নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৫৬ পিএম, ০৮ এপ্রিল, ২০২০
২৬ মার্চ থেকে দীর্ঘ সাধারণ ছুটিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘরে বসে থেকে কয়েকদিন গণমাধ্যমে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন। এরপর তিনি দু একটি অনুষ্ঠানে বেরিয়েছেন এবং করোনা মোকাবেলা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কি করছে না করছে সে সম্পর্কে বক্তব্যও রেখেছেন।
করোনা মোকাবেলার জন্য যে জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেই কমিটির চেয়ারম্যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কিছু কিছু বিষয়ে তার অনুপস্থিতি এবং সরকারের নীতি নির্ধারক মহলে ডাক না পাওয়ার প্রেক্ষিতে অনেকের মনেই সংশয় দেখা দিয়েছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী কি তাহলে ওএসডি?
গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ৭ জন মন্ত্রীকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে এ বৈঠক করেন। এই বৈঠকে করোনা নিয়েই মূলত আলোচনা হয় এবং করোনা মোকাবেলায় সম্ভাব্য করণীয় কী হবে সেসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু ওই বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং করোনা মোকাবেলায় জাতীয় কমিটির সভাপতি জাহিদ মালেক উপস্থিত ছিলেন না। এতে অনেকে বিস্মিত হয়েছেন।
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী গতকাল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর সঙ্গে যুক্ত হন। এর মাধ্যমে তিনি করোনা মোকাবেলায় করনীয় নিয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা দেন এবং চিকিৎসক-নার্সদের জন্য প্রনোদনার ঘোষণা দেন। তাদের জন্য পুরস্কারের ঘোষণাও দেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন যে, যারা দায়িত্ব পালন করবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী এই নীতি নির্ধারনী সিদ্ধান্ত যখন ঘোষণা করেন তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অন্য একটি কর্মসূচীতে ছিলেন। এই ভিডিও কনাফারেন্সের সময়ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ডাকা হয়নি। অথচ এই ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম এবং সিলেটের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন।
এই দুটি ঘটনার পর একটা প্রশ্ন উঠতেই পারে যে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে কি তাহলে বাদ দিয়েই প্রধানমন্ত্রী করোনা মোকাবেলার রূপ পরিকল্পনা তৈরি করেছেন? তাহলে কি স্বাস্থ্যমন্ত্রী এখন অঘোষিত ওএসডি হিসেবে আছেন?
স্বাস্থ্যমন্ত্রী করোনা নিয়ে যেসব কথা বলছেন সেগুলো সবই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য। এর বাইরে তার নতুন কোনো বক্তব্য নেই। এ কারণেই অনেকের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে যে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাহলে কি শুধু রুটিন কাজের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখেছেন? নীতি নির্ধারণী কাজে কি তার কোনো ভূমিকাই নেই?
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।