪১ জনকে হাইকোর্ট থেকে জামিনের ব্যবস্থা করে দেন। এইভাবে তাঁদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত থাকে এবং তাঁরাও সহায়তা করতে থাকেন। ২০০৩ সালের শেষের দিকে আমাদের আমির আবদুস সালাম, শেখ ফরিদ, মাওলানা তাজউদ্দিনের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের যোগাযোগ হয়। তাঁরা বাবর সাহেবের বেইলি রোডের সরকারি বাসায় যান। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জি কে গাউস, কমিশনার আরিফ (সিলেট), মাওলানা ইয়াহিয়া, আবু বক্কর ওরফে আবদুল করিম।
আমিও উপস্থিত ছিলাম। সেখানে আমির সাহেবের সঙ্গে আলোচনার পর জি কে গাউস এবং আরিফকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর সিলেটে কাজ করে যাওয়ার জন্য বলেন। এরপর সিলেটে স্থানীয় বিএনপি ও হরকতের লোকরা বিভিন্ন জায়গায় গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায়। ২০০৪ সালের প্রথমদিকে হুজির একটি মিটিং হয়; যেখানে উপস্থিত ছিলেন আমির আবদুস সালাম, মাওলানা শেখ ফরিদ ও জান্দাল। মিটিংটি হয় মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় হুজির অফিস দারুল আরকান মাদ্রাসায়।
মিটিংয়ে আবু বক্কর, মাওলানা ইয়াহিয়াও উপস্থিত ছিলেন। মিটিংয়ে কিভাবে তারেক রহমান ও বাবরের সঙ্গে কথা বলা যায় সে আলোচনা হয়। পরে মোহাম্মদপুর সাতমসজিদে মাওলানা আবদুস সালাম, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা তাজউদ্দিন, কাশ্মীরী নাগরিক আবদুল মাছেদ ভাটসহ একসঙ্গে পরামর্শ করে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যার পরিকল্পনা করি। মাওলানা তাজউদ্দিন গ্রেনেড সরবরাহ করার দায়িত্ব নেন। তাজ ভাই বলেন, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ও প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর আমাদের সাহায্য করবেন বলে জানিয়েছেন।
তারেক রহমানের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর একদিন (তারিখ ও সময় মনে পড়ছে না) মুরাদনগরের এমপি কায়কোবাদ সাহেব আমাদের হাওয়া ভবনে নিয়ে গিয়ে তারেক রহমান ও হারিছ চৌধুরী সাহেবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। আমরা আমাদের কাজকর্মের জন্য তাঁদের সাহায্য ও সহযোগিতা চাইলে তারেক রহমান সর্বপ্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এরপর আমরা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাদের হত্যার জন্য মোহাম্মদপুরসহ আরো কয়েক জায়গায় গোপন মিটিং করি। ২০০৪ সালের আগস্ট মাসে (তারিখ স্মরণ নাই) সিলেটে গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে ঢাকার মুক্তাঙ্গনে আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সভার সংবাদ জানতে পারি।
সেখানে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেই। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পুনরায় তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত হয়। আমি মাওলানা আবু তাহের, শেখ ফরিদ, মাওলানা তাজউদ্দিন, মাওলানা রশিদসহ আল মারকাজুলের গাড়িতে করে হাওয়া ভবনে যাই। সেখানে হারিছ চৌধুরী, লুৎফুজ্জামান বাবর, জামায়াতে ইসলামের আলী আহসান মুজাহিদ, ব্রিগেডিয়ার রেজ্জাকুল হায়দার, ব্রিগেডিয়ার আবদুর রহিমকেও উপস্থিত পাই। কিছুক্ষণ পর তারেক রহমান আসেন।
আমরা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর হামলার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তাঁদের সহায়তা চাই। তখন তাঁরা আমাদের সকল প্রকার প্রশাসনের সহায়তার আশ্বাস দেন। তারেক সাহেব বলেন যে, আপনাদের এখানে আর আসার দরকার নাই। আপনারা বাবর সাহেব ও আবদুস সালাম পিন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ করবেন। তাঁরা আপনাদের সকল প্রকার সহায়তা করবে।
১৮ আগস্ট আমি আহসান উল্লাহ কাজল, মাওলানা আবু তাহেরকে নিয়ে আবদুস সালাম পিন্টুর ধানমণ্ডির সরকারি বাসায় যাই। সেখানে আবদুস সালাম পিন্টু, বাবর, মাওলানা তাজউদ্দিন, কমিশনার আরিফ ও হানিফ পরিবহনের হানিফ উপস্থিত ছিলেন। পিন্টু ও বাবর বলেন যে, কমিশনার আরিফ ও হানিফ সাহেব আপনাদের সকল প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করবে এবং আমাদের সকল প্রকার নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে। সে মোতাবেক ২০ আগস্ট জান্দাল ও কাজল আবদুস সালাম পিন্টুর বাসা থেকে ১৫টি গ্রেনেড ২০ হাজার টাকা গ্রহণ করে বাড্ডার বাসায় নিয়ে আসেন। পরদিন ২১ আগস্ট আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে গ্রেনেড হামলা চালাই।’
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।