নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ০৭ অগাস্ট, ২০২০
সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমিত দেশগুলোর তালিকায় ১৫ নম্বরে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। যে ইতালি নিয়ে এত হইচই হচ্ছিল, সেই ইতালিকে হটিয়ে বাংলাদেশ ১৫ তম স্থান দখল করে নিয়েছে এবং সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে তাতে আগামীতে বাংলাদেশ যে শীর্ষ দশে যাবেনা তা হলফ করে কেউ বলতে পারে না। যদিও বাংলাদেশে করোনা নিয়ে তেমন কোন আতঙ্ক নেই, দুশ্চিন্তাও আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। মানুষ করোনাকে এখন আর আগের মতো পাত্তা দিচ্ছে না। বরং জীবীকার প্রয়োজনে সবকিছু স্বাভাবিক করার জন্যে সরকার একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে। আগে যেমন সীমিত আকার অফিস-আদালত চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সেখান থেকে সরকার সরে এসেছে। সরকারি অফিসগুলো সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত চালু রাখার নির্দেশনা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দেওয়া হয়েছে। আদালত খুলে দেওয়া হয়েছে এবং উচ্চ আদালতও খুলে যাচ্ছে। শুধুমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়া সমস্ত কর্মকাণ্ডই স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পর্যটন শিল্পগুলো বাঁচানোর জন্যে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেলগুলো চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের এই সিদ্ধান্তগুলোর পেছনে সবথেকে বড় কারন হিসেবে কাজ করেছে করোনায় মৃত্যুহার, যা এখন পর্যন্ত অত্যন্ত কম। এখন পর্যন্ত ১ দশমিক ৩- এর কাছাকাছি হারে করোনায় মানুষ মারা গেছে। এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুবরণ করলেন ৩৩৩৩ জন। করোনাকে স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার ক্ষেত্রে আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে সুস্থতার হার বেশি। যারা আক্রান্ত হচ্ছে তাঁদের মধ্যে প্রায় ৫৭ ভাগ মানুষ ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ফলে মানুষ এটাকে আর ৮-১০ টা রোগের মতোই মনে করছে। প্রথমে যেমন মনে করা হচ্ছিল যে, হাসপাতালগুলোর উপরেচাপ পরবে, এখন সেই অবস্থারও পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের হাসপাতাল নির্ভরতাও কমে গেছে। এখন মানুষ আক্রান্ত হলে বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছে। যদিও বাসাতেও মৃত্যু হচ্ছে, যদিও বা সেই হার উদ্বেগজনক নয়।
ফলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সরকার মনে করছে যে, করোনাকে সঙ্গে নিয়েই বসবাসের নীতিতে এগোতে হবে এবং করোনার থেকে অর্থনৈতিক দিককে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। কিন্তু এরকম সিদ্ধান্তে যেমন ইতিবাচক দিক রয়েছে, তেমনি এর কিছু ঝুঁকিও রয়েছে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞরা। এর ফলে বাংলাদেশের নীরব সর্বনাশ হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। যেসব ক্ষেত্রে এই সর্বনাশগুলো হতে পারে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-
আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্নতা
ইতিমধ্যেই জাপান, ইতালি, কুয়েতসহ বেশকিছু দেশ বাংলাদেশিদের ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বাংলাদেশে যদি দীর্ঘমেয়াদে করোনা থাকে এবং সারাবিশ্ব যদি করোনাকে প্রতিরোধ করতে পারে তাহলে বাংলাদেশের জন্যে সারাবিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা কঠিন হয়ে পড়বে, বাংলাদেশ সারাবিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে। এটা বাংলাদেশের অভিবাসনসহ আমাদের অর্থনীতির উপরে একটি ভয়ংকর প্রভাব ফেলতে পারে।
যেকোন সময় পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে
যদিও বলা হচ্ছে যে, বিশেষজ্ঞদের ভবিষ্যত বানী ভুল প্রমাণিত হয়েছে, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, তাঁদের ভবিষ্যত বানী সঠিক না ভুল তা এখন পর্যন্ত বলার সময় হয়নি। কারণ বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি বোঝার মতো পরিস্থিতি এখনো হয়নি। কারণ বাংলাদেশে যে পরীক্ষা হয়েছে সেই পরীক্ষার হার অত্যন্ত কম এবং ১৭ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশের জন্য এই পরীক্ষা খুবই কম। এখন পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে এই কারণে যে, আসলে পরিস্থিতি কি তা বোঝার জন্যে যে পরিমাণ পরীক্ষা দৈনিক হওয়ার কথা সেই পরিমাণ পরীক্ষাও হচ্ছে না। ফলে আমাদের হঠাত করেই পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।
জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি
দীর্ঘমেয়াদী করোনা বাংলাদেশে থাকলে সেটা আমাদের জনস্বাস্থ্যের জন্যে একটি বড় হুমকি হবে। কারণ করোনার চিকিৎসার জন্যে অন্যান্য চিকিৎসা গুলো যেমন ব্যহত হবে, তেমনি মানুষের স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যা জটিল হবে। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা চালানো কঠিন হয়ে যাবে এবং সামগ্রিক ভাবে একটি জনস্বাস্থ্য হুমকিতে পড়তে পারে দেশ।
