ইনসাইড বাংলাদেশ

বিএনপির আমলে বুয়েটের সনি হত্যার কথা মনে আছে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২:৫৩ পিএম, ০৮ অক্টোবর, ২০১৯


Thumbnail

সাবেকুন নাহার সনির কথা মনে আছে? চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ স্কুলে মাধ্যমিক দিয়ে ভর্তি হন চট্টগ্রাম ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে। চিকেন পক্সের কারণে দুটো বাদ দিয়ে এইসএসসির বাকি সব পরীক্ষা দিতে হয়েছিল সিক বেডে শুয়ে। তবু কৃতিত্বের সাথে স্টার মার্ক পেয়ে পাশ করে যান। অতঃপর ১৯৯৯ সালে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমি-কৌশল বিভাগে। তাদের ব্যাচের নাম ছিল- স্বাপ্নিক’৯৯। বেশ সতেজ হাসি-খুশি থাকতেন তিনি। লেভেল-১ টার্ম-২ পর্যন্ত ছিলেন হলেই। এরপরে লেভেল-২ টার্ম-১ –এর প্রথম দিকে হলের সিট ছেড়ে দিয়ে পরিবারের সাথে ঢাকার বাসায় উঠেন।

অতঃপর শুরু হলো লেভেল-২ টার্ম-২। `স্বাপ্নিক` বুয়েটিয়ানরা প্রস্তুতি নিচ্ছিল লেভেল পূর্তি উৎসবের। এর সাথে বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হয়ে যাওয়ায় বুয়েটের প্রথা অনুযায়ী ক্লাস ছুটির দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছিল। সব মিলিয়ে বুয়েট ছিল সরগরম।

তবে এটাই ক্যাম্পাসের সম্পূর্ণ চিত্র নয়। এর পাশাপাশি বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-জুড়ে চলছিল তৎকালীন সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ‘ছাত্রদলের’ দৌরাত্ম। সাধারণত বুয়েট পলাশী বাজার প্রভৃতি এলাকার চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল ক্যাডাররাই দেখভাল করতো। এবং তখনকার ঢাবি-র ছাত্রদল ক্যাডার সুর্য সেন হলের ‘টগর’-ই ছিল এই টেন্ডার রাজ্যের মূল নিয়ন্তা। এদিকে চট্টগ্রামের সাকা চৌধুরীর অনুগত ও তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ‘পিন্টু’-র স্নেহভাজন মোকাম্মেল হায়াৎ খান ‘মুকী’ ছিল ছাত্রদল বুয়েট শাখার সভাপতি। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারন সম্পাদকের পদটিও ছিল তার দখলে। এই মুকী যখন নিজ এলাকার তথা বুয়েটের চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজির ‘দায়িত্ব’ নিজে বুঝে নিতে চায় এবং সেই লক্ষে নিজস্ব গানম্যান, ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলে বিপত্তি বাঁধে তখনই। বুয়েটকে কেন্দ্র করে এই দুই ছাত্রদল ক্যাডার ‘টগর’ ও ‘মুকী’-র বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নেয়। জুন মাসের শুরুর দিকে বেশ বড় অংকের একটা টেন্ডারকে সামনে রেখে টগর-মুকীর শক্তিমত্তার চূড়ান্ত পরীক্ষা অনিবার্য হয়ে উঠে।

সেদিন ৮ই জুন সকালবেলা বিশ্বকাপ উপলক্ষে ছুটির দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে প্রধান ফটকে তালা মারা হয়। ভিসি আর ছাত্রপক্ষের মধ্যে শুরু হয় তর্ক-বিতর্ক। গেট আটকানোর ফলে ঐদিন ক্লাস হয়নি। লেভেল পূর্তি উৎসবের প্রস্তুতির জন্য স্বাপ্নিক’ ৯৯ ব্যাচের অনেকের মতো সনিও ক্যাম্পাসে ছিলেন। বুয়েট বন্ধের উপক্রম হওয়াতে তাঁদের অনুষ্ঠানও পিছিয়ে যায়। ব্যস্ততা না থাকায় সবাই ক্যাম্পাসে বসে খোশ-গল্পে মেতেছিলেন।

