নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২২ মে, ২০২০
বাংলাদেশ এখন করোনাকে চ্যালেঞ্জই ছুঁড়ে দিল। করোনার সাথে বসবাসের নীতিই গ্রহণ করলো। করোনা প্রতিরোধ নয়, করোনার ভয়ে ঘরে থাকা নয়, বরং করোনাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অর্থনীতিকে সচল রাখা এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার নীতিই গ্রহণ করছে বলে বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলো স্পষ্ট ইঙ্গিত করছে। বাংলাদেশে এখন লকডাউন নেই বললেই চলে, শুধুমাত্র গণপরিবহন ছাড়া সব পরিবহন চলছে, মানুষ কোনো মানুষই ঘরে নেই, এবং সামাজিক দূরত্ব বলে কোনো কিছুই নেই। স্বাভাবিক সময়ে মানুষ যেভাবে চলাফেরা করে, সেভাবেই চলাফেরা করছে মানুষ। কাজেই এটি থেকে স্পষ্ট হয় যে, করোনা নিয়ে যে বাংলাদেশ ভয়ে আতঙ্কিত থাকবে, লকডাউন করবে, কিংবা করোনার কারণে মানুষ ঘরবন্দি থাকবে, সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হবে, যেটা অন্যান্য দেশে করেছে- কারফিউ, লকডাউন বা অন্যান্য বিধি ব্যবস্থা; বাংলাদেশ আসলে সেই পথে হাঁটছে না।
সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, করোনার কারণে যদি সবকিছু বন্ধ রাখতে হয়, সেটি বহন করার মতো পরিস্থিতি বাংলাদেশে নেই। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এর ফলে যতটা খারাপ হবে, সেটিকে সামাল দেওয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। তাই করোনা এবং অর্থনীতি- এই দুটো বিষয়ের মধ্যে সরকার অর্থনীতিকেই প্রাধান্য দিয়েছে। অর্থনীতিকে এগিয়ে রাখাই সরকারের মূল কৌশল বলে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হচ্ছে। বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতিতে এখন পিক সময় চলে এসেছে। ৩০ হাজারের বেশী মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। ৪০০ এর বেশী মানুষ করোনায় মারা গেছে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ মনে করছে যে, এটি দেশের জন্য খুব বড় ক্ষতির কারণ হবে না। জনস্বাস্থ্য বিবেচনা করলে বাংলাদেশে করোনার চেয়ে অন্যান্য অনেক রোগ আছে, যেগুলো ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে। করোনার চেয়ে গত বছর ডেঙ্গু ভয়াবহ হয়েছিল বলে অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন। বাংলাদেশে করোনার চেয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় কয়েকগুণ বেশী মানুষ মারা যায়। আহত হয় আরও বেশী। বাংলাদেশে করোনার চেয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেশী। বেশী ক্যানসার আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও। কাজেই করোনার জন্য উন্নত দেশগুলো যে পন্থা অবলম্বন করেছে, লকডাউন করে দিয়ে সবাইকে ঘরে বসিয়ে রাখছে, করোনা স্তিমিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করছে। বাংলাদেশ স্পষ্টতই সেই পথে হাঁটছে না। বাংলাদেশ তার নিজস্ব মডেল অনুসরণ করছে। ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু সেই ছুটির মেয়াদ খুব বেশী হলে ২ সপ্তাহ ছিল। তারপর থেকে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক কর্মজীবন শুরু হতে থাকে। আর এখন তো রীতিমতো স্বাভাবিক কর্মজীবন চলছে। ঈদের ছুটি শেষে সরকার আবার যে কঠোর লকডাউন করবে বা সবকিছু বন্ধ করে দেবে, তেমন সম্ভাবনা খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। কারণ এই বন্ধ রাখার ফলে যে অর্থনৈতিক দায় তৈরি হবে সে দায় মোচন করা সরকারের পক্ষে অত্যন্ত কঠিন হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে গত দুই মাসে যে দারিদ্র তৈরি হয়েছে এবং বিভিন্ন ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছে সেটির প্রণোদনা দিতেই সরকার হাঁসফাঁশ করছে। এই অবস্থায় যদি আরও কিছুদিন সবকিছু বন্ধ থাকে তাহলে অর্থনৈতিক যে পরিস্থিতি হবে সেটা নাগালের বাইরে চলে যাবে বলেই সরকার মনে করছে। এই বাস্তবতায় করোনাকে নিয়ে বাঁচার পদ্ধতি করছে সরকার।
সরকারের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি বলছেন যে করোনা সর্বোচ্চ হয়তো আর এক মাস কিংবা দুই মাস থাকবে। এই দুই মাস সব কিছু বন্ধ করে রাখা সম্ভব না। কাজেই আমাদেরকে বরং করোনাকে নিয়েই বাঁচতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, হাত ধোয়া ইত্যাদি বিষয়গুলোকে নিয়েই আমরা যদি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডগুলোকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসি, সব কিছু যদি স্বাভাবিকভাবে চলাচল শুরু হয় তাহলে আমরা যেমন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পরবো না। বিশ্বে সামনে যে মন্দা শুরু হবে সেই মন্দা থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে আসতে পারবে এবং অর্থনীতিতে নতুন ক্ষমতাবান রাষ্ট্র হিসেবে অধিষ্টিত হওয়ার স্বীকৃতি পাবে। পাশাপাশি করোনাকালের জীবনে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। কতগুলো অভ্যাস মানুষ আস্তে আস্তে রপ্ত করে ফেলবে। যেমন- হাত মেলানো, কোলাকুলি না করা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, গণপরিবহনে