নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৩৯ পিএম, ০৪ জুলাই, ২০১৯
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও বড় এবং ঐতিহ্যবাহী নদী বন্দর আরিচা ঘাট এলাকাসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ফসলি জমি ভাঙনের মুখে রয়েছে। বর্ষা মৌসুম শুরু হতে না হতেই নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথেই বন্দর এলাকার আরিচা-জাফরগঞ্জ কাম নদী রক্ষা বাধের নিহালপুর, ঘাটের পুরাতন ট্রাক টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, গরুর হাট এলাকায় ইতিমধ্যে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এ ভাঙ্গনের তীব্রতা নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে বাড়তে থাকলে যেকোন সময় মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ার আশংঙ্কা আরিচা নদীবন্দরসহ শিবালয় ও তেওয়া ইউনিয়নের ২০/২৫ টি গ্রাম এমনি নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়তে পারে শিবালয় থানা, বিআইডব্লিউটিএ ও টিসির আরিচা আঞ্চলিক কার্য্যালয়সহ আরিচা বেলায়ের হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়, নিহালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, আরিচা পল্লী বিদ্যুতের সাব ষ্টেশন, বিদ্যুতের খুটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পিডিবির কারখানা। নদী বন্দরটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেলে বন্দর এলাকার হাজারের উপরে ব্যবসায়ী পথে বসে যাবে, কর্মহীন হয়ে যাবে হাজার হাজার মানুষ আর গৃহহীন হয়ে পড়বে কয়েক হাজার পরিবার। তবে বন্দর ও এর আশের পাশের এলাকা নদী ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষায় এখনো কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দা ও বন্দর ব্যবসায়ীদের।
নিহালপুর এলাকার এক বাসিন্দা জানান, শুকনো মৌসুমে যমুনা নদীর তীর থেকে ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলনের হিড়িক পড়ে যায়। এই অবৈধ ড্রেজার ও মাটি ব্যবসায়ীরা কেউ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী আবার কেউ ক্ষমতাসীন দলের নেতার ছত্রছায়ায় ব্যবসা চালিয়ে যায়। তাই আমরা ভয়ে তাদের সামনে গিয়ে কথা বলতে সাহস পাইনা বা বাধাদেইনা। বা কেউ তাদের বাধাদিতে গেলেও বিভিন্ন হামলা - মামলার ভয় দেখায় আবার অনেক সময় পুলিশ দিয়ে হয়রানির চেষ্টা করে যে কারনে কেউ সম্মুখে তাদের বাধা দেওয়া বা কিছু বলার সাহস পায়না। আর ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলনের ফল আপনারাতো নিজ চোখেই দেখতে পাচ্ছেন। আরিচা বন্দরসহ আশেপাশের এলাকায় নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। যেকোন সময় পুড়ো এলাকাটিই হয়তো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
চর শিবালয় এলাকার আরেক বাসিন্দা জানান, রাজপথে আওয়ামিলীগ, বিএনপি, জামায়েতের সম্মুখ যুদ্ধ চললে অবৈধ এ ড্রেজিং এবং মাটির ব্যবসায় এরা কিন্তু মামাতো- খালাতো ফুফাতো ভাইয়ের মতোন। যখন যেদল ক্ষমতায় থাকে তখন সে দলের প্রভাবশালী নেতা-কর্মীদের ছত্রছায়ায় এরা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে অবাধে। আর প্রতিফল পাচ্ছে এলাকার জনগন গ্রামকে গ্রাম মাঠকে মাঠ নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে।
আরিচা গরুর হাট এলাকার এক বাসিন্দা জানান, নদীর তীরবর্তী স্থানে ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলনের ফলে তীরের তলদেশে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়। আর বর্ষা মৌসুম এলে পড়ে নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে ওই গর্তের স্থানে পানির ঘুর্ণিপাকের সৃষ্টি হয়ে প্রবল বেগে সেই পানি তীরে আশ্রে পড়ার ফলে নদীর পার ভাঙ্গনের কবলে পড়ে।
আরিচা বন্দরের এক ব্যবসায়ী জানান, পানি বাড়ার সাথে সাথেই এখানে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে ভাঙ্গনের তীব্রতা এখনো কম। তবে পানি আরো বাড়লে ভাঙ্গনের তীব্রতা বাড়বে। আর এই ভাঙ্গনের তীব্রতা বাড়লেই কয়েক মিনিটের মধ্যেই আরিচা বন্দর এলাকাটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে জানান তিনি।
বন্দর সমিতির আরেক ব্যবসায়ী জানান, নদী ভাঙ্গনের হুমকির মধ্যে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি। কখন জানি পুরো বন্দর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায় এ আতঙ্ক নিয়ে দিন পার করছি আমরা। রাতের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে নদী ভাঙ্গন আতঙ্কে। আমি সহ আরো দুই হাজার ব্যবসায়ী আছেন। যাদের ব্যবসার উপর নির্ভর করে পুরো সংসার পরিবারের মানুষগুলোর মুখে অন্যজুটে এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপার্জিত অর্থ থেকে। যদি নদী ভাঙ্গনে বন্দরটি হারিয়ে যায় তাহলে আমাদের ও আমাদের পরিবারের সকলকেই অনাহারে মরতে হবে।