ওদিকে টগর-মুকী একে অন্যকে আক্রমনের উদ্দেশ্যে বুয়েটে নিজেদের পজিশন নিচ্ছিল। কয়েক মুহূর্তে বুয়েট পরিণত হয় যুদ্ধক্ষেত্রে। বেলা ১টার দিকে প্রথম গোলা-গুলির আওয়াজ শোনা যায়। এর কিছুদিন আগে এসব ঘটনার জের ধরে ক্যাম্পাসের ভেতরেই খুন হয়েছিলেন ঠিকাদার ‘রাশেদ’। তাই গুলির শব্দে ছাত্র-ছাত্রীরা আতংকিত হয়ে ওঠে। কেউ আশ্রয় নেয় ক্যাফেতে, কেউ হলের দিকে ছুটে যায়। সনি ছাত্রী হলে যাওয়ার পথে আহসান উল্লাহ হলে ঢুকে পড়েন। ততক্ষনে টগর গ্রুপ বুয়েট শহীদ মিনারে চলে আসে। আর মুকী গ্রুপ অবস্থান নেয় তিতুমীর হলে। প্রথম রাউন্ড গুলি বিনিময়ের পর শব্দ থেমে গেলে সনি একটু অপেক্ষা করে আহসান উল্লাহ হল থেকে বেরিয়ে আসেন। আর এটাই তার জীবনাবসানের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বুয়েটে প্রাধান্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ক্ষমতা ও অর্থলিপ্সু ছাত্র নামধারী এই দুই ক্যাডারবাহিনীর সংঘর্ষের মাঝে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন সনি। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে তাঁর কয়েকজন বন্ধু মিলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করিয়ে দেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। বিকাল ৩টার দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বুয়েটের এক নিরপরাধ হাস্যোজ্জ্বল মেধাবী মুখ।

সনির এই মৃত্যুশোক বুয়েটের সাধারণ ছাত্রদের মাঝে সত্যিকার অর্থেই সেদিন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মুখোমুখি দাঁড়াবার শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছিল। সেই দিন অর্থাৎ ৮ ই জুন সন্ধ্যাতেই সাধারণ ছাত্রদের প্রায় দুই আড়াই হাজার জনের একটা মিছিল ধেয়ে যায় মুকির রশীদ হলের দিকে। মুকি তখনো সেখানে ছিল কিনা নিশ্চিত না হলেও তার অপকর্মের দুই সহযোগীকে সেখানে ঘিরে ফেলে ছাত্ররা।

প্রসংগত সনি মারা যাওয়ার সময় ভিসি ছিলেন নুরুদ্দিন। তিনি সনি মারা যাওয়ার পর টিভিতে বলেন, ‘বুয়েটে কোন সন্ত্রাসী নেই, ওরা বহিরাগত’- যা সবাইকে ক্ষেপিয়ে তোলে। পরে তাকে সরিয়ে দেয়া হয় ও আলী মূর্তজাকে দেওয়া হয় দায়িত্ব। সম্ভবত আলী মূর্তজা ছিলেন বুয়েটের ইতিহাসে একমাত্র ভিসি যিনি মৌলবাদী শক্তির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে জুতাপেটা হয়েছিলেন ।

