নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৩২ এএম, ২০ জুলাই, ২০১৭
জাতীয় পার্টি আগামী সংসদ নির্বাচনে কতটা ভালো করবে তাঁর পরীক্ষা হবে রংপুরে। অন্যদিকে রংপুর দূর্গ অক্ষুন্ন রাখতে আওয়ামী লীগ থাকবে মরিয়া। এই নির্বাচন নিয়ে বিএনপির আগ্রহ কম। কারণ রংপুরে বিএনপির অবস্থা ভালো নয়।
এই রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরে। গতকাল বুধবার এক সভায় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ডিসেম্বরের শেষের দিকে নির্বাচন করার সম্ভাবনা রয়েছে। রংপুরে এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রংপুর আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি উভয়েরই ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি। রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সামনে রেখে মাঠে নেমেছে দলদুটি ছাড়াও বিএনপি, জাসদ, বাসদ, ইসলামী আন্দোলন, গণতন্ত্রীপার্টিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। বিভিন্ন দলের এক ডজন সম্ভাব্য প্রার্থী তাদের মাঠ গোছাতে ব্যস্ত। তবে সবার দৃষ্টি থাকবে আওয়ামী লীগ আর জাতীয় পার্টির দিকে।
রংপুরে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী বর্তমান মেয়র সরফুদ্দীন আহমদ ঝনটু। তিনি একাধারে রংপুর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা, এক সময়ের উপজেলা ও পৌরসভা চেয়ারম্যান এবং সংসদ সদস্যও ছিলেন। তবে তিনি শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ছিলেন না, জাতীয় পার্টির ঘাঁটি ছেড়ে ২০০০ সালে আওয়ামী লীগে এসেছেন। এছাড়া মনোনয়নের দৌঁড়ে আছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ড. জয়নুল আবেদীন, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু, রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবুল কাশেম ।
রংপুরে আওয়ামী লীগের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হলো জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান। তিনি মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি এবং এক সময়ের সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান। ইতোমধ্যে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ তাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণাও দিয়েছেন। সে অনুযায়ী নিচ্ছেন প্রস্তুতিও। এদিকে তাকে টপকে যেতে মাঠে নেমেছে জাতীয় পার্টির আরেক নেতা একেএম আব্দুর রউফ মানিক। তিনিও এক সময়ের সাবেক পৌরমেয়র। গতবারও মানিক প্রার্থী হয়েছিলেন।
তবে রংপুরে বিভিন্ন জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে প্রার্থী হওয়ার দাবী তুলেছেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা। রংপুরে জয়ের জনপ্রিয়তাও কম নয়। সেদিক বিবেচনায় জয়ও হতে পারেন ভবিষ্যতের কোনো নির্বাচনে রংপুর আসনের প্রার্থী।
নৌকা আর লাঙ্গলের দৌঁড়ে রংপুর সিটি করপোরেশনে হয়তো পাত্তা পাবে না বিএনপি। জেলা বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর বেগম জিয়ার অনিশ্চিত লন্ডন সফর সে সম্ভাবনাকে আরও গাঢ়ও করেছে। এছাড়া রংপুরে ধানের শীষের আধিপত্য তো দূরে থাক অস্তিত্ব নামেমাত্র। তারপরও বিএনপির প্রার্থী হতে পারেন শহর বিএনপির সাবেক সভাপতি কাওসার জামান বাবলা, কেন্দ্রীয় বিএনপির ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক মোজাফফর হোসেন এবং মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সামসুজ্জামান সামু।
রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন হয় ২০১২ সালে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সরফুদ্দীন আহমদ ঝনটু ১ লাখের কিছু বেশি ভোট পেয়েছিলেন। আর জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান ৭৭ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুর রউফ মানিক পেয়েছিলেন ৩৭ হাজার ভোট। মানিক ওই নির্বাচনে ফ্যাক্টর না হলে সেবার ফলাফল জাতীয় পার্টির দিকেই ঝুঁকে পড়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল ।
৯ম এবং ১০ জাতীয় সংসদে রংপুর থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে এই অঞ্চলে হয়েছে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। ক্রমেই জনপ্রিয়তা বেড়েছে আওয়ামী লীগের। এদিকে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের এলাকা হওয়ায় রংপুর জাতীয় পার্টিরও ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত। গতবারের ভোটের ফলাফল বলছে এবার লড়াই হতে পারে হাড্ডাহাড্ডি। সিটি নির্বাচনের ফলাফলই প্রমাণ করবে, রংপুর আওয়ামী লীগ নাকি জাতীয় পার্টির ঘাঁটি।
বাংলা ইনসাইডার/এএন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।