নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৮ পিএম, ০৪ জুলাই, ২০২০
বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সরকার বহুমাত্রিক সঙ্কট মোকাবেলা করছে। একদিকে করোনা, করোনা সঙ্কটের পরেই আসলো আম্ফান, দক্ষিণাঞ্চলের এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা করার পর এখন এসেছে বন্যা। করোনা সঙ্কটের মধ্যেই রমজান এবং ঈদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। এখন সামনে আবার আসছে কোরবানি, এই কোরবানি হবে কি হবে না তা নিয়ে এক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, অর্থনৈতিক সঙ্কট তো আছেই। একাধিক সঙ্কটের মুখোমুখি সরকার।
এর মধ্যে আবার প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের মধ্যেই অনেকের দায়িত্বহীনতা, ব্যর্থতা এবং অযোগ্যতা- এই বাস্তবতায় সরকার বাজেট পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিল। সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছিল যে, বাজেটের পর অনেকগুলো কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং কিছু পরিবর্তন আসবে। সেই বাজেট শেষ হয়ে গেছে এবং আগামীকাল থেকে নতুন সপ্তাহ শুরু হচ্ছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে জানা গেছে যে, এই সপ্তাহটি হবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই সপ্তাহে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এবং নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারের বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে ধরনের বিষয়গুলোর ব্যাপারে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে তাঁর মধ্যে রয়েছে-
মন্ত্রিসভার রদবদল
মন্ত্রিসভার রদবদল নিয়ে বেশ কিছুদিন যাবতই কথা হচ্ছিল। তবে এই সপ্তাহে সেই পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে। বিশেষ করে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর মৃত্যুর পর তাঁর শূন্যস্থান পূরণ এবং আরো কয়েকটি পরিবর্তন নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে। সরকারের একটি সূত্র বলছে যে, মন্ত্রিসভার রদবদল একান্তই প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বিষয়। তবে মন্ত্রিসভার রদবদলের যে একটি আভাস তা পাওয়া যাচ্ছে। তবে এর যে পুরো অবয়ব সেই অবয়ব এখনো স্পষ্ট হয়ে ওঠেনি। একাধিক সূত্র বলছে যে, সরকার যেহেতু বাজেট এবং একাধিক বিষয় নিয়ে ব্যস্ত ছিল সেজন্য এই বিষয়টিতে নজর দিতে পারেননি। তবে খুব শীঘ্রই রদরবদল আসতে যাচ্ছে, এমনকি তা এই সপ্তাহেই ঘটতে পারে।
প্রশাসনে রদবদল
প্রশাসনে বেশকিছু রদবদলের কথা শোনা যাচ্ছিল। এই বিষয়টিও আটকে ছিল বাজেটের জন্য এবং এখন এই ব্যাপারেও পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। বিশেষ করে করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে যে সমস্ত উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন সেই সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরিয়ে দিয়ে প্রশাসনে প্রাণপ্রবাহ সৃষ্টি করার চিন্তা কিছুদিন যাবতই ছিল। অর্থবছরের শেষ বিবেচনায় সেটা আটকে ছিল। তবে এখন সেটা শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দূর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান
দূর্নীতির বিরুদ্ধে এই সপ্তাহটি হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতিমধ্যে দূর্নীতি দমন কমিশন দূর্নীতিবাজ মিঠুসহ যারা স্বাস্থ্যখাতে দূর্নীতি করেছে তাঁদেরকে তলব করেছে। গত অর্থবছরের শেষে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে যারা স্বাস্থ্যখাতে অনৈতিক কেনাকাটা করেছে তাঁদের বিল আটকে দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়গুলোর জন্য চলতি সপ্তাহটি অত্যন্ত উত্তপ্ত থাকবে এবং সরকার দূর্নীতির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
করোনা মোকাবেলার কৌশল
সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে পূর্ব রাজাবাজার, ওয়ারিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যে আংশিক লকডাউন, সেই আংশিক লকডাউন আসলে সফল হচ্ছে কিনা বা বাস্তব পরিস্থিতি কি তা নিয়ে সরকার পর্যালোচনা করছে। বর্তমানে সীমিত আকারে অফিস-আদালত খোলার বিষয়টি আগামী ৩ আগস্ট পর্যন্ত বহাল রেখেছে। এই ব্যাপারে আগামীতে সরকার কি করবে সেই ব্যাপারে চলতি সপ্তাহে সরকার সিদ্ধান্ত নিবে। সরকারের একটি দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, করোনা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে ছুটি বা লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিবে।
করোনার পিক আওয়ার
বাংলাদেশে করোনার পিক আওয়ার কবে হবে বা কিভাবে হবে তা নিয়ে চলতি সপ্তাহে একটি ধারণা পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে আগামী ৮ জুলাই বাংলাদেশ করোনা সংক্রমণের ৪ মাস অতিবাহিত করবে। এই বাস্তবতায় করোনা কতদিন থাকবে এবং সামনে করোনার প্রকোপ কেমন হবে তা নিয়ে একটি বিজ্ঞানভিত্তিক ধারণা পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আর এইসব দিকগুলোর জন্য আগামী সপ্তাহটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।