এক পর্যায়ে ছাত্রদের থেকে দাবী ওঠে হল রেইড করে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করার। প্রথমে গড়িমসী করলেও পরে ছাত্রদের প্রবল বিক্ষোভের মুখে ভিসি তা মানতে বাধ্য হন। কিন্তু সেটা ছিলো পুলিশী অভিযানের নামে একটা প্রহসন মাত্র। পুলিশ এসে হল রেইড করার নামে উলটো আন্দোলনকারী ছাত্রদের উপরই চড়াও হয়ে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে, বুয়েট প্রশাসন আর পুলিশের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় পালিয়ে যায় খুনিদের কেউ কেউ। রাতে রশীদ হলে নিচের ফ্লোর থেকে শরীফ ও সায়হাম গ্রেপ্তার হয়। সাধারণ ছাত্ররা শরীফ ও সায়হামের বিছানা পত্র ও কম্পিউটার হলের মাঠে ফেলে পুড়িয়ে দেয় ।

পরদিন থেকে আবার শুরু হয় আন্দোলন, মুকিসহ সকল খুনীর গ্রেপ্তার ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবীতে। ছাত্রদের এই গণবিস্ফোরণ ঠেকাতে সকালেই অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় বুয়েট, হলও ভ্যাকেন্ট করে দেয়া হয়। বিকাল পর্যন্ত হল খালি করার সময় দেয়া হয়। এর পর মাস দুয়েক ধরে বুয়েটের হলে কাউকেই ঢুকতে দেয়া হয়নি, বিশেষ অনুমতি ছাড়া। কিন্তু এতেও থেমে থাকেনি বুয়েটিয়ানরা। বন্ধের মাঝেও চলতে থাকে সভা, মিটিং- মিছিল, স্মারকলিপি পেশ। অবস্থা বেগতিক দেখে এক পর্যায়ে বুয়েট কর্তৃপক্ষ নতুন নাটক ফাঁদে। ৮ জুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। তারা মুকী- শরীফ- স্বপন- সায়হামদের সাথে আন্দোলনকারী ছাত্র সুব্রত, ইন্দ্রনীল, বিজয়, শান্ত, সুদীপ্তসহ আরো অনেককে একই কাতারে ফেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করে। এ ঘটনায় সাধারণ ছাত্রদের সামনে বুয়েট প্রশাসনের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে পারে। বুঝতে বাকি থাকে না এই গণরোষের হাত থেকে খুনীদের বাঁচাতে ছাত্রদল ক্যাডার, সরকারের পা চাটা পুলিশবাহিনীর সঙ্গে তারাও একাট্টা হয়েছে।

আন্দোলনকারীদের এভাবে হেনস্থা করার পর ৬৩ দিনের মাথায় ১১ আগস্ট বুয়েট খুলে দেয়া হয়। ওই দিনেই আবার বেগবান হয়ে ওঠে আন্দোলন । ছাত্ররা এবার শুরু করে আমরণ অনশন। দেশের বিভিন্ন জায়গা থকে বুদ্ধিজীবীরাও এসে এ আন্দোলনের সাথে তাঁদের সংহতি প্রকাশ করতে শুরু করেন। তাঁদের মাঝে ছিলেন ড. হুমায়ুন আজাদ, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ, হারুন-উর- রশীদ, গিয়াস উদ্দিন সেলিম, সিরাজুল ইসলাম, হাজেরা সুলতানা, গোলাম কুদ্দুসসহ আরো অনেকে। আর তার বিপরীতে খুনীদেরকে বাঁচাতে এবার মরিয়া হয়ে ওঠে প্রশাসন। তাদের মদদে ছাত্রদল ক্যাডার আর পুলিশ বাহিনী এবার নগ্নভাবে লাঠি সোঠা টিয়ার গ্যাস নিয়ে হামলে পরে ছাত্রদের উপর । আর হলে বাসায় হুমকি ধামকি দেয়ার তো কোন সীমা পরিসীমা ছিল না।

