নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৪২ পিএম, ২৫ মার্চ, ২০২০
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে আজ শুরু থেকেই বেশ রাগান্বিত দেখা যাচ্ছিল। বিএসএমএমই-তে তিনি নেতাকর্মীদের প্রথমে সরে যেতে বলেন। কিন্তু তারা সরে না গেলে রীতিমতো তেড়ে যান। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তিনি বের করে দেন। অনেককে এ সময় ধাক্কা দিতেও দেখা যায়।
খালেদা জিয়া হসপিটাল থেকে বের হয়ে ‘ফিরোজা’য় ফেরার মিনিট ২০ আগে ফখরুল ফিরেছিলেন। কিন্তু তিনি বাড়িতে খুব বেশি সময় থাকতে পারেননি। খন্দকার মোশাররফ আগেই অবস্থান করছিলেন বাড়িতে। কিন্তু খালেদা জিয়া প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে বের হতে দেখা যায় ফখরুলকে। এ সময় বাড়িতে ছিল শুধু খালেদা জিয়ার ৫ সদস্যের চিকিৎসক টিম ও পরিবারের লোকজন।
‘ফিরোজা’ থেকে বের হওয়ার সময় মির্জা ফখরুলকে বেশ রাগান্বিত দেখা যায়। এ সময় নেতাকর্মীরা তাকে ঘিরে ধরে। তিনি সবাইকে হাত দিয়ে সরিয়ে দেন রাগান্বিত হয়ে। এ সময় উপস্থিত কয়েকজন নেতাকর্মী বলেন, চলে যাচ্ছি ধাক্কাবেন না। মির্জা ফখরুল বলেন, তাহলে যান। এখনো আছেন কিসের জন্য। নিষেধ করলে তো শোনেননা।
প্রসঙ্গত, দুই বছরেরও বেশি সময়, সুনির্দিষ্টভাবে বললে দুই বছর এক মাস ১৭ দিন পর নিজ বাসভবন ‘ফিরোজা’য় পা রাখলেন খালেদা জিয়া। দীর্ঘ সাত বছর যে ভবনটি থেকেই বিরোধী দলের রাজনীতির কলকাঠি নেড়েছেন, কারাবন্দি থাকায় দুই বছরেরও বেশি সময় সেই বাড়ি থেকেই দূরে থাকতে হয়েছিল তাকে। সরকারের নির্বাহী আদেশে ছয় মাসের মুক্তি পেয়ে সেই ‘ফিরোজা’তেই প্রত্যাবর্তন করলেন তিনি।
বুধবার (২৫ মার্চ) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে গুলশান ২-এর ৭৯ নম্বর রোডের এনইডি-১ নম্বর বাড়ি ‘ফিরোজা’র পথে রওনা দেন খালেদা জিয়া। ঠিক এক ঘণ্টা পর বিকেল সোয়া ৫টায় সেখানে পৌঁছেছেন তিনি। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার, যার জিম্মাতেই মুক্তি দেওয়া হয়েছে তাকে। তার প্রাইভেট কারে চড়েই নিজ বাসভবনে যাচ্ছেন তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল থেকে। গত বছরের এপ্রিল থেকে কারাবন্দি খালেদা এই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।
শামীম ইস্কান্দার ছাড়াও খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া ডা. হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত মেডিকেল টিমের সদস্যরাও ছিলেন। সবাইকে নিয়ে যখন খালেদা জিয়া ‘ফিরোজা’য় পা রাখেন, সেখানে এক আবেগঘন পরিস্থিতি তৈরি হয়।
এছাড়া খালেদা জিয়ার গাড়ির সঙ্গে হাসপাতাল থেকেই সঙ্গী হন দলীয় নেতাকর্মীরা। তারা গোটা রাস্তা স্লোগান দিতে থাকেন। পথে কারওয়ান বাজারে পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে তাদের ওপর মৃদু লাঠিচার্জও করে। তবে সেখানে তেমন একটা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।