নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ১৩ অগাস্ট, ২০১৭
১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ (দায়মুক্তি) জারি করা হয়। খন্দকার মোশতাক তখন রাষ্ট্রপতি। অধ্যাদেশটির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ বন্ধ করে খুনিদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়।
ইনডেমনিটি অধ্যাদেশে বলা হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বলবৎ আইনের পরিপন্থী যা কিছু ঘটুক না কেন, এ ব্যাপারে সুপ্রিমকোর্টসহ কোনো আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না। আরও বলা হয়, রাষ্ট্রপতি উল্লিখিত ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে যাদের প্রত্যয়ন করবেন তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হলো। অর্থাৎ তাদের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না।১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় সংসদে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করা হয়।
মোশতাক দায়মুক্তি দিয়ে প্রথম পুরস্কৃত করেন খুনিদের। এরপর জিয়া ও এরশাদ দুজনেই খুনিদের পুরস্কৃত করেছেন। সরকারি দায়িত্ব দিয়ে বিদেশে পাঠিয়েছেন, রাজনীতিতে সুযোগ করে দিয়েছেন। এমনকি বঙ্গবন্ধুর খুনিরা সংসদ সদস্যও হয়েছেন।
১৯৭৬ সালের ৮ জুন রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর ১২ জন খুনিকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেন। এর মাধ্যমে জিয়া খুনি চক্রকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়ে নিজেকে নিরাপদ করেন। তাঁর আশঙ্কা ছিল, খুনিরা একসঙ্গে দেশে থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে পারে।
খুনিদের মধ্যে লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিমকে চীনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব করা হয়। লে. কর্নেল আজিজ পাশাকে আর্জেন্টিনায় প্রথম সচিব করা হয়। মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদকে আলজেরিয়ায় প্রথম সচিব, মেজর বজলুল হুদাকে পাকিস্তানে দ্বিতীয় সচিব, মেজর শাহরিয়ার রশিদকে ইন্দোনেশিয়ায় দ্বিতীয় সচিব, মেজর রাশেদ চৌধুরীকে সৌদি আরবে দ্বিতীয় সচিব, মেজর নূর চৌধুরীকে ইরানে দ্বিতীয় সচিব, মেজর শরিফুল হোসেনকে কুয়েতে দ্বিতীয় সচিব, কর্নেল কিসমত হাশেমকে আবুধাবিতে তৃতীয় সচিব, লে. খায়রুজ্জামানকে মিসরে তৃতীয় সচিব, লে. নাজমুল হোসেনকে কানাডায় তৃতীয় সচিব, লে. আবদুল মাজেদকে সেনেগালে তৃতীয় সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
জিয়ার পরে এরশাদ ক্ষমতায় এসে একই ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। খুনি লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিমকে হংকংয়ে বাংলাদেশ মিশনের ভারপ্রাপ্ত মিশন প্রধান করেন এরশাদ। পরবর্তীতে ডালিমকে একই পদে পোল্যান্ডে নিয়োগ দিয়েছিলেন এরশাদ। কিন্তু খুনি ডালিমকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায় তৎকালীন পোল্যান্ড সরকার। এরপর ডালিমকে কেনিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার করা হয়।
এছাড়াও খুনিদের মধ্যে আজিজ পাশাকে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও রোমে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়। একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ সৌদি আরবের মিশন উপ-প্রধান হিসাবে নিয়োগ পায়। নূর চৌধুরীকে আলজেরিয়ায় কাউন্সিলর হিসাবে নিয়োগ দেন এরশাদ। রাশেদ চৌধুরীকে করা হয়েছিল টোকিওর বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর। শরিফুল হোসেনকে ওমানে বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স নিযুক্ত করা হয়।
জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই বঙ্গবন্ধুর খুনিরা পুনর্বাসিত হয়েছিল। পরবর্তীতে এরশাদ ও খালেদা জিয়ার হাত ধরে রাজনীতিতে নামে খুনিরা। শাহরিয়ার রশীদ ও বজলুল হুদা রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন। ১৯৮৭ সালে হত্যাকাণ্ডের অন্যতম দুই হোতা ফারুক রহমান ও আব্দুর রশিদ গঠন করেন ফ্রিডম পার্টি। ১৯৮৮ সালে ফ্রিডম পার্টির হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন বজলুল হুদা। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির একতরফা নির্বাচনে জিতে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন খুনি লে.কর্নেল আব্দুর রশীদ।
বাংলা ইনসাইডার/এফআইএস/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।