এতকিছুর পরও আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর আকার ধারণ করতে থাকে। ৭ দিনের মাথায় আবার বন্ধ ঘোষণা হয় বুয়েট। এতেও আন্দোলন স্তিমিত করা যায়নি। ক্যাম্পাস ছেড়ে এবার আন্দোলন শুরু হয় রাজপথে। শাহবাগ- প্রেসক্লাব- শহীদ মিনার মুখরিত বুয়েটিয়ানদের স্লোগানে- ‘সনি হত্যার বিচার চাই’। ওই দমন নিপীড়নের মাঝেই ছাত্ররা গড়ে তোলে ‘সন্ত্রাসবিরোধী বুয়েট ছাত্র ঐক্য’ কমিটি। জাতীয় দৈনিকগুলোতেও আন্দোলন আর আন্দোলনকারীদের উপর নেমে আসা অকথ্য পাশবিক নির্যাতনের চিত্র উঠে আসতে শুরু করে। বুয়েটের ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে এর উত্তাপ ছড়িয়ে পরে দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও।অবশেষে রাষ্ট্রযন্ত্র বাধ্য হয় বিচার কাজ শুরু করতে। মুকি অবশ্য ততদিনে দেশের বাইরে পলাতক। তার অনুপস্থিতিতেই ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতের বিচারপতি শাহেদ নুরুদ্দিন ২০০৩ সালের ২৯ জুন টগর মুকীর ফাঁসির আদেশ দেন। সরকার ২০০৬ সালে টগর-মুকীর ফাঁসির আদেশ বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ব্যবস্থা করে। সেই মামলা এখনো চলছে।

বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ



মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

আদালতে মিল্টনের রিমান্ড চাওয়া হবে: ডিবি

প্রকাশ: ১০:০১ পিএম, ০১ মে, ২০২৪


Thumbnail

‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে অজস্র অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার নামে মামলা প্রক্রিয়াধীন। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডে চাইবে পুলিশ। 

বুধবার (১ মে) রাত ৯টার দিকে ডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন,’মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে মানবপাচার ও নির্যাতনসহ প্রতারণার মামলার করা হবে। মিডিয়ায় যতো অভিযোগ এসেছে সব বিষয়েই তদন্ত করা হবে। এছাড়া রাতে কেনো লাশ দাফন করতেন এই বিষয়ে মিল্টন জানান, মানুষ তাকে প্রশ্ন করে তাই রাতে তিনি লাশ দাফন করতেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী ৯০০ দাফন করলেও ৮৩৫টি লাশের দাফনের কাগজপত্র দেখাতে পারেনি তিনি।’

এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ডিবি পুলিশের একটি দল রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। 

উল্লেখ্য, গত ২৫ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে মানবতার ফেরিওয়ালার মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর সব প্রতারণার খবর প্রকাশ পায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, মিল্টন সমাদ্দার নামক এক ব্যক্তি ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’নামের বৃদ্ধাশ্রম গড়ে রাস্তা থেকে অসুস্থ কিংবা ভবঘুরেদের কুড়িয়ে সেখানে আশ্রয় দেন। সেসব নারী, পুরুষ ও শিশুকে নিয়ে ভিডিও তৈরি করে প্রায়ই তাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করতে দেখা যায়।

মিল্টন সমাদ্দার  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে পাঁচ শঙ্কা

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ০১ মে, ২০২৪


Thumbnail

উপজেলা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রথম পর্যায়ের উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত। ১৫০টি উপজেলায় এখন জনগণ ভোটের অপেক্ষায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৫৯টি উপজেলায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন গতকাল শেষ হয়েছে। সেখানেও এখন নির্বাচনী প্রচারণার ডামাডোল শুরু হয়েছে। কিন্তু উপজেলা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হবে কি না, উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে কি না এবং উপজেলা নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে কি না তা নিয়ে একদিকে যেমন জনগণের সংকট রয়েছে তেমনই নির্বাচন কমিশনও এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত।

উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তারা ভোট বর্জনের ডাক দিয়েছে এবং যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে তাদেরকে ঢালাওভাবে বহিষ্কার করা হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে ৭৩ জন, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৬৩ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। কিন্তু এই সব বহিষ্কার সত্ত্বেও বিএনপির নেতাকর্মীরা উপজেলা নির্বাচনে তাদের আগ্রহ হারায়নি। বরং যারা উপজেলা নির্বাচনে আগ্রহী, তারা দলের নির্দেশ অমান্য করেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে।

