নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:০২ পিএম, ২০ জুলাই, ২০১৭
রাজধানী ঢাকার বর্তমান জনসংখ্যা এক কোটি ৮০ লাখ, যা ২০৩৫ সালে দ্বিগুণ হয়ে তিন কোটি ৫০ লাখ হবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। আর এ জন্য ঢাকার পরিধি বাড়াতে গুরত্ব আরোপ করা হচ্ছে। শুধু ঢাকার পরিধি বাড়লে কি মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ হবে?
বিশ্বব্যাংক থেকে বলা হচ্ছে, ঢাকার পূর্বাঞ্চল পরিকল্পিত নগরায়ণের কথা। কিন্তু বর্তমানে রাজধানীসহ সারাদেশে চলছে গ্যাসের সমস্যা। নতুন বাড়িতে গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না সরকার। কারণ দেশে গ্যাসের সংকট।
দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য পর্যাপ্ত সড়ক প্রয়োজন। কিন্তু নতুন সড়ক তৈরি করার জায়গা কোথায়? আর সড়ক তৈরি হলেও অতিরিক্ত যানবাহনে সেই যানজটই তৈরি হবে।
এছাড়া, বিদ্যুতের একটা বড় ঘাটতি রয়েছে সারাদেশে। নতুন এলাকা ঢাকার সঙ্গে সংযোজন করলে এই বিদ্যুৎ ঘরে ঘরে পৌঁছে দিবে কীভাবে?
মানুষের মৌলিক চাহিদার মূল হলো খাদ্য। রাজধানী ঢাকার মধ্যেই খাদ্য ঘাটতি বিরাজমান সেখানে বাড়তি এলাকার বাড়তি জনগোষ্ঠির জন্য খাদ্য চাহিদা পূরণ কি সম্ভব?
ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিধি তো বাড়ানো হয়েছে কিন্তু তাতে কী সুফল পাচ্ছেন এলাকার মানুষজন। নতুন নতুন রাস্তা, ফ্লাইওভার তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু লাভ? মালিবাগ মৌচাকে ফ্লাইওভার তৈরি করা হলেও যানজটে বিরক্ত মানুষ। তারপর যানবহনও বাড়ছে কিন্তু তাতে যানজট কমছে না।
ঢাকার এই অধিক জনসংখ্যার কারণে পরিবেশ ও আর্থ সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, এর পরিধি বাড়লে কি তা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব? ঢাকার অন্যতম সমস্যা আবাসন, পানি সংকট, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সমস্যা, জলাবদ্ধতা ও নগর বন্যা, সড়ক দূর্ঘটনা, যখন তখন আগুন এবং অপর্যাপ্ত অগ্নি নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা, দূর্বল ও অপরিকল্পিত বসতি নির্মাণ, মানহীন নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার, বেকারত্ব, বিল্ডিং এ ধস্ ও ফাটল, পরিবহন সল্পতা, নিম্নমানের পরিবহন ব্যবস্থা, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট, নগর জুড়ে রাস্তার উভয় পাশে বৈদ্যুতিক তার, ক্যাবল টিভি ও ইন্টারনেটের জালাকৃতির তারজট, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও মাদকের সহজ প্রাপ্যতা, ইয়াবা ও ফেন্সিডিলের প্রতি তরুণ সমাজের আসক্তি, নিত্য নৈমিত্তিক অপহরণ ও ছিনতাইয়ের ঘটনা, সঠিক বিনোদনের অভাব, হরতাল, ধর্মঘট কিংবা দাবি আদায়ে গাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুর, খাদ্যে ভেজাল, ফলমুলে কার্বাইড, ফরমালিন যুক্ত মাছ, আবাসিক এলাকার অনাবাসিক ব্যবহার, অবৈধ বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ, নিয়ন্ত্রণ ও পরিদর্শন কর্তৃপক্ষের লোকবলের অভাব, বস্তিবাসীদের নানা সমস্যা, উচ্চ জন্মহার, শিক্ষা ও চিকিৎসা সুবিধার অভাব, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা ও সর্বোপরি রাজনৈতিক অস্থিরতা আমাদের ঢাকার নগর জীবনকে নরক জীবনে রূপান্তরিত করছে।
এই সব সমস্যা কী পূর্বাঞ্চলে শহারায়ন হলে থাকবে না? নাকি আরও তীব্র হবে?
বুধবার ঢাকায় একটি পাঁচতারকা হোটেলে উচ্চ পর্যায়ের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশ্বব্যাংক ‘টুওয়াডর্স গ্রেট ঢাকা: এ নিউ আরবান ডেভলপমেন্ট প্যারডাইম ইস্টওয়ার্ড’ বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের শহুরে জনসংখ্যার ৩৬ শতাংশ বৃহত্তর ঢাকায় বাস করে, তাই ঢাকা এখন হয়ে উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর অন্যতম। ৫০তম জন্ম বার্ষিকীর আগে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য অর্জন করতে হলে বাংলাদেশকে অব্যশই ঢাকার শহরায়ন সম্প্রসারণের যথাযথ ব্যবস্থাপনা করতে হবে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে ঢাকার পূর্বাঞ্চলের পূর্ণ সুবিধাকে কাজে লাগানো।
বাংলা ইনসাইডার/টিআর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।