নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০৭ পিএম, ১৩ জুন, ২০১৭
পুষ্টি সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত ৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। বিশেষ করে পুষ্টি পরিস্থিতিতে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশের মতো খাদ্য, পুষ্টি, স্বাস্থ্যর দিক দিয়ে এগিয়ে না থাকলেও উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে অনেক এগিয়েছে বাংলাদেশ।
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে শিশু স্বাস্থ্যে উন্নতি সাধিত হলেও এখনো নারী ও শিশু অপুষ্টি বড় একটি সমস্যা।ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ২০১৬ সালে প্রকাশিত ‘বিশ্ব ক্ষুধা সূচক’ এ দেখা গেছে, ১১৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯০তম। অপুষ্টি, শিশুর উচ্চতার তুলনায় কম ওজন, বয়সের তুলনায় কম উচ্চতা এবং শিশুমৃত্যুর হার বিবেচনায় নিয়ে এ সূচক তৈরি হয়েছে। যে দেশের স্কোর যত কম, সে দেশের পরিস্থিতি তত ভালো।
আবার বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে অনুযায়ী, ওজন বেশি এমন নারী এবং কিশোরী মেয়েদের সংখ্যা গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহরাঞ্চলেই বেশি দেখা যায়। সিলেট ছাড়া অন্যান্য সব জায়গায় উচ্চতার তুলনায় ওজন কম এমন নারীদের হার সমান। আবার বরিশাল এবং সিলিটে কম ওজনের কিশোরীদের হার বেশি। ২০১৩-১৪ সালে সিলেটে কম ওজনের কিশোরীদের হার অনেক বাড়লেও কম ওজনের নারীদের হার বাড়েনি। গত কয়েক বছরে, কিশোরীদের পুষ্টি অবস্থার তেমন উন্নতি না হলেও নারীদের ক্ষেত্রে এসেছে অনেক পরিবর্তন।
বর্তমান সরকার শিশুদের মায়ের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে খুবই সোচ্চার। এজন্য সরকার মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করেছে। মায়েরা যেন সন্তানদের বুকের দুধ নির্বিঘ্নে খাওয়াতে পারেন সেজন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে একটি কর্নার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০১৪ সাল লাগাদ, মায়ের দুধ পান করে এমন অনুর্ধ ৬ মাস বয়সী শিশুর হার দেখা গেছে ৫৫ শতাংশ। খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টির নজরদারি প্রকল্পর তথ্য অনুযায়ী ২০১৩ সালে এমন শিশুদের হার ছিল ৪৩ শতাংশ কিন্তু ইউইএসডির ২০১৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী মায়ের দুধ পান করে অনুর্ধ ৬ মাস বয়সী শিশুর হার ৬০ শতাংশ।
সুস্বাস্থ্যের লক্ষ্যে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্রচারণার আওতায় ৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সের শিশুদের জন্য ভিটামিন ‘এ’ বিতরণকে বাংলাদেশ সরকার অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। প্রতি বছরে এক বা দুইবার সরকার ভিটামিন এ বিতরণের ব্যবস্থা নেয়। এই প্রচারণার আওতায় স্বেচ্ছাসেবীরা এক লাখ ৪০ হাজার স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে এই ভিটামিন ‘এ’ বিতরণ করে থাকে।
জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্রচারণার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুদের প্রথম রাউন্ডে ৯৮ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২য় রাউন্ডে ৯৯ শতাংশ ভিটামিন এ বিতরণ করা হয়। অপর দিকে, ১২-৫৯ মাস বয়সী শিশুদের প্রথম রাউন্ডে ৯৮ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ২য় রাউন্ডে ৯৯ শতাংশ ভিটামিন এ বিতরণ করা হয়।
বিগত ৮ বছরের তথ্য অনুযায়ী, ভিটামিন এ বিতরণের আওতাভুক্ত হয়েছে ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৯৯ শতাংশ শিশু। ২০১৩ সালে ৯৭ শতাংশ আবার ২০১৪ সালে তা বেড়ে ১০০ শতাংশে পৌঁছায়। কিন্তু ২০১৫ সাল নাগাদ তা আবার কিছুটা কমে আসে। সূচকে ১ শতাংশ।
