নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৫৯ এএম, ০৩ জুলাই, ২০২০
অবশেষে থলের বিড়াল বের হয়ে এসেছে। ডা. ফেরদৌসকে নিয়ে বিতর্কের অবসান হতে চলেছে। করোনা ভাইরাসকালিন স্বঘোষিত দেবদূত; বিতর্কিত ডাঃ ফেরদৌস খন্দকার বাংলাদেশী- আমেরিকান নন, পাকিস্তানী আমেরিকান। তাই তাঁকে ভিসার মেয়াদ শেষ হবার কারণে বাংলাদেশ থেকে ফেরত যেতে হয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। বাংলাদেশী আমেরিকান নাগরিকদের পাসপোর্টে নো ভিসা রিকয়ার্ড ফর ট্রাভেল টু বাংলাদেশ` লেখা থাকার কারণে তাদের বাংলাদেশের জন্য আলাদা করে ভিসা নিতে হয় না। কিন্তু গত ২৩ জুন বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমকে ডাঃ ফেরদৌস খন্দকার নিজেই জানিয়েছিলেন যে, তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার ফলে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যেতে হচ্ছে। ডাঃ ফেরদৌস খন্দকারের আমেরিকান পাসপোর্টে দেখা যায় যে, সেখানে তার জন্মস্থান লেখা আছে পাকিস্তান।
কূটনৈতিক সূত্রটি আরো জানিয়েছে ডাঃ ফেরদৌস খন্দকার এর আমেরিকান পাসপোর্টে প্লেইস অব বার্থ এর স্থানে পাকিস্তান লেখা রয়েছে। তিনি পাকিস্তানী পাসপোর্টে আমেরিকায় ঢুকেছিলেন, যার ফলে লিগালাইজেশনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টকে পাকিস্তানের বার্থ সার্টিফিকেট জমা দিতে হয়েছে। জানা যায়,নিজের মামার নাম মোস্তাক হবার কারণে তিনি খুনি মোস্তাকের ভাগিনা সেজে, বঙ্গবন্ধুর খুনির আত্মীয় সেজে পাকিস্তানি পাসপোর্টে আমেরিকায় পাড়ি দিয়ে শর্টকাটে নাগরিকত্ব নেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর রক্ত ও আদর্শের সাথে বেইমানী করে পাকিস্তানি আমেরিকান হন।
এদিকে গত ৭ জুন বাংলাদেশে পৌছার পর ঢাকা শাহজালাল বিমান বন্দর থেকে দুই সপ্তাহের কোয়ারেন্টিনে বনানীতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন থেকে মুক্তি পাওয়ার পর পাকিস্তানি দূতাবাসের অর্থায়নে বাংলাদেশে থাকা বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিকদের দিয়ে হিউম্যান স্টোরি করে ডা. ফেরদৌস এর পক্ষে প্রচার চালানো হয়। আসলে ডা. ফেরদৌস এককালে ছাত্রলীগ করলেও পরে সে পক্ষ ত্যাগ করে পাকিস্তানি আইএসআই এজেন্ট হয়ে যান। ডা. ফেরদৌসকে কোয়ারেন্টিনে রাখা নিয়ে নিয়ে বাংলাদেশে আর আমেরিকায় বাংলাদেশ কমিউনিটিতে ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। অনেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ডা. ফেরদৌস খন্দকার বর্তমান অবস্থান না জেনেই তার পক্ষ নেন।
পাকিস্তানের নির্দেশেই ডা. ফেরদৌস খন্দকার আমেরিকায় একজন জামাত নেতার সঙ্গে দীর্ঘদিন ব্যবসা করছেন। জানা যায়-ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকারের ব্যবসায়ীক পার্টনারের নাম আতাউল ওসমানী। সে ছিলো চট্টগ্রাম মেডিকেলের জামাতের- শিবিরের নেতা। বর্তমানে নর্থ আমেরিকার মুসলিম উম্মা সংক্ষেপে ইকনা’র কালচারাল ডিরেক্টর। ২০১৯ বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন অব আমেরিকার নির্বাচনে ডাঃ ফেরদৌস বিএনপি- জামাতের প্যানেলের ছিলেন অর্থ যোগান দাতা ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। কারণ, ঐ নির্বাচনে ব্যবসায়ীক বন্ধু আতাউল ওসমানীর পক্ষে তিনি নির্বাচনী সভাও করেছেন। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সজীব ওয়াজেদ জয়কে ফাঁসাবার জন্য এফবিআইএর সাবেক এজেন্ট রবার্ট লাস্টিক এবং বিএনপির রিজভী আহমেদ সিজারসহ যে গ্রুপটির সাজা হয় তাদের সাথেও রয়েছে ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকারের ব্যবসায়ীক পার্টনারের নাম আতাউল ওসমানীর সম্পর্ক। নিজেকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা দাবী করলেও ২০১৯ সালের আগে নিউ ইয়র্কে ডাঃ ফেরদৌসকে জাতির পিতার জন্মদিন, মৃত্যুবার্ষিকী, ১৬ ডিসেম্বর বা ২৬ মার্চের কোন অনুষ্ঠানে কোনদিন দেখা যায়নি। ডাক্তার ফেরদৌস যে একজন ভণ্ড প্রচারসর্বস্ব, প্রতারক পাকি তার পাসপোর্টের কপি দেখে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ রইলো না।
আমেরিকায় ফেরার পরে ডা. ফেরদৌস খন্দকারের বিরুদ্ধে মহিলাদের যৌন হয়রানী সহ নানা অভিযোগ আসছে কারণ তিনি আমেরিকায় করোনা কালের আগে জিপি হিসেবে যৌন রোগের চিকিৎসা করতেন বেশি।
ডা. ফেরদৌস খন্দকার পাকিস্তানি কোন এজেন্ডা বাস্তবায়নে বাংলাদেশে এসেছিলেন তা এখনো জানা যায় নি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।