নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১১ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮
দারিদ্র্যতার অভিশাপে এ দেশ জর্জরিত থেকেছে বহুকাল। নিদারুণ শোষণের ফলে দারিদ্র্যতা ও বৈষম্য পরিপুরক হয়ে দরজায় করাঘাত করেছে বারে বারে। তবে টানা দশ বছর সরকার পরিচালনা করে এ দারিদ্র্য ও বৈষম্যের উর্ধমুখীর উল্কাগতি নিম্নমুখী করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সেই ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি ছিল বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ হিসেবে। বাংলাদেশ মানেই যেন বন্যা, খরা, জলোচ্ছাস, কঙ্কালসার মানুষের দেশ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী ইশতেহারে ২১০০ পরিকল্পনায় দলটি দেশের দারিদ্র্যতা ও বৈষম্য শুন্যের কোটায় নামিয়ে আনার পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ঘোষিত ইশতেহারে গতকাল মঙ্গলবার ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের সাফল্য দেশীয় পরিমণ্ডলের বাইরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে। দলটি তার অঙ্গীকার অনুযায়ী ২০১৮ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের হার ২১ শতাংশে এবং অতি দারিদ্র্যের হার ১১.৩ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। পাশাপাশি বৃদ্ধি পেয়েছে গড় আয়ুও।
ইশতেহারে দলটি তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় বলেছে, বর্তমানে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় ৪ কোটি ৯২ লাখ লোক বিভিন্ন প্রকার আর্থিক সহযোগিতা পাচ্ছে; আগামী পাঁচ বছরে এই খাতে বরাদ্দ দ্বিগুণ করা হবে। দেশ থেকে ভিক্ষাবৃত্তি ও ভবঘুরেপনা সম্পূর্ণ উচ্ছেদ করা হবে। দারিদ্র্যসীমা ও চরম দারিদ্র্যের হার যথাক্রমে ১২.৩ ও ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে দরিদ্র জনসংখ্যা ২.২ কোটির নিচে নামানো হবে। প্রতিটি পরিবারে অন্তত একজনের নিয়মিত রোজগার নিশ্চিত করে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্য হাসিল করা হবে। পল্লি সঞ্চয় ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের মাধ্যমে পল্লী জনপদের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা হবে। পিকেএসএফ’র ৮ মিলিয়ন ঋণ গ্রহীতার মধ্যে ৯১ শতাংশ নারী। সকল ক্ষুদ্র ঋণে নারীদের অগ্রাধিকার প্রদান অব্যাহত রাখা হবে। সেইসঙ্গে আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরিধী আরও বৃদ্ধি করে সবার জন্য বাসস্থানের মতো মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
দুস্থ-অসহায় মানুষের জন্য দুস্থ ভাতা, স্বামী-পরিত্যক্তা ও বিধবা মহিলাদের জন্য ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্কদের জন্য শান্তি নিবাস, আশ্রয়হীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প ইত্যাদি কর্মসূচি ইতোমধ্যে চালু রয়েছে বলে দলটি দাবি করছে।
ধনী-দরিদ্র ও শহর-গ্রাম পর্যায়ে আয় বৈষম্য হ্রাস করার লক্ষ্যে অঙ্গীকারা করেছে আওয়ামী লীগ। পরপর দুই মেয়াদে সরকার পরিচালনায় দলটি বৈষম্য দূরীকরণের নীতি, কৌশল এবং তার আলোকে কর্মসূচি নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছে। বৈষম্য দূরীকরণে গৃহীত পরিকল্পনা ও কর্মসূচির পরিধী অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করে জোরদার করার পরিকল্পনা করেছে দলটি। ২০৪১ এর মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গিকার করেছে আওয়ামী লীগ। এমনটি হলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে (২০৭১) বাংলাদেশ উঠে আসবে উন্নত দেশের সারিতে।
বাংলাইনসাইডার/এমএস/বিকে
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।