পুষ্টি সেবার দিকে খেয়াল করলে দেখা যায়, বাংলাদেশ জেলা উপজেলাভিত্তিক মোট ৪২৪ টি শিশু স্বাস্থ্য হাসপাতাল রয়েছে। ২০০ টি তীব্র অপুষ্টি সেবাদান ইউনিট এবং ৩৯৫ টি আইএমসিআই ও পুষ্টি সেবাদান কেন্দ্র রয়েছে।সরকারের এসব কর্মসূচির কারণে আগের চেয়ে অনেক শিশু পুষ্টি, মাতৃপুষ্টির হার বেড়েছে।
বাংলা ইনসাইডার/আরএস
মন্তব্য করুন
ফরিদপুরের সালথায় তীব্র দাবদাহে ৩ শিক্ষক ও ১০ শিক্ষার্থী অসুস্থ
হয়ে পড়েছে। অসুস্থদের চিকিৎসা দিতে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে তিন শিক্ষার্থীকে
হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
রোববার (২৮ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের
রামকান্তুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
ও সালথা থানার ওসি ঘটনাস্থল পরিবদর্শন করেন।
অসুস্থদের মধ্যে রয়েছেন রামকান্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
সহকারী শিক্ষক মো. রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, রোজার ঈদের পর থেকে স্কুল বন্ধ ছিল। প্রধান
শিক্ষকও মাতৃত্বকালিন ছুটিতে রয়েছেন। দীর্ঘদিন পর গতকাল রোববার স্কুল খোলা হয়। সকালে
স্কুলে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে প্রথমে বিদ্যালয়ের ক্লাস রুম ও মাঠে জমে থাকা
ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করার কাজ শুরু করি।
তিনি আরও বলেন, কিছু সময় কাজ করার পর তীব্র গরমে আমরা সবাই পানির
পিপাসায় ভুগছিলাম। তখন সবারই গলা শুকিয়ে আসছিল। পরে স্কুলের টিউবওয়েল চেপে ঠান্ডা পানি
বের করে তা পান করি। কিন্তু কিছুক্ষণ পর একে একে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বমি করতে থাকে
এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ সময় স্থানীয় এক যুবক এসে আমাকে বলেন, স্যার ওই টিউবওয়েলের পানি
খেয়েন না, পানিতে বিষ মেশানো হয়েছে। পরে অসুস্থদের দ্রুত সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
নেওয়া হয়। সেখানে সকলকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে রানিতা নামে এক শিশুর অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় তাকে ফরিদপুর
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অসুস্থদের মধ্যে
শিক্ষক সুকলা রানী শীল, রেবেকা বেগম, রবিউল ইসলাম, শিক্ষার্থী সাদিহা, নাহিদ ও তৌকিয়ার
নাম পাওয়া গেছে। বাকিদের নাম পাওয়া যায়নি।
সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল
মমিন বলেন, ‘টিউবওয়েলের পানিতে কোনো ধরনের বিষক্রিয়া পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা
করা হচ্ছে, ওই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অসুস্থদের মধ্যে দুজনের
চিকিৎসা এখনো চলছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে সবাই শঙ্কামুক্ত’।
সালথা থানার ওসি ফায়েজুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রথমে খবর পেয়েছিলাম
টিউবওয়েলের পানি খেয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পরে ঘটনাস্থলে এসে ডাক্তারের
সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তিনি জানিয়েছেন টিউবওয়েলের পানিতে বিষক্রিয়ার কোনো লক্ষণ পাননি’।
এ বিষয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালী
জানান, রোববার স্কুল খোলার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সকালে স্কুলে এসে টিউবওয়েলের পানি
খেয়ে অসুস্থ পরলে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন সবাই মোটামুটি সুস্থ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছেন, তারা বিষক্রিয়ার কোনো আলামত
পাননি। গরমের কারণেও এ ঘটনা ঘটতে পারে। তারপরও টিউবওয়েলের পানি আমরা পরীক্ষা করে দেখব।
একইসঙ্গে আগামীকাল থেকেই ছাত্রছাত্রীরা যাতে নিরাপদ পানি খেতে পারে, সে ব্যবস্থা গ্রহণ
করা হবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাপদাহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন