নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫৯ পিএম, ০১ অক্টোবর, ২০২০
২১ বছর পেরিয়ে ২২ শে পা রাখলো বাংলাদেশর প্রথম প্রজন্মের টেলিভিশন, চ্যানেল চ্যানেল আই। এই সময় নাটক, রিয়েলিটি শো, চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার ইত্যাদি নানা বিষয়ে আলোচিত। কিন্তু চ্যানেল আই গত ২১ বছরে দেশের সংস্কৃতি, শিল্প কিংবা মুক্ত বুদ্ধির চর্চার জন্য কি করেছে, তার নির্মোহ বিশ্লেষণ জরুরী। এই চ্যানেলকে ঘিরে চ্যানেল আইয়ের নানা মুখী ব্যবসার ডালপালা মেলেছে।
মন্ত্রী, এমপি সহ রাষ্ট্রের প্রভাবশালীদের বশীকরণ মন্ত্রের বীণ বাজিয়েছে চ্যনেল আই। ফলে অনৈতিক সুবিধা যেমন নিয়েছে দেদারছে, তেমনি নিজেরাও পার পেয়েছেন নানা অনিয়ম করেও। শিল্প এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সৃষ্টি নয়, বরং বিনাশই যেন ২১ বছরের চ্যানেলটির সব থেকে বড় অর্জন। নানা ভাবে এ দেশের নাটক, সিনেমা এবং সংস্কৃতিকে ধ্বংসের অভিযোগে অভিযুক্ত এই চ্যানেলটি।
প্রয়াত কথা শিল্পী হুমায়ূন আহমেদ যেমন খাবার স্যালাইনের ফর্মুলা বাতলে দিয়েছিলেন সহজ ভাষায়- এক গ্লাস পানি, এক চিমটি লবন আর এক মুঠো গুড় গুটিয়ে খাবার স্যালাইন তৈরি হয়। তেমনি ফরিদুর রেজা সাগরের নিজস্ব লোকদের কিছু গান, অনুষ্ঠান, শাইখ সিরাজের একক প্রচারণা, মুকিত বাবুর প্রকৃতি ভাবনা আর কেকা ফেরদৌসীর রান্নার কিছু আয়োজন নিয়েই চ্যানেল আই।
‘হৃদয় বাংলাদেশ’ ধারণ করে এই চ্যানেলটি প্রথম বিদেশি সিরিয়াল বাংলাদেশে আমদানি শুরু করে। বাংলাদেশে এর মাধ্যমেই ‘নাটক’ ধ্বংসের সূচনা হয়। নাটক বানানোর বাজেট কমাতে কমাতে এই প্রতিষ্ঠানটি নাটকের নির্মাণ ব্যয় ‘জিরো’ ফিগারে নামিয়ে এনেছে। প্রডাকশন বয়, লাইটম্যানকে নাটকের পরিচালক বানিয়ে এই চ্যানেলটি, সৃষ্টিশীল এবং ভালো নাটক নির্মাণকে অসম্ভব বানিয়ে দিয়েছে।
সিনেমার বাজেটকেও কমাতে কমাতে এরা নাটক এবং সিনেমার পার্থক্য মুছে দিয়েছে। সিনেমাকে টিভি প্রিমিয়ার এর নামে নাটকের স্তরে নামিয়ে এনেছে এই চ্যানেলটি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের দুর্ভাগ্যের জন্য এই চ্যানেল কতটা অবদান রেখেছে, তা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা হতে পারে। শিল্প ও সংস্কৃতির এই সর্বনাশের পাশাপাশি, আরো সর্বনাশের গল্প অন্ধকারেই রয়ে গেছে।
নৃত্য শিল্পী ইভান আদম পাচারের অভিযোগে কারাগারে। আর শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা ফারুককে বিদেশে নেয়ার অভিযোগ থেকে কি নিখুত ভাবে পার পেয়ে যায়, এই চ্যানেলটি। ফারজানা ব্রাউনিয়া কার পাপে চ্যানেল আই ছাড়েন, সে গল্পেরও টুটি চিপে ধরা হয়। সংবাদ পাঠিকারা কেন, কোন দুঃখে কিংবা আতঙ্কে চ্যানেল ছেড়ে হাফ ছেড়ে বাঁচেন সে গল্পেও আগ্রহ নেই কারো। জন্মদিন আর জানাজা করে চ্যানেলটি গৃহপালিত সংস্কৃতি কর্মীদের স্বঘোষিত অভিভাবক হয়ে গেছে। আর এই বিনাশের খেলায় চলচ্চিত্র পুরষ্কার, একুশে পদক আর স্বাধীনতা পদকেও বিতর্কিত করে ছেড়েছে চ্যানেল আই।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।