নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ পিএম, ৩১ জুলাই, ২০২০
কাল থেকে শুরু হচ্ছে শোকের মাস আগস্ট। আগস্ট যেমন বাঙালির শোকের মাস, তেমনি আতঙ্কের মাস। প্রতি বছরই আগস্টে কিছু না কিছু ঘটনা ঘটে যে ঘটনাগুলো আতঙ্ক-উদ্বেগের এবং বিষাদের। আগস্ট মাস এলেই তাই বাঙালি অজানা আতঙ্কে থাকে যে এই আগস্ট মাসেই আবার যেন কি হবে। আর এইরকম পরিস্থিতেই এবার আগস্ট মাস আসছে আরো ভিন্ন রূপে। বিভিন্ন সঙ্কটে জর্জরিত দেশ, শোকের মাসকে বরণ করে নিচ্ছে অনেকগুলো টেনশন, উৎকণ্ঠা, অস্বস্তি নিয়ে। এবারের আগস্ট মাস নিয়ে যে পাঁচটি টেনশন বা উৎকণ্ঠা বাঙালির আছে তাঁর মধ্যে রয়েছে-
১. করোনার দ্বিতীয় ঢেউ
গত মার্চ থেকেই বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ শুরু হয়েছে এবং পাঁচ মাস হতে চললেও করোনা এখনো দাপটের সঙ্গে রয়েছে আর করোনা পরিস্থিতি কবে শেষ হবে বা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সে সম্পর্কে আমাদের কাছে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে যে প্রক্ষেপণ করেছিল তা ছাড়িয়ে গেছে বহু আগেই, এখন সকলে যেন হাল ছেঁড়ে দিয়েছে। এর মধ্যেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঈদ, মানুষ ঈদে বাড়ি যাচ্ছে, কোরবানি দেবে এবং এই সমস্ত কারণেই বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হতে পারে বলে আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞরা এটাও বলছেন যে, আগস্টে বোঝা যাবে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি আসলে কোনদিকে মোড় নিচ্ছে।
২. বন্যা
১৯৮৮ এবং ১৯৯৮ এর মতো বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে আবাহাওয়াবিদরা। তাঁরা বলেছেন যে, আমাদের বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবার। একই বক্তব্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এবার দীর্ঘস্থায়ী বন্যার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া এবং মানুষ যেন ত্রাণ তৎপরতা থেকে বঞ্চিত না হয় তা নিশ্চিত করার জন্যে নির্দেশনা দিয়েছেন। পুরো আগস্ট মাস জুড়ে এই বন্যা আরেকটি উৎকণ্ঠা তৈরি করবে সকলের জন্য।
৩. জঙ্গী এবং সন্ত্রাসী হামলা
ইতিমধ্যে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে জঙ্গীহামলা হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এই পূর্বাভাসের পরপরই পল্লবী থানায় একটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, যার দায় স্বীকার করেছে আইএস। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুস্পষ্টভাবে বলেছে যে এটা আইএসের ঘটনা নয়, তারপরেও আগস্ট মাসেই বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা এবং নানারকম জঙ্গী হামলার ছোটখাটো ঘটনা ঘটতেই থাকে। একাত্তরের পরাজিত শক্তি এবং ১৫ই আগস্টের অপশক্তি একাট্টা হয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় এবং এজন্যে তাঁরা বেছে নেয় এই আগস্ট মাসকে এবং এবারও আগস্টে পুলিশ বাড়তি সতর্কতার ভেতর থাকবে বলে জানিয়েছে। যদিও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, জঙ্গীদের বড় ধরনের হামলা করার শক্তি নেই, কিন্তু তারপরেও এক্ষেত্রে তাঁরা সতকর্তা অবলম্বন করছে। যদিও প্রতি বছরের মতো এই বছরেও আগস্ট মাসে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হবে বলে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা জানিয়েছে। প্রতি বছরের মতো এই বছরেও আগস্ট মাসে সন্ত্রাসী হামলার আশংকা টেনশনের বড় কারণ হিসেবে থাকবে।
৪. দুর্নীতিবিরোধী অভিযান
আগস্টেই বোঝা যাবে যে, সরকার করোনার সময়ে যে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করেছিল সেই অভিযানের পরিণতি কি এবং কোথায় গিয়ে তাঁর ফলাফল ঠেকবে। আমরা এর আগেও দেখেছি যে, ক্যাসিনো কাণ্ড নিয়ে যে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছিল তা একটা পর্যায়ে গিয়ে থেমে গেছে। এখন এই দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে জেকেজির আরিফ, জেএমআই’য়ের আব্দুর রাজ্জাকসহ যারা আটক হয়েছেন বা যাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে তাঁর কি হবে সাধারণ মানুষ তা দেখতে চায়। সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে যে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং যারাই দুর্নীতিবাজ তাঁদের আইনের আওতায় এনে দুর্নীতি বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর যে অঙ্গীকার তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আগস্ট মাসে এই দুর্নীতিবিরোধী অভিযান নিয়েও মানুষের আগ্রহ এবং উৎকণ্ঠা থাকবে।
৫. রাজনীতির মেরুকরণ
আগস্টে বাংলাদেশের রাজনীতির একটা নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এইসময় বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের মুক্তির মেয়াদ বাড়ছে কিনা সে ব্যাপারে যেমন সিদ্ধান্ত হবে তেমনি সরকার তাঁর মন্ত্রিসভার পরিবর্তন করবে কিনা, রাজনীতিকে সচল করার জন্যে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক উদ্যোগ নেবে কিনা এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো করোনাসহ বিভিন্ন সঙ্কট নিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামবে কিনা এমন প্রশ্ন উঠেছে। আর এইসমস্ত মেরুকরনগুলো স্পষ্ট হবে এই আগস্টে।
আর এই সবকিছু নিয়ে সরকারের মধ্যে, জনগণের মধ্যে এবং সর্বত্রই কিছু উৎকন্ঠা এবং টেনশন থাকবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।