বন্দরের আরেক ব্যবসায়ী জানান, গত মে মাসের জাফরগঞ্জ- আরিচা কাম নদী রক্ষা বাধের নিহাল পুরের অংশে ফাটল ধরলে সে সময় সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ বাধটি মেরামতে কোন উদ্যোগ নেয়নি। পরে স্থানীয়দের সেচ্ছাশ্রমে বাধের ফাটল অংশে অস্থায়ী মেরামত করা হয়। গত এক-সপ্তাহ যাবৎ আরিচা নদী বন্দর এলাকাসহ আশেপাশের এলাকায় নদী ভাঙ্গন শুরু হলেও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কেউই এ বন্দরটি রক্ষায় বা আশেপাশের এলাকা ভাঙ্গনরোধে কার্য্যকরী কোন পদক্ষেপই গ্রহন করেননি। তাছাড়া এ বন্দরটি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে কালের সাক্ষী হয়ে আছে। তাই এ বন্দরটি রক্ষায় আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয়ে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এফ এম ফিরোজ মাহমুদ জানান, ভাঙ্গন কবলিত এলাকাটি ইতিমধ্যে পরিদর্শন করা হয়েছে । ভাঙ্গনের বিষয়টি উর্দ্ধতন কতৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। নদী ভাঙ্গনরোধে উর্দ্ধতন কতৃপক্ষ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থায়ী বাধ নির্মানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। তাছাড়া বন্দরটি রক্ষায় নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে ইতিমধ্যে ২ লাখ টাকা ব্যায়ে অস্থায়ী বাধ নির্মানের কাজ চলছে ।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের মে মাসের প্রথম দিকে আরিচা-জাফরগঞ্জ কাম নদী রক্ষা বাধের নিহালপুর অংশের বাধের তলদেশে ফাটল দেখা দেয়। বিষয়টি সেসময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের অবহিত করা হলে। ঔ সময়ে মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ থাকার অজুহাত দেখিয়ে বাধটি পুন সংস্কার বা মেরামত না করলে। সেসময়ে স্থানীয় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রশাসনের এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগীতা ও সেচ্ছাশ্রমে বাধের ফাটলের অংশটি অস্থায়ীভাবে মেরামত করা হয়।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাপদাহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।
প্রথম দুই দফা ভোটের যে হার, তাতে বিজেপির মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিজেপির নেতারা ভোটে যে ভূমিধস বিজয় আশা করছিলেন সেটি হবে না। ভারতের কোন কোন গণমাধ্যমগুলো ভোটের ফলাফলে নাটকীয় ঘটনা ঘটারও ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে ২০০৪ সালের নির্বাচনে যেভাবে কংগ্রেস অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে বিজেপিকে ধরাশায়ী করেছিল সেরকম কোন ঘটনা ঘটতেও পারে বলে মনে আশঙ্কা করছেন অনেকে। অবশ্য এখনও আরও পাঁচ দফা ভোট বাকি আছে এবং বিজেপি আশা করছে যে, পরবর্তী ধাপগুলোতে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে এবং বিজেপি তাদের জয়ের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখবে। নরেন্দ্র মোদি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে দেওয়ার জন্য বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন।
ভারতের নির্বাচনের ফলাফল কী হবে তা বোঝা যাবে আগামী ৪ জুন। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে ভোটের হাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে এটা স্পষ্ট যে, ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোটের যে নিরঙ্কুশ বিজয়ের ধারণা করা হয়েছিল, সেটি বাস্তবতা নাও পেতে পারে। আর এ কারণেই মোদী যদি শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন, তাহলে সেটি হবে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বড় ব্যতিক্রমী ঘটনা এবং এটি হবে ভারতের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চমক।
এখন যখন ভারতের নির্বাচনে একটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বা অনিশ্চয়তার ফলাফলের শঙ্কা জেগেছে তখন প্রশ্ন উঠছে যে, বিজেপি যদি এই নির্বাচনে পরাজিত হয় তাহলে বাংলাদেশে কী হবে? গত দুটি নির্বাচনে ভারতের বিজেপি সরকার বাংলাদেশকে নিরঙ্কুশভাবে সমর্থন দিয়েছে। ২০১৮ এবং ২০২৪ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে বিজেপি সরকার।
বিশেষ করে ২০২৪ এর নির্বাচনে ভারতীয় সরকারের পরিপূর্ণ সমর্থন ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করত এবং এই নির্বাচনকে অস্বীকৃতি জানাত বলেও অনেকে মনে করেন। মার্কিন মনোভাব পাল্টানোর ক্ষেত্রে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আর নির্বাচনের পর বিএনপি থেকে শুরু করে জাতীয় পার্টি প্রত্যেকেই বলছে যে, ভারত বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখেছে। যদিও এরকম অভিযোগকে আওয়ামী লীগ অস্বীকার করে এবং আওয়ামী লীগ মনে করে যে, জনগণের ভোটে তারা নির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি আওয়ামী লীগ বা বিজেপি কেউই অস্বীকার করে না।
এখন প্রশ্ন হল, যদি বিজেপি পরাজিত হয়, ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশের সমীকরণ কী হবে? কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বর্তমান সরকারের জন্য সমীকরণের কোন পরিবর্তন হবে না। কারণ ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গেও আওয়ামী লীগ সরকারের একটি সুসম্পর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যে ইন্ডিয়া জোটের প্রধান দল কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছে।
অনেকে মনে করেন যে, এখন ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী মনোভাবের কারণে সীমান্তে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য রাখা হচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশের মধ্যে একটা ভারতবিরোধী মনোভাব তৈরি হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যদি নরেন্দ্র মোদি তাহলে এই অবস্থানের পরিবর্তন হবে। দুই দেশের সম্পর্ক আরও বিকশিত হবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভারত লোকসভা নির্বাচন মল্লিকার্জুন খাড়গে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।