জাতীয় পার্টিকে উপজেলা নির্বাচনে তেমন সরব দেখা যাচ্ছে না। সারা দেশে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি এবং হতাশার ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে উপজেলা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হবে কিনা সেটি নিয়ে অনেকের মধ্যেই সংশয় রয়েছে।

উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে পাঁচটি শঙ্কা ক্রমশ দানা বেঁধে উঠছে। 

১. ভোটার উপস্থিতি: উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল ভোটার উপস্থিতি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য নেতাকর্মীদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। এ কারণেই আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছে না। একাধিক প্রার্থী যেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন, দলের ভিতর যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় এবং নির্বাচনে যেন ভোটার উপস্থিতি পারে সেটাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য। কিন্তু আওয়ামী লীগের এই কৌশল কতটুকু কার্যকর হবে, ভোটাররা ভোটে কতটুকু আগ্রহ দেখাবে- সেটি নিয়েও অনেকের সংশয় রয়েছে।

২. আওয়ামী লীগের বিশৃঙ্খল অবস্থা: উপজেলা নির্বাচনে একটা বড় শঙ্কার জায়গা হল আওয়ামী লীগের বিশৃঙ্খলা এবং এই বিশৃঙ্খলা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলেই অনেকে মনে করছেন। উপজেলা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় সে কারণে আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে। কিন্তু দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে বহু এমপি-মন্ত্রীর আত্মীয় স্বজন এবার নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। এই সমস্ত প্রার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের প্রার্থীদের সহিংসতার ঘটনা উপজেলা নির্বাচনকে উত্যক্ত করতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। বিভিন্ন স্থানে তার আলামতও পাওয়া যাচ্ছে।

৩. প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ: নির্বাচনে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য একটি বড় বাধা। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগ মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদেরকে নির্বাচনে না যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু সেই পরামর্শ না শুনেই মন্ত্রী-এমপিরা তাদের স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন। শুধু প্রার্থী করাই নয়, এলাকায় তারা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাও করছেন। এই প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। প্রতিপক্ষকে ঘাবড়িয়ে দেওয়া, ভোটারদেরকে নিরুৎসাহিত করা ইত্যাদি প্রবণতাগুলো উপজেলা নির্বাচনকে ম্লান করতে পারে বলেই অনেকে মনে করছেন।

৪. প্রশাসন এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতা: প্রশাসন এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে উপজেলা নির্বাচনে নিরপেক্ষ থাকার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আর সেই পরামর্শ অনুযায়ী প্রশাসন কতটুকু নিরপেক্ষ থাকবে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। বিশেষ করে প্রভাবশালীরা যখন নির্বাচনের মাঠে হস্তক্ষেপ করবে তখন প্রশাসন এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কতটুকু নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবে সেটি নিয়ে একটি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

৫. ভোটারদের অনীহা: উপজেলা নির্বাচনেও ভোটারদের অনীহা রয়েছে। কারণ একাধিক বিকল্প প্রার্থী এবং ভিন্নমতের প্রার্থী না থাকার কারণে উপজেলা নির্বাচন নিয়েও ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনার অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভোটারদের এই অনাগ্রহ উপজেলা নির্বাচনকে একটি সাদামাটা নির্বাচনে পরিণত করতে পারে বলেই অনেকে মনে করেন।

উপজেলা নির্বাচন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

দ্বাদশ সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন বসছে বৃহস্পতিবার

প্রকাশ: ০৮:৪৭ পিএম, ০১ মে, ২০২৪


Thumbnail

চলমান দ্বাদশ সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২ মে) বিকেল ৫টায়। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে গত ১৫ এপ্রিল এ অধিবেশন আহ্বান করেন।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকেল ৫টায় এ অধিবেশন শুরু হবে। 