চলাফেরার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা, অফিস আদালতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান ব্যবহার করা ইত্যাদি। এরকম একটি করোনা অভ্যস্ত জীবন করোনাকে নিয়ে বসবাসের চ্যালেঞ্জই বাংলাদেশ করছে। কিন্তু কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন এই স্বপ্নটা যেকোনো সময় ভঙ্গ হয়ে যেতে পারে যদি করোনার আস্ফালন বেড়ে যায়, করোনা যদি তাণ্ডব শুরু করতে থাকে, যদি করোনার কারণে মৃত্যুর হার হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। তাহলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা বাংলাদেশের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। তখন অর্থনীতির চেয়ে বা জীবিকার চেয়ে জীবন অনেক গুরুত্বপূর্ণ হবে। সেটার কারণেই সরকারের উপর একটি রাজনৈতিক চাপও তৈরি হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ যে করোনাকে সঙ্গে নিয়ে বাঁচার চ্যালেঞ্জের পথে যাচ্ছে, সেটি স্পষ্ট। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশ জিতবে কিনা সেটা দেখার বিষয়।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাপদাহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।
প্রথম দুই দফা ভোটের যে হার, তাতে বিজেপির মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিজেপির নেতারা ভোটে যে ভূমিধস বিজয় আশা করছিলেন সেটি হবে না। ভারতের কোন কোন গণমাধ্যমগুলো ভোটের ফলাফলে নাটকীয় ঘটনা ঘটারও ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে ২০০৪ সালের নির্বাচনে যেভাবে কংগ্রেস অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে বিজেপিকে ধরাশায়ী করেছিল সেরকম কোন ঘটনা ঘটতেও পারে বলে মনে আশঙ্কা করছেন অনেকে। অবশ্য এখনও আরও পাঁচ দফা ভোট বাকি আছে এবং বিজেপি আশা করছে যে, পরবর্তী ধাপগুলোতে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে এবং বিজেপি তাদের জয়ের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখবে। নরেন্দ্র মোদি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে দেওয়ার জন্য বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন।
ভারতের নির্বাচনের ফলাফল কী হবে তা বোঝা যাবে আগামী ৪ জুন। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে ভোটের হাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে এটা স্পষ্ট যে, ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোটের যে নিরঙ্কুশ বিজয়ের ধারণা করা হয়েছিল, সেটি বাস্তবতা নাও পেতে পারে। আর এ কারণেই মোদী যদি শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন, তাহলে সেটি হবে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বড় ব্যতিক্রমী ঘটনা এবং এটি হবে ভারতের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চমক।
এখন যখন ভারতের নির্বাচনে একটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বা অনিশ্চয়তার ফলাফলের শঙ্কা জেগেছে তখন প্রশ্ন উঠছে যে, বিজেপি যদি এই নির্বাচনে পরাজিত হয় তাহলে বাংলাদেশে কী হবে? গত দুটি নির্বাচনে ভারতের বিজেপি সরকার বাংলাদেশকে নিরঙ্কুশভাবে সমর্থন দিয়েছে। ২০১৮ এবং ২০২৪ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে বিজেপি সরকার।
বিশেষ করে ২০২৪ এর নির্বাচনে ভারতীয় সরকারের পরিপূর্ণ সমর্থন ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করত এবং এই নির্বাচনকে অস্বীকৃতি জানাত বলেও অনেকে মনে করেন। মার্কিন মনোভাব পাল্টানোর ক্ষেত্রে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আর নির্বাচনের পর বিএনপি থেকে শুরু করে জাতীয় পার্টি প্রত্যেকেই বলছে যে, ভারত বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখেছে। যদিও এরকম অভিযোগকে আওয়ামী লীগ অস্বীকার করে এবং আওয়ামী লীগ মনে করে যে, জনগণের ভোটে তারা নির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি আওয়ামী লীগ বা বিজেপি কেউই অস্বীকার করে না।
এখন প্রশ্ন হল, যদি বিজেপি পরাজিত হয়, ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশের সমীকরণ কী হবে? কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বর্তমান সরকারের জন্য সমীকরণের কোন পরিবর্তন হবে না। কারণ ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গেও আওয়ামী লীগ সরকারের একটি সুসম্পর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যে ইন্ডিয়া জোটের প্রধান দল কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছে।
অনেকে মনে করেন যে, এখন ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী মনোভাবের কারণে সীমান্তে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য রাখা হচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশের মধ্যে একটা ভারতবিরোধী মনোভাব তৈরি হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যদি নরেন্দ্র মোদি তাহলে এই অবস্থানের পরিবর্তন হবে। দুই দেশের সম্পর্ক আরও বিকশিত হবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভারত লোকসভা নির্বাচন মল্লিকার্জুন খাড়গে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।