ভ্যাকসিন বিতর্ক
করোনা সঙ্কট দীর্ঘমেয়াদী হলে আমাদের ভ্যাকসিনের উপর নির্ভরশীল হতে হবে এবং সেই ভ্যাকসিন আসলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে পাবো কিনা বা কোথা থেকে পাবো ইত্যাদি বিতর্কের সঙ্গে বাংলাদেশ জড়িয়ে পড়েছে। ফলে এখন মৃত্যুহার কম এবং সুস্থতা বেশি হলেও যদি আমরা ভবিষ্যতে ভ্যাকসিন না পাই তাহলে আমাদের পরিস্থিতি কি হবে তা সহজেই অনুমেয়।
আর এই সমস্ত বাস্তবতার কারণে করোনা দীর্ঘমেয়াদী থাকায় আমাদের নীরব সর্বনাশ হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে এবং এই উপেক্ষার মাশুল হয়তো বাংলাদেশকে দিতে হতে পারে। তবে সেটা নির্ভর করছে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি কতদিন থাকে, কিভাবে থাকে এবং করোনার ভয়াবহতা কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয় তার উপরে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাপদাহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।
প্রথম দুই দফা ভোটের যে হার, তাতে বিজেপির মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিজেপির নেতারা ভোটে যে ভূমিধস বিজয় আশা করছিলেন সেটি হবে না। ভারতের কোন কোন গণমাধ্যমগুলো ভোটের ফলাফলে নাটকীয় ঘটনা ঘটারও ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে ২০০৪ সালের নির্বাচনে যেভাবে কংগ্রেস অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে বিজেপিকে ধরাশায়ী করেছিল সেরকম কোন ঘটনা ঘটতেও পারে বলে মনে আশঙ্কা করছেন অনেকে। অবশ্য এখনও আরও পাঁচ দফা ভোট বাকি আছে এবং বিজেপি আশা করছে যে, পরবর্তী ধাপগুলোতে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে এবং বিজেপি তাদের জয়ের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখবে। নরেন্দ্র মোদি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে দেওয়ার জন্য বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন।
ভারতের নির্বাচনের ফলাফল কী হবে তা বোঝা যাবে আগামী ৪ জুন। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে ভোটের হাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে এটা স্পষ্ট যে, ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোটের যে নিরঙ্কুশ বিজয়ের ধারণা করা হয়েছিল, সেটি বাস্তবতা নাও পেতে পারে। আর এ কারণেই মোদী যদি শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন, তাহলে সেটি হবে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বড় ব্যতিক্রমী ঘটনা এবং এটি হবে ভারতের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চমক।
এখন যখন ভারতের নির্বাচনে একটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বা অনিশ্চয়তার ফলাফলের শঙ্কা জেগেছে তখন প্রশ্ন উঠছে যে, বিজেপি যদি এই নির্বাচনে পরাজিত হয় তাহলে বাংলাদেশে কী হবে? গত দুটি নির্বাচনে ভারতের বিজেপি সরকার বাংলাদেশকে নিরঙ্কুশভাবে সমর্থন দিয়েছে। ২০১৮ এবং ২০২৪ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে বিজেপি সরকার।
বিশেষ করে ২০২৪ এর নির্বাচনে ভারতীয় সরকারের পরিপূর্ণ সমর্থন ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করত এবং এই নির্বাচনকে অস্বীকৃতি জানাত বলেও অনেকে মনে করেন। মার্কিন মনোভাব পাল্টানোর ক্ষেত্রে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আর নির্বাচনের পর বিএনপি থেকে শুরু করে জাতীয় পার্টি প্রত্যেকেই বলছে যে, ভারত বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখেছে। যদিও এরকম অভিযোগকে আওয়ামী লীগ অস্বীকার করে এবং আওয়ামী লীগ মনে করে যে, জনগণের ভোটে তারা নির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি আওয়ামী লীগ বা বিজেপি কেউই অস্বীকার করে না।
এখন প্রশ্ন হল, যদি বিজেপি পরাজিত হয়, ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশের সমীকরণ কী হবে? কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বর্তমান সরকারের জন্য সমীকরণের কোন পরিবর্তন হবে না। কারণ ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গেও আওয়ামী লীগ সরকারের একটি সুসম্পর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যে ইন্ডিয়া জোটের প্রধান দল কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছে।
অনেকে মনে করেন যে, এখন ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী মনোভাবের কারণে সীমান্তে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য রাখা হচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশের মধ্যে একটা ভারতবিরোধী মনোভাব তৈরি হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যদি নরেন্দ্র মোদি তাহলে এই অবস্থানের পরিবর্তন হবে। দুই দেশের সম্পর্ক আরও বিকশিত হবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভারত লোকসভা নির্বাচন মল্লিকার্জুন খাড়গে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।