অধিবেশন শুরুর আগে সংসদ ভবনে সংসদের কার্য-উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক হবে। বৈঠকে সংসদ অধিবেশনের মেয়াদ নির্ধারণ ছাড়াও আলোচ্যসূচি ও কার্যবিবরণী নিয়ে আলোচনা হবে।

সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, জুনে দ্বাদশ সংসদের প্রথম বাজেট অধিবেশনের আগে অনুষ্ঠেয় এই দ্বিতীয় অধিবেশন তেমন দীর্ঘ হবে না।

এর আগে ৩০ জানুয়ারি সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়ে ৫ মার্চ শেষ হয়।

দ্বাদশ সংসদ অধিবেশন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

আলোচিত সেই মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার

প্রকাশ: ০৮:০৭ পিএম, ০১ মে, ২০২৪


Thumbnail

মানবতার ফেরিওয়ালার মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর সব প্রতারণার অভিযোগ ওঠা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পরিচিত মুখ ও ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বুধবার (১ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ডিবি পুলিশের একটি দল ঢাকার মিরপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।

এর আগে গত ২৫ এপ্রিল কালবেলার প্রিন্ট ভার্সনে ‘মানবিক মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর মিল্টন সমাদ্দার’ শিরনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

মিল্টন সমাদ্দার  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

লক্ষ্মীপুরের তেওয়ারীগঞ্জে নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ, স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ


Thumbnail

লক্ষ্মীপুর সদরের তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরপরই হামলার শিকার হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নেপথ্যে নির্বাচনে কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ। এঘটনায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী দুই প্রার্থীকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখসহ ৯১১ জনের বিরুদ্ধে দুইটি মামলাও দায়ের করেন। ফলে নির্বাচনের পর আনন্দের বদলে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে ওই ইউনিয়নে। 

প্রায় সাড়ে আট বছর পর ওই ইউনিয়নে নির্বাচনকে ঘিরে মানুষের মাঝে ছিলো ব্যাপক আমেজ। আটজন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধীতা করে। এর মধ্যে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি ও অটোরিক্সা প্রতীকের প্রার্থী আক্তার হোসেন বোরহান চৌধুরী ও জেলা কৃষকলীগের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক ইবনে হোসাইন আনারস প্রতীকের প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্ধীতা হয় ব্যাপক। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা থেকে শুরু করে ভোটের দিন সকাল পর্যন্ত ছিলো সেই আমেজ। তবে ভোট গ্রহণ শুরু হলে নারী-পুরুষের ব্যাপক উপস্থিতি নজর কাড়ে সবার। 

অটোরিক্সা প্রতীকের প্রার্থী, সমর্থক, এজেন্ট ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানালেন, ভোটের আগের দিন থেকে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী ভুলু কালো টাকা দিয়ে প্রভাব বিস্তার করে। কেন্দ্রের ভেতর ও বাহিরে নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত ও ভোটারদের নানাভাবে প্রভাবিত করে। এতে করে কয়েকটি কেন্দ্রের বাহির থেকেই নারী ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ না করেই বাড়ি ফিরেন। কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বের করে দেয়ার অভিযোগও করেন কেউ কেউ। 

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আনারস প্রতীকের প্রার্থী জানালেন, তিনি শান্তি চান। তিনি হয়রানি হতেও চান না কাউকে করতেও চান না। সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে, যদি কেউ মনে করে আবারো নির্বাচন করা দরকার তবে তিনি প্রতিদ্বন্ধিতা করতে প্রস্তুত। 

পুলিশ সুপার তরেক বিন রশিদ বলেন, নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার সময় দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এসময় পুলিশের গাড়ির ওপর তারা হামলা করে। এঘটনায় দুই প্রার্থীকেই পুলিশ আটক করে।

লক্ষ্মীপুর  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন