নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৯ এএম, ৩১ মে, ২০২০
পাশ ফেইল আছে বলেই এর নাম পরীক্ষা। কিন্তু ফেইল করার মানে এই নয় যে এখানেই জীবনের সবকিছু শেষ হয়ে যায়। বলতে গেলে প্রায় প্রতিবৎসরই এসএসসি রেজাল্ট দেওয়ার পরদিন গণমাধ্যমে আত্মহত্যার খবর পড়তে হয়। দেখা গেলো অকৃতকার্য হওয়ার কারণে তারা জীবনের কোন অর্থ খুঁজে পেলো না। এই প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এমন অনেকে আছেন যারা কোন রকম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পাননি, কিন্তু নিজ কর্মের কারণে স্থান করে নিয়েছেন মানব ইতিহাসে।
ছোটবেলা থেকেই ধারণা, আমাকে ব্যর্থতা এড়াতে হবে। যেহেতু ব্যর্থতা একটি খারাপ এবং অসম্মানজনক ব্যাপার। একটা প্রবাদ আছে- Failure is the pillar of success. ব্যর্থতাই সাফল্যের ভিত্তি। এই কথাটা শোঅফ করা সংস্কৃতির জন্য ততটা কার্যকরী নয়। বরং তা সত্য তাদের জন্য যারা যথার্থ উন্নতি প্রত্যাশা করে। সেখানে ‘ব্যর্থতা’-কে নিন্দার চোখে দেখা হয় না। ব্যর্থতার কারণ উদ্ঘাটন করার মাধ্যমে ভুল সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কোনো ম্যাচ হেরে গেলে যে গালিবর্ষন তাদের উপর বর্ষিত হয় সকল দেশে কিন্তু ঠিক তেমনটা হয় না। কারণ এই ব্যর্থতা থেকে অন্যদলগুলো শিক্ষা গ্রহণ করে আর আমরা গ্রহণ করি লজ্জা ও ধিক্কার। এমনিভাবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পারিবারিক ও সামাজিক একটা হুমকি নিয়ে আমাদের এগোতে হয় এবং তা এড়ানোর জন্য আমরা অসুদপায় অবলম্বনকেও অসঙ্গত মনে করি না।
এখনই সময় এই ধরনের মনোভাব থেকে বের হয়ে আসার। আমাদের ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় সার্বিক কল্যাণের জন্য আমাদের ব্যর্থতাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণের চেষ্টা করতে হবে। তার মানে এই নয় যে ইচ্ছাকৃতভাবে অথবা অনীহা বা অবহেলা আমরা বারবার ব্যর্থ হবো। আমাদের চেষ্টা অবিরত রাখতে হবে। আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে যথার্থ সফলতার দ্বারে পৌঁছাতে নিরলস পরিশ্রম করতে হবে। কিন্তু ব্যর্থ হলে ভেঙে পড়া যাবে না। হতাশ হয়ে রণ-ভঙ্গ দেয়া যাবে না। সেইসাথে কোনো অবস্থায় নিজেকে পরাজিত ভেবে পিছিয়ে আসা যাবে না। আমাদের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আরো দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে। সফলতার দ্বারের কাছে। তবেই আমরা সফল হবো এবং পাব যথার্থ উন্নতি।
এটা ঠিক যে ব্যর্থতা সুখকর নয়। ব্যর্থতা আমাদের কাম্যও নয়। কিন্তু আমরা যখন প্রথম পেন্সিল ধরেছিলাম, অ-আ-ক-খ লেখার চেষ্টা করেছিলাম তখন তো অনেকবারই ব্যর্থ হয়েছিলাম কিন্তু সেখান থেকে পরাজিত মনোভাব নেইনি বরং আরো কঠোর অনুশীলনের ভেতর দিয়ে শেষপর্যন্ত সফল হয়েছি তাহলে জীবনের অন্যক্ষেত্রগুলোতে সেটা সম্ভব নয় কেন? আমরা আসলে ব্যর্থতাকে ভয় পাই। ভয় পাই সামাজিক অস্বীকৃতিকে। এই ভয় থেকে, অস্বীকৃতি থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজন দৃঢ় মনোবল আর অবশ্যই কোনো অবস্থাতেই নিজেকে পরাজিত না ভাবা।
মনে রাখতে হবে ব্যর্থতা থেকে পরাজিত মনোভাব নয় বরং নতুন উদ্যমে এগিয়ে গিয়ে সফল হওয়ার চেষ্টাই হচ্ছে যথার্থ এবং করণীয়। মানব ইতিহাসে এইরকম বহু মানুষ রয়েছে যারা বারবার ফেইল করতে গিয়ে সফলতার সূত্র খুঁজে পেয়েছে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।