নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ২২ অক্টোবর, ২০২০
অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের টালমাটাল বিএনপি। বর্তমান নেতৃত্বে ফুঁসে উঠছে বিএনপির তৃণমুলের নেতাকর্মীরা। তাদের প্রধান দাবী হচ্ছে যে, দলের নেতৃত্ব পরিবর্তন করতে হবে। যোগ্য এবং কর্মক্ষম নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে হতে হবে। লন্ডনে পলাতক বিএনপির সিনিয়র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া এখন সারাদেশে তৃণমূলের সঙ্গে স্কাইপে যুক্ত হয়ে বৈঠক করছেন। প্রতিদিনই কোন না কোন জেলা বিভাগীয় শহরে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন। এসব বৈঠকের ব্যাপ্তি কোন কোন দিন ৪ থেকে ৫ ঘন্টা পর্যন্ত হচ্ছে । আর বৈঠক করতে গিয়েই নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রসঙ্গটি এসেছে ।
গতকাল তারেক জিয়া বৈঠক করেছেন রংপুর বিভাগীয় শহরের তৃণমূলের সঙ্গে। সেই বৈঠকেও বর্তমানে দলের মহাসচিব এবং স্থায়ী কমিটিতে পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছে যে, স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য অসুস্থ, বয়স ভাড়ে ন্যুয হয়ে আছেন, তারা দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারছে না। এরকম পরিস্থিতিতে এই স্থায়ী কমিটি অযোগ্য এবং দায়িত্ব অক্ষম। দলের মহাসচিবের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেছে তারা। আর সমস্ত অভিযোগগুলোর জবাবে তারেক জিয়া বলেছেন যে, তিনি জানেন নেতৃত্বের ব্যর্থতা আছে এবং নেতৃত্বে দুর্বলতা আছে। কিন্তু তিনি দলের গঠনতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুসরণ করে নেতৃত্বে পরিবর্তন করতে চান । তারেক জিয়া রংপুরের তৃণমূল নেতৃবৃন্দের কে বলেছেন যে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে মার্চে তারা কাউন্সিল করতে চায় এবং মার্চে যদি কোনো কারণে কাউন্সিল না হয় তাহলে মে মাসের মধ্যে অবশ্যই যেন কাউন্সিল হয় তা নিশ্চিত করতে চান তারেক জিয়া। এই কাউন্সিলের মাধ্যমে তরুণ এবং কর্মক্ষম নেতেৃত্ব আনতে চান বলে আশ্বস্ত করেছেন। বিএনপির তৃণমূল নেতৃবৃন্দ বলছেন, দলের নেতৃত্বের পরিবর্তন ছাড়া কোন আন্দোলন সংগ্রাম সম্ভব নয়, পাশাপাশি নেতৃত্বে পরিবর্তন না হলে সংগঠনকেও ঢেলে সাজানো এবং সংগঠনকে গুছিয়ে তোলা সম্ভব নয়।
সাম্প্রতিক সময়ে সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে তোলপাড় চলছে বিএনপিতে। দলের একাধিক নেতা বর্তমানে নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন এবং যে প্রক্রিয়ায় বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়েছেন তার সমালোচনা করেছেন। অন্যদিকে তৃণমূল নেতৃবৃন্দ বিএনপির কোন আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারছে না কেন তা নিয়ে উষ্ণ প্রকাশ করেছেন। বিএনপির তৃণমুল মনে করেন, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ইস্যু থাকলেও সরকারকে খুশি করার জন্য এ সমস্ত ইস্যুতে কোন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করছে না । তারা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এ সমস্ত বিষয় নিয়ে আন্দোলন করতে উৎসহ বোধ করছেন না। এই অবস্থায় বিএনপি`র মধ্যে হতাশা বাড়ছে বলেও তৃণমূলের নেতৃবৃন্দ মনে করছেন।
উল্লেখ্য যে, তারেক জিয়াও তাদের সঙ্গে একমত এবং তিনি দলের নেতৃত্ব পরিবর্তেনের সঙ্গে একমত হয়েছেন বলেও জানিয়েছে তৃণমূলের একাধিক নেতা।
তারা বলেছে যে, দলে পরিবর্তন করা হবে তবে তারেক জিয়া বিএনপিকে একটি গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে চান এবং সেজন্য তিনি হুটহাট করে নেতৃত্ব পরিবর্তন করতে চান না । তবে বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, নেতৃত্ব পরিবর্তনে একটা গঠনতান্ত্রিক সমস্যা রয়েছে কারণ বর্তমান বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তিনি রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় এবং দলীয় কোন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত আছেন। আবার বেগম খালেদা জিয়া কারাগার থেকে বের হবার পর সমস্ত ক্ষমতা দলের চেয়ারপারসনের কাছেই। যেদিন থেকে বেগম খালেদা জিয়া বেরিয়েছেন সেদিন তারেক জিয়া আর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নেই। এরকম বাস্তবতায় একমাত্র দলের চেয়ারম্যান ছাড়া কেউই মহাসচিব পরিবর্তন করতে পারে না। সে ক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়া রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন না এবং কোনো রাজনৈতিক বিষয় মাথা ঘামাচ্ছে না, সেজন্য দলের মহাসচিব পরিবর্তন এই প্রক্রিয়ায় এখন সম্ভব হচ্ছে না। কারণ দলের ওপর তারেক জিয়ার একচ্ছত্র কর্তৃত্ব থাকলেও মহাসচিব পরিবর্তনের গছনতান্ত্রিক ক্ষমতা তার নেই । আর এ কারণেই তারেক কাউন্সিলের মধ্যে যাচ্ছেন এবং বিএনপির মধ্যে এটা নিয়ে মোটামুটি একটি ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, দলে অবিলম্বে কাউন্সিল করা উচিত, এবং নতুন নেতৃত্ব তৈরি করা উচিত। আগামী মার্চেই কাউন্সিল ধরেই বিএনপি এগোতে চাইছে বলে জানা গেছে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।