নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ এএম, ৩০ জুন, ২০২০
সংক্রমণ বাড়ছে৷ অন্যদিকে অর্থনীতিও বাঁচাতে হবে। তাই দেশজুড়ে সাধারণ ছুটি না দিয়ে জোন ভিত্তিতে ভাগ করে ছুটির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ শেষ হচ্ছে সাধারণ ছুটি দেওয়া প্রজ্ঞাপনের মেয়াদ। গতকাল সোমবারও ৪ হাজার ১৪ জন আক্রান্ত ও ৪৫ জন মৃত্যুবরণ করেন। দেশে আক্রান্তর সংখ্যা ১ লাখ ৪১ হাজার ৮০১ জন। মৃতুবরণ করেছেন মোট ১ হাজার ৭৮৩ জন। এই প্রেক্ষিতে আজ নতুন কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে?
গত ১৫ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন ও সরকারি-বেসরকারি অফিস চলবে। তবে করোনাভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধকল্পে শর্তসাপেক্ষে সার্বিক কার্যাবলি/চলাচলে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ১৬ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সাপ্তাহিক ছুটি এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকবে। তবে রেড জোনে সাধারণ ছুটি থাকবে। ১৯ টি জেলায় বিভিন্ন এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করে এর মধ্যে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ২৬ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। সাধারণ ছুটি বা এক ধরনের লকডাউনের মধ্যে সংক্রমণের হার বাড়ছিল। কিন্তু ৩০ মে সরকারি ছুটি শেষ হওয়ার পর শনাক্তের সংখ্যা এবং সংক্রমণের পরিমাণ ব্যাপক হয়। সবকিছু খলে দেওয়ার এক সপ্তাহ পর থেকে ২০ দিনে রোগী দ্বিগুণ হয়েছে। গত ২০ দিনে ৭০ হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরই মধ্যে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় পরে এলাকাভিত্তিক লকডাউন দেওয়া শুরু করে জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে। কিন্তু তা বিচ্ছিন্নভাবে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ড গত ১৩ জুন থেকে লকডাউন করা হয়। এসব ওয়ার্ডে করোনা সংক্রমণের হার ছিল খুব বেশি। তাই এসব এলাকাকে `রেড জোনের` মধ্যে ফেলে এই লকডাউন কার্যকর করা হয়। পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে লকডাউন এখনো চলছে। এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত, এটি চলবে আজ ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু এরই মধ্যে দেখা গেছে সংক্রমণের মাত্রা এখানে অনেকটাই কমে গেছে। সেখানকার অবস্থা ভালো হচ্ছে বলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তারা জানিয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটির পূর্ব রাজাবাজারে এখনো লকডাউন চলছে। এলাকাটিতে থাকেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। একপর্যায়ে এখানে ব্যাপক সংক্রমণ শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৯ জুন মধ্যরাত থেকে এই রেড জোন এলাকায় লকডাউন শুরু হয়। ৩০ জুন এই এলাকায় লকডাউনের ২১ দিন পূর্ণ হবে। আইইডিসিআর এই লকডাউন ব্যবস্থা দেখভাল করছে। আর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়।
সংক্রমণের ব্যাপকতায় ঢাকার বাইরে নরসিংদীর মাধবদী পৌরসভার ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডকে রেড জোনে ফেলে লকডাউন করা হয় ১২ জুন। পৌরসভার ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডে লকডাউন শেষ হবে ২ জুলাই।
ঢাকার পাশের জেলা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের রূপগঞ্জ ইউনিয়েনর প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা জুড়ে লকডাউন এখনো চলছে। এটি শুরু হয়েছিল ১২ জুন।
২৩ জুন সরকার কক্সবাজার, মাগুরা, হবিগঞ্জ ও খুলনা জেলার বিভিন্ন এলাকার রেড জোনে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে।
এর আগে সোমবার (২২ জুন) ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী ও কুষ্টিয়া জেলার রেড জোন এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।
তার আগের দিন চট্টগ্রাম, বগুড়া, মোলভীবাজার, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ ও মাদারীপুরের রেড জোন এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।