নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:২৮ এএম, ১৫ জুলাই, ২০১৭
জাতীয় সংসদের অধিবেশন শেষ হওয়ার পরদিন গতকাল শুক্রবার থেকেই আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সফর শুরু হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন আঙ্গিকে এই সফরের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সফরের অংশ হিসেবে সংসদ সদস্য ও মনোনয়ন প্রত্যাশীদেরকে নিজ নিজ এলাকা সফর করতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে, যত বেশি সংখ্যক সম্ভব দলীয় সংসদ সদস্যকে যার যার এলাকায় গিয়ে জুমার নামাজ পড়তে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ জুমার নামাজ ঢাকায় পড়ার চেয়ে এলাকায় গিয়ে পড়লে সাধারণ মানুষের খোঁজ-খবর বেশি নেয়া যাবে। তবে যারা ওই সময়সীমার মধ্যে এলাকায় পৌঁছাতে পারেননি, তাঁদের বেশিরভাগই এরই মাঝে এলাকায় পৌঁছে গেছেন বলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
তাছাড়া দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বেশ কয়েকটি এলাকা সফর করবেন। এমনকি দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ২-৩টি এলাকা সফর করবেন বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরগুলো চলতি মাসেই সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে। তবে দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কোন কোন এলাকা সফর করবেন, তা পরে নির্ধারণ করা হবে।
কেন্দ্র থেকে দেয়া নির্দেশনায় ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
সংসদ সদস্যদের প্রতি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাজেট অধিবেশনের কারণে ঈদের পরপরই তাঁদেরকে ঢাকায় চলে আসতে হয়েছে। একই কারণে ঈদের খুব বেশি আগে তাঁরা এলাকায় যেতে পারেননি। যে কারণে ইফতার ও ঈদ রাজনীতিকে তাঁরা সর্বোচ্চ পরিমাণ কাজে লাগাতে পারেননি। বর্তমানে তা পুষিয়ে নিতে হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সংসদ সদস্যদেরকে প্রত্যেকটি এলাকায় যেতে হবে। বিশেষ করে বন্যাদূর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে বলা হয়েছে। এই কাজে ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ অঙ্গসংগঠনগুলোকে নিয়োজিত করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে।
বন্যাদূর্গত এলাকার কার্যক্রমের কৌশল নির্ধারণের পরামর্শও দেয়া হয়েছে এতে। পরামর্শ দিয়ে বলা হয়েছে, এতে অঞ্চলভিত্তিক কৌশল নিতে হবে। যেমন: উজান অঞ্চলে বন্যার পানি আগে কমতে থাকবে। সেখানে এ সময় চর্মরোগসহ অন্যান্য রোগব্যাধী দেখা দিতে পারে। তাছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোসহ পূনর্গঠনমূলক বিভিন্ন কাজে হাত লাগাতে হবে।
আর দেশের মধ্যাঞ্চল ও ভাটি অঞ্চলে উজানের পানির চাপ বাড়তে থাকবে বলে এসব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে এ সময়। তাই এসব এলাকায় শুকনো খাবার, পানীয় জল, প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহসহ আনুষাঙ্গিক কাজে হাত লাগাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যতটা সম্ভব স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে যেতে সাধারণ মানুষকে সহযোগীতা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বাংলা ইনসাইডার/এমএএম
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।