নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে ৫ সদেস্যর একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারা আওয়ামী লীগ এবং এর ভ্রাতৃপ্রতীম অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের অনিয়ম, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক তৎপরতার ব্যাপারে তদন্ত করবে, খোঁজ খবর নিবে এবং ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করবে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার দলের ভিতর শুদ্ধি অভিযানের সূচনা করেছেন। কারণ তিনি মনে করেছেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের যে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখতে হলে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদকে দমন করতে হবে। এটা বন্ধ করার জন্য তিনি ঘর থেকে কাজ শুরু করতে চান। যদি আওয়ামী লীগের মধ্যেই সন্ত্রাসীদের বসবাস থাকে। আওয়ামী লীগের মধ্যে যদি জঙ্গিদের ঢেরা হয় কিংবা আওয়ামী লীগের নেতারাই যদি দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে পড়েন তাহলে এই উন্নয়ন যাত্রাকে ধরে রাখা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০ এবং ২১ ডিসেম্বর কাউন্সিল ঘোষণার আগেই আওয়ামী লীগের মধ্যে শুদ্ধি অভিযানের কাজ শুরু করা হচ্ছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সারাদেশে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সহযোগি ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের ৫ টি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করা হবে। এই অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. আওয়ামী লীগের কোন নেতাকর্মী মাদক চোরাচালান বা মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কিনা বা মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় কিনা।
২. আওয়ামী লীগের কোন নেতাকর্মী জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিনা। জঙ্গিবাদকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় কিনা।
৩. আওয়ামী লীগের কোন নেতাকর্মী সন্ত্রাসবাদকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় কিনা বা সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে জড়িত কিনা বা ক্যাডার ভিত্তিক রাজনীতি করে কিনা এবং ব্যবসা বাণিজ্য করার জন্য তারা সন্ত্রাসকে বাহন হিসেবে ব্যবহার করেন কিনা।
৪. আওয়ামী লীগের কোন নেতাকর্মী দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কিনা কিংবা কমিশন বাণিজ্য, চাঁদা আদায় বা অন্যকোন দুর্নীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত কিনা।
৫. আওয়ামী লীগের কোন নেতাকর্মী নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন বা কোন নৈতিক স্থলনজনিত অপরাধের সঙ্গে যুক্ত কিনা বা তাদেরকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় কিনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই ৫ টি বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। সারাদেশে যে সমস্ত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগগুলো রয়েছে সেসব অভিযোগ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। একটি সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে প্রতিদিনই বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং নেতাকর্মীদের মাধ্যমে প্রচুর অভিযোগ আসে বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এইসব অভিযোগগুলোর সবটাই যে সত্যি, এমনটাও নয়। কিছু কিছু অভিযোগ সত্যি, কিছু কিছু অভিযোগ প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কৌশল। সে কারণেই অভিযোগগুলোর ব্যাপারে যাচাই বাছাই করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি গত শনিবারে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন যে তিনি ক্যাডার, সন্ত্রাস এবং দুর্নীতির বিষয়ে কোনো আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবেন না। আগামী কাউন্সিলের আগে আওয়ামী লীগকে তিনি ঢেলে সাজাতে চান। যেন জনগণের কাছে একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে সংগঠনটিকে উপস্থাপন করা যায়। সে কারণে তিনি দলে একটি স্বচ্ছ এবং ক্লিন ইমেজ আনতে চাইছেন। যাতে জনগণের মাঝে আস্থা সৃষ্টি হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, যে আওয়ামী লীগ সভাপতি মনে করছেন আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে জনগণের মাঝে বিভিন্ন নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হতে পারে। এই ধারণা যাতে না হয়, জনগণ যেন এই সত্যটা বিশ্বাস করে যে আওয়ামী লীগই এদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতির ধারক বাহক- সেটি প্রতিষ্ঠিত করার জন্যেই তিনি এই উদ্যোগ নিয়েছে। যে ৫ জনকে এই বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা কেউই আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের নেতা বা কর্মকর্তা নন বা আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত নন। বরং তারা আওয়ামী লীগের থিংক ট্যাংক এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। সারা বাংলাদেশে তাদের গবেষণার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই অভিজ্ঞতা দিয়েই আওয়ামী লীগ সভাপতি গত নির্বাচন এবং তার আগের নির্বাচনে সারাদেশে মাঠজরিপ চালিয়েছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে যে, এই থিংক ট্যাংক আগামী একমাসের মধ্যে রিপোর্ট দেবেন এবং আওয়ামী লীগে যারা আদর্শ অনুসরণ না করে সুবিধা আদায় করছে, সেসব বিপথগামী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের তালিকা প্রণয়ন করা হবেই। এরপরেই আওয়ামী লীগ সভাপতি তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে এটা নিশ্চিত জানা গেছে যে, যাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকবে তারা আর যাই হোক আগামী সম্মেলনে ঠাঁই পাবেন না।
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জেলা প্রশাসক সম্মেলন প্রধানমন্ত্রী
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।